সমাজ বিনির্মাণে চাই দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি: প্রধান বিচারপতি

গণতন্ত্রের বিকাশে রাষ্ট্র ও সমাজ বির্নিমাণে দর্শন শাস্ত্রের অপরিহার্যতার কথা তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছেন, আইনের পরিধিও এই দর্শনের মধ্যেই আবর্তিত।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2016, 12:21 PM
Updated : 5 Feb 2016, 01:06 PM

একজন ভালো আইন বিশেষজ্ঞ হতে দর্শন বিষয়ে পারদর্শী হওয়ার পূর্বশর্তও তুলে ধরেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে শুক্রবার সকালে এক পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।

এস কে সিনহা আরও বলেন, “একজন ভালো আইন বিশেষজ্ঞ হতে হলে তাকে অবশ্যই দর্শন বিজ্ঞানে পারদর্শী হতে হবে। সমাজের সকলেই দার্শনিক হবেন সেটি প্রত্যাশিত নয়, তবে দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করা অপরিহার্য।”

‘সৌহার্দ ও স্মৃতির বন্ধনে আবদ্ধ আমরা, এসো মিলি প্রাণের আনন্দে’ এই স্লোগান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন তাদের অষ্টম পুর্নমিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

এস কে সিনহা বলেন, দর্শন ও আইন একটি অপরটির সম্পূরক ও পরিপূরক। ন্যায়বিচার ধারণার উন্নয়ন মূলত নৈতিক ও নীতি সম্বলিত বিষয়াবলী ও ঘটনা (দর্শন) থেকে উদ্ভব ঘটেছে, যা পরবর্তীতে আইনের মূলনীতি হিসেবে আদালতে ব্যবহৃত হয়।

“দর্শনে আইনের কথা, নীতিবাক্য হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকে এবং সেগুলো পরবর্তীতে রাষ্ট্রযন্ত্রে বিধিবদ্ধ আইনে রূপ লাভ করে মানবিক আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখে।”

শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমাজের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, “মনে রাখতে হবে জ্ঞান অর্জনের জন্য ধৈর্য, তিতীক্ষা ও সাধনা ছাড়া জ্ঞানের দীপশিখা জ্বলবে না। বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্প, কাব্য দর্শন এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেতে হলে আমাদের জ্ঞান অর্জনে ব্রতী হতে হবে।

গৌরবের শিখরে পৌঁছনোর কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই জানিয়ে এস কে সিনহা বলেন, “উচ্চ শিক্ষায় তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে প্রযুক্তিভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা অত্যাধুনিক ও সময়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। শুধু ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ থাকলেই হবে না, তা হওয়া উচিত উচ্চ গতিসম্পন্ন।”

ই-বুক, ই-টেক্সট বুক, ই-জার্নাল, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রবন্ধের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা আবশ্যক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পুর্নমিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি দার্শনিক নৈতিকতার জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও কথা বলেন।

“বিজ্ঞানের যুগে বস্তুগত চাহিদার কারণে আজ বিশ্বময় মানবিক, ধর্মীয়, সমাজাকি ও নৈতিক মূল্যবোধ বিপর্যস্ত-বিধ্বস্ত। নৈতিক মূল্যবোধ সমাজজীবনে শৃঙ্খলা রক্ষা করে। নৈতিক মূল্যবোধকে শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠা করতে হলে শিক্ষার সকল স্তরে ও সকল বিষয়ে দার্শনিক নৈতিকতার পাঠ অপরিহার্য।”

দর্শন বিভাগের চেয়ারপারসন ও অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. প্রদীপ রায়ের সভাপতিত্বে  প্রথম পর্বে অন্যদের মধ্যে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, দর্শন বিভাগের অনারারী অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম ও অ্যাসোসিয়েশনের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মো. লুৎফর রহমান বক্তব্য দেন।

এর আগে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন।