শনিবার বিকালে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে এই বইয়ের প্রকাশনা উৎসব হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক ছাত্র শাকিলের কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ আগেই। ‘খেরোখাতার পাতা থেকে’ নামে তার প্রথম কাব্য বেরিয়েছে গত বছর বইমেলায়।
দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মন খারাপের গাড়ি’তে শাকিলের ৯২টি কবিতা স্থান পেয়েছে। বইয়ের উৎসর্গে শাকিল লিখেছেন, ‘দগ্ধ সময়কে/যাকে ধরতে চেয়েছিলাম আমারই রক্তে-কষ্টে কলমে’।
তার কবিতায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিই মুখ্য হয়ে উঠেছে বলে সমালোচকদের মূল্যায়নে উঠে এসেছে।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বাংলার অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “আমার কাছে মনে হয়েছে দুই-একটি ব্যতিক্রম বাদে এই বইয়ের সব কবিতা তার (শাকিলের) ব্যক্তিগত অনুভূতির কবিতা। কবি নিজের সাথে কথা বলেছেন, তার প্রেম যেমন ব্যক্তিগত, তার প্রকৃতি তেমন ব্যক্তিগত, সে চারপাশে যা দেখছে এটাকে নিজের করে নিয়ে প্রকাশ করেছে।
“শাকিলের কবিতা কোনো পরিণতির দিকে যাচ্ছে বলা মুশকিল। তবে এতেই বোঝা যায় যে, অনুভূতির তীব্রতাই এখন পর্যন্ত প্রধান।”
এক বছরের মাথায় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ ‘আনন্দ ও ভাবনার খোরাক’ যোগাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আনিসুজ্জামান।
শাকিলের এই কাব্যগ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “এটা লিখে অনেক আনন্দ পেয়েছি। কিছু কিছু মূল্যায়ন করার চেষ্টাও করেছি।
“শাকিল পশ্চিমের ‘কনফেশনাল’ কবিদের মতো ‘কনফেশনাল পয়েট’। মানে হচ্ছে স্বীকারোক্তি করা। নিজের জীবনের, নিজের অভিজ্ঞতার, নিজের কৃতকর্মের অনেক কিছু প্রধানত নিজের কাছে, তারপরে সমাজ বা জগতের কাছে। সমাজ বা জগত তারা কথা শুনল কি না তা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। তিনি নিজের কাছে স্বীকার করেই যাচ্ছেন।”
মনজুরুল ইসলাম বলেন, “প্রত্যেকটি কবিতায় তার হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতি প্রকাশ পায়, কিসের যেন স্পর্শ রেখে যায়, যা জীবনের অভিজ্ঞতা, যেগুলো হয়তো আমাদের জানা হবে না অনেকের।
“এই কবি পৃথিবীর বিষাদ-দুঃখকে হৃদয়ে ধারণ করছেন। এই কবি নিজের স্বপ্নের সঙ্গে বাংলাদেশকে মিলিয়ে দিচ্ছেন। এই কবির চিন্তা বাংলাদেশের নিসর্গ দৃষ্টিপট।”
সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, “আমি যতটুকু পড়েছি, অভিভূত হয়েছি। শাকিল তার কাব্যে জাতীয়তা ও আন্তর্জাতিকতার মিলন ঘটিয়েছেন। তার কবিতায় উপমা, উৎপ্রেক্ষার প্রয়োগ ঘটেছে, যা কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় প্রকৃতি-প্রেমের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।”
কাব্যের ‘কোন এক রাতে’ কবিতার শেষ দুই চরণ পড়ে শোনান গোলাম সারওয়ার।
“কাল রাতে আকাশজুড়ে ছিল অমলিন পূর্ণিমা, চোখ জুড়ে প্রেম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র গোলাম সারওয়ার বলেন, “শাকিলের কবিতায় প্রেম, প্রেমের বন্ধন অপরিমেয়; শেষ পর্যন্ত প্রেম জয়যুক্ত হয়েছে।”
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, “শাকিলের কবিতায় রাজনৈতিক জীবনদর্শনের গভীরে এসেছে দেশ মাতৃকার মর্মকথা।”
প্রকাশনা অনু্ষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ফখরুল আলমও বক্তব্য রাখেন, যিনি বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ইংরেজি অনুবাদ করেছেন।
মাহবুবুল হক শাকিল তার বই প্রসঙ্গে বলেন, “কবিতার ব্যাকরণ, কবিতার ছন্দ নিয়ে আমি একান্তই অজ্ঞ। কবিতায় সেরকম হয়েছে বলে আমি নিজেও মনে করি না।
“বিভিন্ন সময়ের সুখ-দুঃখ-বিষন্নতাগুলো একটি কাগজে লিখেছিলাম। তারপর এক সময় মনে হল- এই ছিন্ন কাগজগুলো একসাথে করলে হয়তো আমি নিজেও দেখতে পারব আমার অতীতের সময়টা কেমন ছিল। যে সময় অতিক্রম করে এসেছি সেই সময়কে ধরার একটি চাহিদা থেকে একসাথে করার চেষ্টা করেছি।”
তিনি বলেন, “এটা আমার এই কথোপকথন। নিজের সঙ্গে নিজের কথা বলা, বিষণ্নতার সাথে বসবাস।”
‘মন খারাপের গাড়ি’র প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ। অন্বেষা প্রকাশন থেকে বেরোনো বইটির দাম ধরা হয়েছে ২০০টাকা।