লিখছি নিজের মতো: গুলতেকিন

নতুন পরিচয়ে এবার একুশে বইমেলায় হাজির হয়েছেন গুলতেকিন খান; মেলায় এসেছে তার কবিতার বই ‘আজো, কেউ হাঁটে অবিরাম’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2016, 03:41 PM
Updated : 6 Feb 2016, 03:07 AM

লেখক হুমায়ূন আহমেদের প্রাক্তন স্ত্রী গুলতেকিন ‘কৈশোর থেকে’ কবিতা লিখলেও মধ্যবয়স পেরিয়ে এসে প্রথম বই প্রকাশ।

শুক্রবার বিকালে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমি লিখে যাচ্ছি, সেটা আমার নিজের মতো।

“যদি এর দুয়েকটা লাইন, কোনো একটা কবিতা যদি কারও ভালো লাগে, তাতেই আমি খুবই খুশি হব। আমার এর বেশি কিছু চাওয়ার নাই।”

লেখালেখি ধরে রাখতে চওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়ে অনুষ্ঠানে সবার আশীর্বাদ চেয়েছেন গুলতেকিন। দাদা প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খানকে প্রথম বই উৎসর্গ করে লিখেছেন- ‘প্রথম পাঠক, পথ প্রদর্শক, আমার দাদা প্রিন্সিপ্যাল ইব্রাহীম খানকে’।

গুলতেকিন খানের বইয়ের প্রচ্ছদ।

গুলতেকিন খানের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অতিথিরা।

 

হুমায়ূনের অনেক বইয়ের প্রচ্ছদশিল্পী ধ্রুব এষের আঁকা প্রচ্ছদে গুলতেকিনের বইটির গায়ে লেখা দাম ১৩৫ টাকা।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক হুমায়ূন যখন উপন্যাস লিখে নাম কুড়াতে শুরু করেছেন, সেই সময় তার সঙ্গে গুলতেকিনের বিয়ে।

তাদের দুই মেয়ে নোভা আহমেদ ও শীলা আহমেদ এবং ছেলে নূহাশ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে। 

২০০৪ সালে বিচ্ছেদের পর হুমায়ূন বিয়ে করেন শাওনকে। তবে গুলতেকিনের সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রাখতে দেখা যায় এই লেখকের পরিবারের সদস্যদের।

হুমায়ূনের ছোট ভাই রম্যলেখক আহসান হাবিব এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানেও ছিলেন। তাদের আরেক ভাই অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারলেও তার পাঠানো লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান গুলতেকিনের বইয়ের প্রকাশক তারিকুল ইসলাম রনি।

জাফর ইকবাল তার লিখিত বক্তব্য শেষ করেছেন গুলতেকিনের ‘কী যায় আসে’ কবিতার শেষ চার লাইন দিয়ে।

বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে গুলতেকিন খান।

“ভুল করেছি বেশ করেছি

তোমার তাতে কী যায় আসে;

চরাও তুমি নিজের গরু

নিজের বোনা দুর্বাঘাসে।”

জাফর ইকবাল বলেন, “আমরা সবাই জানি গুলতেকিন খানের জীবন একটি অন্যরকম জীবন। আমি তাকে অনেকবার বলেছি, ভাবি তুমি তোমার নিজের জীবনকে নিয়েই লেখ। তোমার যে অভিজ্ঞতা পৃথিবীর খুব বেশি মানুষের তা হয়নি, মানুষের সেটা জানা প্রয়োজন।”

গুলতেকিনের কবিতাগুলো খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, “তাকে ব্যক্তিগতভাব খুব কাছ থেকে পারিবারিকভাবে চিনি বলে কি না- জানি না, তার অপূর্ব কবিতাগুলোর মাঝে দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনা যায়, কখনও কখনও নিজের মাঝে চাপা বেদনা অনুভব করেছি।

“আমি তাকে আর জীবনেও লিখতে বলব না। কারণ কবিতাগুলো পড়তে পড়তে মনে হয়েছে, তার জীবনের কথাগুলো তো এই কবিতার মধ্যেই আছে। কঠিন গদ্যে আলাদা করে লেখার কী প্রয়োজন?

