শুক্রবার গাজীপুরের কাশিমপুরে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে গিয়ে একথা বলেন তিনি।
কাশিমপুরের তেতুইবাড়িতে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি যদি কখনও অসুস্থ হয়ে পড়ি তাহলে আপনারা আমাকে বিদেশে নেবেন না। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ওঠাবেন না। আমি দেশের মাটিতেই চিকিৎসা নেব। এই হাসপাতালে চিকিৎসা নেব।”
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অনেকেই চিকিৎসার জন্য ভারত, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে যান। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও বিদেশে চিকিৎসা নিতে যেতে দেখা যায় নিয়মিত। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়।
বাংলাদেশে থেকে প্রতিবছর কতো মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যায়, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে এই সংখ্যা মাসে ১৫ হাজারের কম নয় বলে গণমাধ্যমের তথ্য।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীকে কেন চিকিৎসার জন্য বিদেশে ছুটতে হবে, দেশে কেন তাদের চিকিৎসা করার মতো উচ্চমানের হাসপাতাল তৈরি করা যাবে না- এই প্রশ্ন নিয়ে গত ডিসেম্বরে ঢাকায় মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিল সিটিজেন রাইটস মুভমেন্ট নামের একটি সংগঠন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং জানিয়েছে, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সকাল ৮টায় গণভবন থেকে বের হন শেখ হাসিনা। কাশিমপুরের তেতুইবাড়িতে হাসপাতালে পৌঁছানোর পর তাকে স্বাগত জানান হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জয়তুন সোলায়মান ও পরিচালক আরিফ মাহমুদ।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও উপস্থিত বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আরও আগেই আমার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে এখানে আসার ইচ্ছা ছিল। আমরা চিন্তা করেছি, ভবিষ্যতে এখানে আমরা একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করব।
“যেহেতু দেশে জনসংখ্যার তুলনায় ডাক্তারের প্রয়োজন আরও রয়েছে। এছাড়া এখানে রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক মানের নার্সিং ইনস্টিটিউট। কী করে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা আরও বেশি করে নিশ্চিত করা যায়, সেই চিন্তা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ।”
২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠান কেপিজের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে এ হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। এর নামকরণ হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের নামে, যিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মা।
তিনি বলেন, “এই অঞ্চলের মানুষ শ্রমিক। এখানে সাধারণ মানুষের সংখ্যাই বেশি। তাদের চিকিৎসাকষ্ট লাঘব করা এবং চিকিৎসাসেবা দেওয়া আমাদের কর্তব্য। এছাড়া এই এলাকায় উন্নতমানের হাসপাতালের সংখ্যাও কম। সেই চিন্তা থেকেই এখানে এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেই।”
আর্থিকভাবে অসচ্ছল রোগীদের সুবিধার জন্য প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসকদের ‘কনসালটেন্সি’ ফি কমানোর পরামর্শ দেন।
হাসপাতালের ফান্ডে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আরও ১০ কোটি টাকার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “যেহেতু হাসপাতালটি আমাদের মায়ের নামে, তাই এখানে আমাদের পরিবারের সবাই অনুদান দেবে। আপনাদের এবং হাসপাতালের যে কোনো সমস্যা আমাদের নিয়মিত জানাবেন।”
“এখান থেকে আমরা কোনো লাভ নিতে চাই না। ফিক্সড ডিপোজিটের জন্য আরও যে ১০ কোটি টাকার ফান্ড দেওয়া হবে সেখান থেকে যে টাকা আসবে তা দিয়ে গরীব ও মুক্তিযোদ্ধাদের ফ্রি ট্রিটমেন্ট দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এখানে ৩০% গরীব রোগী ফ্রি ট্রিটমেন্ট পাচ্ছেন।”
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ্, নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দীন মো. নুরুল হক ও অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। এছাড়া ডা. ওয়াজিহা আক্তার জাহান, ডা. বনজবা ও ডা. শাহানা ফেরদৌস তার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অংশ নেন।
মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের যে দক্ষ চিকিৎসকরা ইতোমধ্যে অবসরে গেছেন তাদের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালে যুক্ত করা যেতে পারে।
তিনি হাসপাতালের ফার্মেসির আধুনিকায়ন ও নিয়মিত চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানোরও পরামর্শ দেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ডা. মো. হাবিব এ মিল্লাত এমপি, ডা. এনামুর রহমান এমপি, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ্, নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দীন মো. নুরুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান, হাসপাতালটির সিইও জয়তুন সোলায়মান ও পরিচালক আরিফ মাহমুদ এবং হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সদস্য বায়েজিদ খুরশিদ রিয়াজ।