প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি শামসুদ্দিন চৌধুরীর

প্রধান বিচারপতি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ নিয়ে কাজ করছেন মন্তব্য করে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2016, 11:07 AM
Updated : 9 Feb 2016, 08:45 AM

অবসরে যাওয়ার পর লেখা রায় ও আদেশ সোমবার বিকালে আপিল বিভাগে জমা দেওয়ার আগে সুপ্রিম কোর্টের মাজার গেইটের বাইরে সাংবাদিকদের সামনে ওই মন্তব্য করেন তিনি। 

বিচারপতি শামসুদ্দিন বলেন, “অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা রায় লিখতে পারবে না… এই কথা বহু আগে খালেদা জিয়া বলেছিলেন। উনি খালেদা জিয়ার মুখপাত্র হয়ে বিএনপির এজেন্ডা চরিতার্থ করার জন্য এটা বলেছেন। উনার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।”

আগের দিন তিনি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ‘সংবিধান, আইন ও প্রথাবিরোধী’ আচরণের অভিযোগ আনেন।

এরপর সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, শামসুদ্দিন চৌধুরী আর গণমাধ্যমে কথা না বলে অনিষ্পন্ন সব রায়ের ফাইল ফেরত দেবেন বলে প্রত্যাশা করেছেন প্রধান বিচারপতি।

অবসরে যাওয়ার আগে বিচারপতি শামসুদ্দিন যে বেঞ্চে ছিলেন, সেই বেঞ্চে তার পরবর্তী জ্যেষ্ঠ বিচারপতির কাছে সোমবার নিজের লেখা রায় ও আদেশ পৌঁছে দেন তিনি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিচারপতি মো. ইমান আলী আমার লেখা ৬৫টি রায় ও আদেশ এবং এ সংক্রান্ত নথিপত্র গ্রহণ করেছেন। এরপর এসব রায়-আদেশ পরবর্তী জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিয়ার কাছে যাবে। প্রক্রিয়া অনুসারে এরপর রায় ও আদেশ চূড়ান্ত হয়ে তার সই, পরবর্তী বিচারপতির সই শেষে আমার কাছে চূড়ান্ত সইয়ের জন্য আসবে।”

নথি জমা দেওয়ার আগে সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশ পথেই বিচারপতি শামসুদ্দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানে তিনি প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ‘সরকারবিরোধী’ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনেন। 

“উনি বলেছেন… সরকার নাকি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে... এসব মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছেন মানুষের কাছে সরকারের জনপ্রিয়তা নষ্ট করার জন্য, মানুষের কাছে এই সরকারের ব্যাপারে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য। আমি মনে করি তার পদত্যাগ করা উচিৎ।”

গতবছর ১ অক্টোবর আপিল বিভাগ থেকে অবসরে যাওয়া এই বিচারক এর আগেও বিভিন্ন সময়ে প্রধানবিচারপতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন, যা গণমাধ্যমে আলোচনায় এসেছে। 

আপিল বিভাগে থাকা অবস্থাতেই গতবছর সেপ্টেম্বরে প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে রাষ্ট্রপতির বরাবরে একটি চিঠি পাঠান বিচারপতি শামসুদ্দিন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, রায় লেখা শেষ না করায় তার পেনশন আটকে দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি।

যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের রায়ের আগে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আরেক বিচারকের কথোপকথনের একটি অডিও টেপ প্রকাশ হয় এবং এ বিষয়ে জনকণ্ঠে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। 

ওই অডিও টেপের অপর কণ্ঠটি বিচারপতি শামসুদ্দিনের বলে সে সময় গণমাধ্যমে খবর আসে। আদালতের শুনানিতে জনকণ্ঠের আইনজীবী অডিও রেকর্ডের শ্রুতিলিখনের অংশবিশেষ তুলে ধরেন, যাতে দুই বিচারকের মতপার্থক্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

সাকা চৌধুরীর রায়ের সময়ের সেই বিতর্কের প্রসঙ্গ টেনে সোমবারও প্রধান বিচারপতির সমালোচনায় বিভিন্ন মন্তব্য করেন শামসুদ্দিন চৌধুরী।

প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তিতে গত ১৭ জানুয়ারি এক বাণীতে বিচারপতি এস কে সিনহা অবসরে যাওয়ার পর বিচারকদের রায় লেখাকে ‘সংবিধান পরিপন্থি’ বললে সাম্প্রতিক আলোচনার সূত্রপাত হয়। 

তার ওই বক্তব্যে জোর সমর্থন দিয়ে বিএনপি নেতারা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক বাতিলের রায় এর মধ্য দিয়ে ‘অবৈধ’ প্রমাণিত হয়েছে।

অন্যদিকে প্রধান বিচারপতির ওই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, অবসরের পর রায় লেখার দীর্ঘদিনের এই চর্চায় তারা কোনো সমস্যা দেখেন না।

আর বিচার বিভাগের ‘কোন্দল’ প্রকাশ্যে এনে উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে দায়ী করে তাকে কথা ‘কম’ বলার পরামর্শ দেন ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

এরপর রোববার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে চিঠি লিখে তার অবসরে যাওয়ার পর লেখা রায় ও আদেশ গ্রহণ করতে বলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন। পরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ওই চিঠির বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন তিনি।

প্রধান বিচারপতিকে তিনি লেখেন, “আমি ইতিপূর্বে আপনাকে অবহিত করেছি যে, আপনার এরূপ আচরণ সংবিধান, আইন ও প্রথাবিরোধী ও একই সাথে ন্যায়বিচারের পরিপন্থি।”

এর কয়েক ঘণ্টা পর সুপ্রিম কোর্টের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “প্রধান বিচারপতি আশা করেন যে সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মিডিয়াতে মামলার রায় ও আদেশ সংক্রান্ত কোনোরূপ বক্তব্য না দিয়ে তার নিকট যতগুলো অনিষ্পত্তিকৃত রায়ের মামলার ফাইল রয়েছে, তা সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিসে অতি সত্বর ফেরত প্রদান করবেন, যাতে বিচারপ্রার্থীদের আর ভোগান্তি না হয়।”

দিনভর নাটকীয়তার পর রোববার সন্ধ্যায় বিচারপতি শামসুদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার লেখা রায় ও আদেশ গ্রহণ করতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ‘রাজি হয়েছেন’