অবসরের পর লেখা রায় নিতে বিচারপতি শামসুদ্দিনের চিঠি

অবসরে যাওয়ার পর লেখা রায় ও আদেশ গ্রহণ করতে প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী, যিনি চার মাস আগে তার চাকরির মেয়াদ শেষ করেছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2016, 07:10 AM
Updated : 7 Feb 2016, 09:27 AM

সর্বোচ্চ আদালতের সাবেক এই বিচারক নিজেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে চিঠি লেখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রোববার দুপুরে টেলিফোনে তিনি বলেন, “আমার সব স্টাফ উইথড্র করা হয়েছে। তাই আমি আমার একজন লোকের মাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি চিঠি পাঠিয়েছিলাম। সেদিন দেরি হয়ে যাওয়ায় উনি মনে হয় ওটা পাননি। তাই আজ সকালে আবার আমি চিঠি পাঠিয়েছি।”

অবসরের পর রায় লেখা নিয়ে গত ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার এক বক্তব্যের পর দেশে নানামুখী আলোচনা চলছে। তার মধ্যেই হাতে লেখা রায় নিতে প্রধান বিচারপতিকে এই চিঠি দিলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী।

প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিজের দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তিতে সেদিন এক বাণীতে বিচারপতি সিনহা বলেন, অবসরে যাওয়ার পর বিচারকদের রায় লেখা ‘সংবিধান পরিপন্থি’

তার যুক্তি, বিচারপতিরা অবসরে যাওয়ার পর তাদের শপথের কার্যকারিতা থাকে না বলে তারা রায় লেখার অধিকারও হারান। ওই ‘ভুল’ আর করতে দেবেন না বলেও পরে আরেক অনুষ্ঠানে জানান প্রধান বিচারপতি।

তার ওই বক্তব্যে বিএনপি নেতাদের পাশাপাশি তাদের সমর্থক আইনজীবীরা জোর সমর্থন দিয়ে বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক বাতিলের রায়ও ‘অবৈধ’ প্রমাণিত হয়েছে।

অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মনে করেন, ন্যায়বিচার পাওয়ার উপর গুরুত্ব দিতে গিয়ে ওই বক্তব্য এসেছে প্রধান বিচারপতির  কাছ থেকে। তবে ঘোষিত রায় পরে লেখা বেআইনি মনে করছেন না তিনি।

বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদও বলেছেন, বিচারপতিদের অবসরের পর রায় লেখার দীর্ঘদিনের এই চর্চায় কোনো সমস্যা  তারা দেখেন না।

এই আলোচনার মধ্যেই গত ২৯ জানুয়ারি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যাতে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও ছিলেন।

তবে ওই নৈশভোজের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় কিংবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি।

গত বছর ১ অক্টোবর অবসরে যাওয়ার সময় বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর ১৫টি রায় ও ৭০টি আদেশ লেখা বাকি ছিল। সেগুলো প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার পর তিনি বলেছেন, সহযোগিতার জন্য এখন কোনো কর্মী না থাকায় রায়গুলো হাতেই লিখতে হয়েছে।

অবসরের আগে বিচারপতি শামসুদ্দিন আপিল বিভাগের যে বেঞ্চে দায়িত্বরত ছিলেন, সেই বেঞ্চের ‘প্রিজাইডিং জাজ’ হিসেবে আছেন বিচারপতি এম ওয়াহাব মিয়া।

“ওয়াহাব মিয়ার মাধ্যমে ওই রায়গুলো গ্রহণ করতে বলেছি চিঠিতে,” বলেন শামসুদ্দিন চৌধুরী।