বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে ‘অপহরণে’ নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর

চার মাস ধরে ছেলের সন্ধান না পাওয়া অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এক কাউন্সিলের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ তুলেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2016, 06:03 PM
Updated : 7 Feb 2016, 06:11 PM

রোববার ঢাকায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে সংবাদ সম্মেলনে ছেলে আসিফ ইমরানকে জীবিত অবস্থায় ফেরত পেতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপকের পদ থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া লুৎফর রহমান।

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রথম বর্ষের ছাত্র ইমরান পরিবারের সঙ্গে ঢাকার উত্তরায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তাদের বাড়ি বগুড়ায়।

লুৎফর দাবি করেছেন, তিনি অবসর নেওয়ার পর এককালীন যে অর্থ পাচ্ছেন, তা হাতিয়ে নিতেই তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। কারণ অপহরণের পর থেকে টেলিফোন করে কখনও ১০ লাখ, কখনও ২০ লাখ টাকা চাওয়া হচ্ছে।

তার অভিযোগ নারায়ণগঞ্জের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলমগীর ইসলামের বিরুদ্ধে। তিন মাস আগে নাম উল্লেখসহ মামলার পরও তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করছে না বলে অভিযোগ লুৎফরের।

এই অভিযোগের বিষয়ে আলমগীরের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

আলমগীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনেছেন জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, তিনিও কাউন্সিলরের দেখা পাচ্ছেন না।

উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা লুৎফর বলেন, তাদের বাসার কাছাকাছি এলাকায় আরেকটি বাসায় থাকা নারায়ণগঞ্জের আরেক তরুণ গোলাম মোস্তফা আদর কাউন্সিলর আলমগীরের চক্রে জড়িত। 

সংবাদ সম্মেলনে ইমরানের মা নাদিরা বেগম, বোন নাজিয়া তামান্না ও মামী মোরশেদা আক্তার সুইটি উপস্থিত ছিলেন।

লুৎফর গত বছরের মে মাসে অবসরে যাওয়ার পর ৪ সেপ্টেম্বর স্ত্রীকে নিয়ে হ্জ করতে সৌদি আরব যান। ইমরানের সঙ্গে বাসায় রেখে যান মেয়ে নাজিয়া ও এক গৃহকর্মীকে।

৭ অক্টোবর সকালে আদর নামে ওই তরুণ বেড়ানোর কথা বলে ইমরানকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যায় বলে জানান লুৎফর। এরপর থেকে ইমরানের আর কোনো সন্ধান নেই।

ভাইয়ের সন্ধানে বোন নাজিয়া ৯ অক্টোবর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। লুৎফর হজ থেকে ফেরার পর ১ নভেম্বর আদর, তার বাবা গোলাম মোহাম্মদ কালু, আদরের বন্ধু শাকিল ও কাউন্সিলর আলমগীরকে আসামি করে অপহরণ মামলা করেন।

মামলার আগেই আদর নারায়ণগঞ্জের পুলিশের সুপার বরাবর তদন্ত পূর্বক আইনগত বিচার পাওয়ার আবেদন করেন বলে লুৎফর জানান।

নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর আলমগীর ইসলাম

আদরের ওই আবেদন উদ্ধৃত করে ইমরানের বাবা বলেন, ৭ অক্টোবর বিকালে কাউন্সিলর আলমগীরের বাবুরাইল বউবাজার কার্যালয়ে গিয়েছিল তারা। সেখানে তাদের তিনজনকে অপহরণ করা হলেও আদর কৌশলে বেরিয়ে আসেন এবং শাকিলকে তার বাবা-মা ছাড়িয়ে নেন।

তবে লুৎফর বলেন, “আদর নিজেকে বাঁচানোর জন্য এই আবেদন করেছে। আদর আমার ছেলেকে অপহরণের অন্যতম হোতা।

“কাউন্সিলর, আদর, তার বন্ধু শাকিল ও আদরের বাবা একটি চক্র। তারা এভাবেই অপহরণ ও টাকা আদায় করে।”

লুৎফর জানান, মামলায় আদর, তার বাবা কালু ও বন্ধু শাকিলকে গ্রেপ্তারের পর তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে কাউন্সিলর আলমগীরের ভাতিজা রিয়াজুল ইসলাম প্রীতমকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

কিন্তু আলমগীর গ্রেপ্তার হননি। আর এর মধ্যে কালু ও প্রীতম জামিনে বেরিয়েও গেছেন বলে জানান ইমরানের বাবা।

আলমগীরের মাধ্যমে ছেলের সন্ধান জানতে মেয়র আইভীর কাছে ধরনা দিয়েছিলেন বলেও জানান লুৎফর।

এ বিষয়ে মেয়র আইভী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আলমগীরের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা হওয়ার বিষয়টি জানি। ঘটনাটি জানার পর আলমগীরের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।”

মেয়র হিসেবে এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার বিষয়ে আইন অনুযায়ী যা হওয়ার তাই হবে।  

“কোনো কাউন্সিলর একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলে তাকে বরখাস্ত করা যায়। সে সময় হলে, যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কাউন্সিলর আলমগীর ২০০৮ সালে চেক প্রতারণার একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।