আপিল বিভাগে শপথ নিলেন নতুন ৩ বিচারক

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে শপথ নিলেন নতুন তিন বিচারপতি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2016, 04:33 AM
Updated : 8 Feb 2016, 01:55 PM

হাই কোর্টের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার, বিচারপতি মো. নিজামুল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান শপথের পর সোমবার থেকেই আপিল বেঞ্চে বসতে শুরু করেছেন।

নতুন তিনজনকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে নয় জনে। প্রধান বিচারপতি ইতোমধ্যে আপিল বিভাগের দুটি বেঞ্চও পুনর্গঠন করে দিয়েছেন।

সকাল ১০টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা একে একে তিন বিচারককে শপথ বাক্য পাঠ করান।

রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলামের সঞ্চালনায় সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারকরা এ অনুষ্ঠানে ছিলেন উপস্থিত।

নতুন বিচারকরা শপথ নেওয়ার পর প্রথা অনুসারে তাদের সংবর্ধনা জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন।

অবশ্য ‘জ্যেষ্ঠতা ভঙ্গ করে’ আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগ হচ্ছে মন্তব্য করে বিচারক নিয়োগের নীতিমালা করারও দাবি জানান তিনি।

বেঞ্চ পুনর্গঠন

হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) মো. সাব্বির ফয়েজ জানান, শপথ অনুষ্ঠানের পরপরই প্রধান বিচারপতি নতুনদের যুক্ত করে আপিল বিভাগের দুটি বেঞ্চ পুনর্গঠন করে দেন।  

প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে সদস্য হিসেবে রয়েছেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।

আর বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের বাকি তিন সদস্য হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি মো. ইমান আলী ও বিচারপতি মো. নিজামুল হক।

সংবর্ধনা

আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচার কক্ষে এ অনুষ্ঠানের শুরুতে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দারের কর্মময় জীবন তুলে ধরে তাকে অভিনন্দন জনান মাহবুবে আলম ও খন্দকার মাহবুব হোসেন।

বিচারপতি হোসেইন হায়দার এ সময়  বলেন, “বার ও বেঞ্চ একটি পাখির দুটি ডানার মত। একটি ছাড়া অপরটি চলতে পারে না। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আমাদের শ্রম তখনই সার্থক হবে, যখন বিচারক ও আইনজীবীদের যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”

যার যার অবস্থানে থেকে নিজের পেশায় নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে সমাজ ও দেশের উন্নয়নে ‘বেগ পেতে হবে না’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

নবাগত আইনজীবীদের উদ্দেশে এই বিচারক বলেন, শিক্ষা থাকলে শিক্ষার পাশাপাশি উপার্জনও আসে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে আইন পড়ে আসা মির্জা হোসেইন হায়দার ১৯৭৯ সালে নিম্ন আদালতে, ১৯৮১ সালে হাই কোর্টে এবং ১৯৯৯ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন।

২০০১ সালের ৩ জুলাই হাই কোর্টে অস্থায়ী বিচারক হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার দুই বছর পর তিনি স্থায়ী হন। আপিল বিভাগে আসার আগে হাই কোর্টের জ্যেষ্ঠতার ক্রমে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় অবস্থানে।

এরপর বিচারপতি নিজামুল হকের কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তাকে অভিনন্দন জনান অ্যাটর্নি জেনারেল।

বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতা খন্দকার মাহবুব এ সময় বলেন, “দীর্ঘ ধরে বলে আসছি, বিচারক নিয়োগে যদি নীতিমালা থাকলে আরও স্বত্বঃস্ফূর্ত ভাবে …। কিন্তু দুঃখের বিষয় ৩০ জনকে ডিঙিয়ে নিয়োগ আমরা কীভাবে নেব?”

বিচারপতি নিজামুল হক ও বিচারপতি বজলুর রহমান ২০০১ সালের ৩ জুলাই একইসঙ্গে হাই কোর্টে অস্থায়ী বিচারক হিসাবে নিয়োগ পেলেও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাদ পড়েন।

উচ্চ আদালতের আদেশে ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ নিজামুল হককে স্থায়ী বিচারক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর বজলুর রহমান একই বছরের ১০ মে স্থায়ী হন।

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটের তথ্য অনুযায়ী, বিচারপতি মো. নিজামুল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান আপিলে আসার আগে হাই কোর্ট বিভাগের বিচারকদের তালিকায় ৩০ ও ৩১তম ক্রমে ছিলেন।

‘ব্যক্তিগতভাবে’ বিচারপতি নিজামুল হকের ‘শুভকামনা’ করছেন জানিয়ে খন্দকার মাহবুব বলেন, “ক্ষোভ সরকারের প্রতি, আপনার প্রতি না।”

প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনি অনেক কিছু করেছেন, একটি নীতিমালা করে দেন। কেন নীতিমালা হবে না এ বিষয়ে স্যুয়োমটো করেন। সব কিছুর ঊর্ধ্বে নিয়োগ যেন হয়।”

এরপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। আর বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে দক্ষিণাঞ্চলের ছেলের পক্ষে আপিল বিভাগে আসা সম্ভব হতো না।”

পরে বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমানের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, উপমাহাদেশের প্রখ্যাত আইনজীবী সবিতা রঞ্জন পালের দুই জন জুনিয়র এখন আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে আসীন। একজন হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি, আরেকজন বিচারপতি বজলুর রহমান।

“আপনাকে তৎকালীন প্রধান বিচারপতির সুপারিশ স্বত্ত্বেও দুই বছর অস্থায়ী বিচারকের মেয়াদ অতিক্রান্ত হওয়ার পর স্থায়ী করা হয়নি। আপিল বিভাগের রায়ের পর ২০০৯ সালে বিচারপতি নিজামুল হককে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন যে অবিচার করা হয়েছিল, আজ আপিল বিভাগে নিয়োগের মধ্য দিয়ে তার পরিসমাপ্তি হলো, মূল সিনিয়রিটি রিস্টোর করা হলো,” বলেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম।

খন্দকার মাহবুব বলেন, “আপনি আপিল আসায় অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা চাই উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ স্বচ্ছ হোক, নীতিমালা হোক। … জ্যেষ্ঠতার চেয়ে স্বচ্ছতা প্রয়োজন। নীতিমালা থাকলে আনন্দের সঙ্গে মনটা পরিষ্কার করে অভিনন্দন জানাতে পারতাম।”

বিচারপতি বজলুর রহমানের প্রতি ‘বিশেষ দুর্বলতা’ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আপনি অকপটভাবে কথা বলেন। আমরা আশা করব, ন্যায় বিচারের স্বার্থে আপনার বলিষ্ঠ ভূমিকা থাকবে।”

সংবর্ধনার জবাবে বিচারপতি বজলুর রহমান বলেন, “সংবিধান অনুসারে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছি। শপথ, সংবিধান ও আইন অনুসারে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট ছিলাম ও সচেষ্ট থাকব।”

অন্যদের মধ্যে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, ব্যারিস্টার রফিক উল হক, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ ও ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান শেষে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আপিল বিভাগের এক নম্বর কক্ষে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে নয় বিচারপতিকে মামলা পরিচালনা করতে দেখা যায়।