অবসরের পর লেখা রায় ‘জমা দিচ্ছেন’ বিচারপতি শামসুদ্দিন

দিনভর নানা নাটকীয়তা শেষে অবসরের পর নিজের লেখা রায় জমা দিতে পারছেন বলে জানিয়েছেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2016, 03:24 PM
Updated : 8 Feb 2016, 01:54 PM

আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারক রোববার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার লেখা রায় ও আদেশ গ্রহণ করতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ‘রাজি হয়েছেন’।

বিচারপতি শামসুদ্দিন অবসর নেওয়ার আগে আপিল বিভাগের যে বেঞ্চে ছিলেন, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা সেই বেঞ্চের নেতৃত্বদানকারী বিচারক।

অবসরের পর বিচারকদের রায় লেখার বিরোধী প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নির্দেশনার পর বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা তার লেখা রায় গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন বলে সকালেই অভিযোগ করেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী।

অবসরের পর তার লেখা ১৫টির মতো রায় এবং আদেশগুলো নিতে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে চিঠি লেখার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। সেইসঙ্গে প্রধান বিচারপতির আচরণকে ‘সংবিধানপরিপন্থিও’ বলেন তিনি।

চিঠি পাঠানো এবং রায় না নেওয়ার অভিযোগ তুলে ধরে বিচারপতি শামসুদ্দিন সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আসে।

তাতে প্রধান বিচারপতি চার মাস আগে অবসরে যাওয়া বিচারপতিকে রায় নিয়ে গণমাধ্যমে কথা না বলার পরামর্শ দেন।  পাশাপাশি তার কাছে থাকা ‘অনিষ্পত্তিকৃত’ রায়ের মামলার ফাইলগুলো সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেলের অফিসে জমা দেবেন বলেও প্রত্যাশা করেন প্রধান বিচারপতি।    

এরপর সন্ধ্যায় বিচারপতি শামসুদ্দিন রায় জমা দিতে পারছেন জানিয়ে বলেন, “বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞার সাথে আগে মৌখিক কথা হয়েছিল, রায় ও আদেশ গ্রহণ করা নিয়ে, তখন বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন। তাই এগুলো জমা দেওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠতে পারেনি।”

বিচারপতি শামসুদ্দিনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, “প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করেন যে সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী তার কাছে লিখিত রায় কিংবা আদেশ গ্রহণ করার জন্য জমা দেননি।”

গত অক্টোবরে অবসরে যাওয়া শামসুদ্দিন সকালে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অবসরে যাওয়ার পর যেসব রায় ও আদেশ তিনি লিখেছেন, তা জমা দিতে চাইলেও প্রধান বিচারপতির ‘নির্দেশনার কারণে’ তা নেওয়া হয়নি।

“আমার প্রিজাইডিং জজ, মাননীয় বিচারপতি জনাব মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে আমার লেখা সমাপ্ত হওয়া রায় ও আদেশগুলো গ্রহণ করার অনুরোধ করলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করে বলেন যে, মাননীয় প্রধান বিচারপতির নির্দেশনা অনুসারে কোনো অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির লিখিত রায় ও আদেশ গ্রহণ করা যাচ্ছে না।”

বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী

বিচারপতি শামসুদ্দিনের বক্তব্য অনুযায়ী, অবসরের পর তার ১৫টির মতো রায় লেখার বাকি ছিল, সেই সঙ্গে ছিল ৭০টির মতো আদেশ। সবই লেখা ইতোমধ্যে শেষ করেছেন তিনি।

বিচারপতি এস কে সিনহা তার প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার বছর পূর্তিতে গত মাসে দেওয়া এক বাণীতে বিচারকদের অবসরের পর রায় লেখা ‘সংবিধান পরিপন্থি’ বলার পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়।

বিচারপতি শামসুদ্দিনকে কেন্দ্র করে তার ওই বক্তব্য ছিল ধরে নিয়ে আইনপ্রণেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বিচার বিভাগের ‘কোন্দল’ প্রকাশ্যে এনে উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য বিচারপতি এস কে সিনহার সমালোচনাও করেন।

আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় যুদ্ধাপরাধের মামলার আপিলের শুনানি নিয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিনের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির টেলি-কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ গত বছর প্রকাশ হওয়ার পর তা নিয়ে শুরু হয়েছিল আলোচনা।

এরপর অবসরে যাওয়ার আগে গত সেপ্টেম্বরে বিচারপতি শামসুদ্দিন তার পেনশন আটকে দেওয়ার অভিযোগ তুলে প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে একটি চিঠি দিলে তা নিয়েও ব্যাপক আলোচনা ওঠে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে আলোচিত বেশ কয়েকটি মামলার রায় প্রদানকারী বিচারক শামসুদ্দিন চৌধুরী ২০০১ সালের জুলাই মাসে হাই কোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন।

কিন্তু দুই বছরের মেয়াদ শেষে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়নি তাকে। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের পর ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ তিনি হাই কোর্টে স্থায়ী হন।

২০১৩ সালের ৩০ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী। গত বছর ১ অক্টোবর অবসরে যান তিনি।