মীর কাসেমের আপিল শুনানি শুরু

যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর আপিল শুনানি শুরু হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2016, 04:15 AM
Updated : 9 Feb 2016, 11:44 AM

মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারকের বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়।

বেঞ্চের অপর চার সদস্য হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং নবনিযুক্ত বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান। 

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলায় অন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সপ্তম মামলা এটি, যার ওপর সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি শুরু হলো।

প্রথম দিন মীর কাসেমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এস এম শাহ্জাহান। আসামিপক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির আহমেদ।

সকাল সোয়া ৯টা থেকে মাঝে আধা ঘণ্টা বিরতি দিয়ে সোয়া ১টা পর্যন্ত শুনানি চলে। প্রথম দিন আসামিপক্ষ পেপারবুক থেকে উপস্থাপন করে। 

এস এম শাহ্জাহান পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে দশটি অভিযোগে মীর কাসেম আলীর দণ্ড হয়েছে পেপারবুক থেকে সেগুলো পড়েছি। পেপারবুক থেকে রাষ্ট্রপক্ষের ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনের জবানবন্দি ও জেরাও পড়েছি।”

২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৪টি অভিযোগের মধ্যে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদসহ আটজনকে হত্যায় সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাসেমের ফাঁসির রায় আসে।

ওই বছর ৩০ নভেম্বর আপিল করেন কাসেম। দেড়শ পৃষ্ঠার মূল আবেদন ও এক হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠার নথিপত্রসহ করা আপিলে মীর কাসেম সাজা বাতিল চেয়ে খালাস চান।

মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডার হিসাবে মীর কাসেম চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত হন।

পঁচাত্তরে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমান জামায়াতকে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসংঘ নাম বদলে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে বাংলাদেশে রাজনীতি শুরু করলে মীর কাসেম তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন।

এরপর রাজনৈতিক ও আর্থিক ক্ষেত্রে অসাধারণ ধূর্ততার স্বাক্ষর রেখে অত্যন্ত দ্রুততায় নিজের ও দলের উন্নতি ঘটান কাসেম, পরিণত হন জামায়াতের আর্থিক মেরুদণ্ডে।

মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে চট্টগ্রামে যে ভবনটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের ধরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হতো, সেই ডালিম হোটেলকে ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে ‘ডেথ ফ্যাক্টরি’।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেপ্তার করা হয় জামায়াতের এই কেন্দ্রীয় নেতাকে। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তার যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়।