ছয়টি বিভাগে সাজানো ‘আজো, কেউ হাঁটে অবিরাম’ বইটিতে স্থান পেয়েছে গুলতেকিনের ৩৫টি কবিতা।

বিভাগগুলো হলো- ‘ভরে যাক সবার খামার’, ‘রাত্রিকে বাঁধো আজ’, ‘বাজুক স্কুলের ঘণ্টা’, ‘আস্তিজুড়ে মাখিয়েছি কাদা ধুলো’, ‘ফ্রেমে বাঁধলেই শিল্প’ এবং ‘জানতো না, জানতো না’।

গুলতেকিনের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তার দুই মেয়ে নোভা আহমেদ ও শীলা আহমেদ।

বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে গুলতেকিন ও স্বজনরা।

 

বক্তব্য দিতে এসে গুলতেকিন জানালেন, মঞ্চে তিনি ‘সাবলীল নন’।

“আমি এক সময় গান গাইতাম। বাসায় ঠিকঠাক প্রস্তুতি নিয়ে মঞ্চে যাই। অনেক চেষ্টা করে মঞ্চে উঠে গানটা গাইলাম। গাওয়ার পর বন্ধুরা বলল, আবৃত্তিটা ভালো হয়েছে। এই হলো আমার গান গাওয়ার ইতিহাস”, হাসতে হাসতে বলেন তিনি।

বই ছাপানোর জন্য তাম্রলিপির প্রকাশক তারিকুল ইসলাম রনিকে ধন্যবাদ জানিয়ে গুলতেকিন বলেন, “রনিকে ধন্যবাদ এই রকম একটা রিস্ক নেওয়ার জন্য। রনি বলেছে, কবিতার বই মাত্র পাঁচশ’ ছাপানো হয়। আমি ভাবলাম, আমি এতদিন শুনে আসছি জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিকের প্রথম সংস্করণই পাঁচ হাজার কপি ছাপা হয়!

“আমিও শঙ্কিত সেটা নিয়ে। কবিতার বই পাঁচশ’ ছাপলেও নাকি বিক্রি হয় না!”

অবশ্য গুলতেকিনও তার কবিতাগুলো ‘বই প্রকাশের কথা মাথায় রেখে’ লেখেননি বলে জানালেন।  

“কারও যদি কোনো একটি কবিতার দুয়েকটি লাইনও ভালো লাগে তবেই আমি নিজেকে সার্থক মনে করব।”

‘আজো, কেউ হাঁটে অবিরাম’ এর ভূমিকায় লেখা হয়েছে- সামান্যকে খুব সাধারণ করে তোলা কবি গুলতেকিন খান-এর সহজাত প্রবৃত্তি। পার্সিয়ুস থেকে লালন আর কাহলিল জিবরান থেকে বব ডিলান পর্যন্ত তার স্বচ্ছন্দ যাতায়াত। এদেশের গরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর মতোই ছন্দময়তার দিকে তার ঝোঁকটির সঙ্গে অনেকেই একাত্ম হয়ে উঠবেন অনায়াসে।

গুলতেকিনের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে হুমায়ূন আহমেদের ভাই আহসান হাবিব।

বইমেলায় তাম্রলিপির স্টল

 

লেখক পরিচিতিতে লেখা বলা হয়েছে- পেশায় শিক্ষকতা, নেশায় শিল্প ও সাহিত্য আর প্রবণতায় সর্বজীবের প্রতি শ্রদ্ধা আর মানবতা। লেখালেখিতে হাতেখড়ি হয়েছিল সেই প্রথম কৈশোরেই; ছাপার অক্ষরে প্রথম লেখা দেখে দাদা এদেশের প্রবাদ-প্রতীম শিক্ষাগুরু প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খান, পৈতৃক ভিটে ধানমণ্ডির ‘দখিন হাওয়া’য় মাথায় হাত রেখে উপহার দিয়েছিলেন নগদ পাঁচ টাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের পাঠ নিয়ে ‘জীবনের প্রয়োজনে’ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা শুরু করলেও ততদিনে হারিয়েছেন লেখার খাতা, বলা হয়েছে পরিচিতিতে।

এক সময়ের ছাত্রী গুলতেকিন খানের প্রথম বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, একজন শিক্ষকের জন্য সবচেয়ে আনন্দের উপলক্ষ হলো, যখন তার ছাত্র বা ছাত্রী কোনো কিছু অর্জন করে। আর সেই অর্জনের মুহূর্তে উপস্থিত থাকতে পারাটা তারচেয়ে বেশি আনন্দের।

“আজ গুলতেকিনের বইয়ের ক্ষেত্রেও সেটা আমার হয়েছে। এ কারণে শত ব্যস্ততার মধ্যেও এখানে উপস্থিত হয়েছি।”

লেখালেখিতে গুলতেকিন যাতে ‘আরও ‍উন্নতি ঘটাতে পারে’ সেই আশীর্বাদও তিনি করেন।

সাংবাদিক গনি আদমের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, কথাশিল্পী আনিসুল হক, কবি গোলাম ফারুক খান ও কবি তুষার দাশ।