কোটি ভোটার এনআইডি পাবে কবে?

খুব উৎসাহ নিয়ে ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর ভোটার হয়েছিলেন জামালপুরের তরুণ সুলতান ফাইজুল। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে না পাওয়ায় মোবাইল ফোন নিবন্ধনসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে আছে তার।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2016, 06:10 AM
Updated : 9 Feb 2016, 03:16 PM

কেবল ফাইজুল নয়, তার মতো প্রায় এক কোটি নাগরিককে দুই বছর ধরে সরকারি নানা কাজে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকার কারণে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রায় ১০ কোটি ভোটারের মধ্যে মোটামুটি ৯ কোটির হাতে লেমিনেটেড এনআইডি রয়েছে। বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা পেতে এই জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে।

কিন্তু সরকার নাগরিকদের হাতে ‘উন্নতমানের স্মার্টকার্ড’ দেওয়ার প্রকল্প নেওয়ায় বাকি এক কোটি ভোটারের হাতে পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়টি আটকে আছে।  

কবে নাগাদ তারা জাতীয় পরিচয়পত্র পাবেন, নির্বাচন কমিশনও তা বলতে পারছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইংয়ের পরিচালক সৈয়দ মুহাম্মদ মুসা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আগে সাধারণ লেমিনেটেড কার্ড সরবরাহ করেছি, এখনো যারা কার্ড পাননি তাদের স্মার্টকার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। কবে নাগাদ তা বিতরণ শুরু হবে কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত হবে।”

জামালপুরের ফাইজুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্থানীয়ভাবে আমরা এনআইডি নেওয়ার জন্যে যোগাযোগ করেছি; তারা সময় জানাতে পারছে না। বলা হচ্ছে- স্মার্টকার্ড দেবে। কবে দেবে এই কার্ড?  এক বছর ধরেই তো এ কথা শুনছি।”

অনলাইনে সাময়িক পরিচয়পত্র বা তথ্য বিবরণী দেওয়ার সুযোগের কথা নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হলেও তা কার্যকর নয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী একাধিক নাগরিক।

এনআইডি উইংয়ের পরিচালক মুসা বলেন, “আমাদের তো প্রায় ১০ কোটি ভোটার হয়েছে; এর মধ্যে কোটি খানেকের কাছে কার্ড নেই। একটু অসুবিধা তো হবে।”

নাগরিকদের ‘স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র’ দিতে ২০১৪ সালে ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে ইসি। বছরের বিভিন্ন সময়ে ভোটার হওয়া নাগরিকদের মধ্যে তা বিতরণের পরিকল্পনার কথা সে সময় জানানো হয়।

প্রকল্পের মেয়াদের দুই তৃতীয়াংশ সময় পরও স্মার্ট এনআইডি বিতরণ শুরু করতে না পেরে গত বছরের শেষ ভাগে এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও দেড় বছর। ইসি এখন বলছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে তারা নাগরিকদের স্মার্ট কার্ড দিতে চায়।

এ প্রসঙ্গে সিইসি কাজী রকিউদ্দীন আহমদ বলেন, “এটা বিশাল কর্মযজ্ঞ। তবে কখন বিতরণ শুরু হবে নির্দিষ্ট তারিখ দিতে পারব না।”

গত ২৬ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সংসদ কার্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আনিসুল হক জানান, স্মার্ট কার্ড প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা।  

ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব প্রধান সাইফুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক কার্যপত্রে দেখা যায়, ইসির ‘আইডিন্টিফকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ)’ প্রকল্পের আওতায় স্মার্টকার্ড তৈরির কাজে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৪৪৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা; যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৩২.৬১ শতাংশ।

প্রকল্প বাস্তবায়নের এই মন্থর গতির বিষয়ে চলতি মাসে ইসির এক পর্যালোচনা বৈঠকে প্রকল্প পরিচালক বলেন, “প্রকল্পের প্রধান অঙ্গ স্মার্টকার্ড সরবরাহে কিছু সমস্যা হয়েছিল; বর্তমানে তা সমাধান হয়ে গেছে। স্মার্টকার্ড‌ সরবরাহের বিপরীতে প্রায় ২ কোটি ডলার বা ১৮০ কোটি টাকার একটি কিস্তি পরিশোধ করা হবে।”