বইমেলা: প্রথম ছুটির সকালটা শিশুদের

এই স্টল থেকে ওই স্টলে ছুটোছুটি, সিসিমপুরের হালুম-ইকরি-টুকটুকির সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি আর কাঁধে স্কুলব্যাগের বদলে হাতে হাতে বই- বইমেলায় অন্যরকম একটি দিন পার করেছে শিশুরা।

মাসুম বিল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2016, 10:53 AM
Updated : 5 Feb 2016, 01:29 PM

শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত অমর একুশে বইমেলায় শিশুপ্রহরের ঘোষণা ছিল। তবে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ঘিরে কোমলমতিদের উপস্থিতি ছিল সকাল ৮টা থেকেই, ফলে বইমেলায় ছুটির দিনের সকালটা ছিল শিশুদেরই।

তারা বাবা-মার হাত ধরে বা কোলেপিঠে চড়ে মেলা প্রাঙ্গণ চষে বেড়িয়েছে, হাতে তুলে নিয়েছে পছন্দের বই।

মেলার শিশু কর্নারে সিসিমপুরের স্টল থেকে একগাদা বই কিনেও যেন শখ মেটেনি মানরাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের নার্সারির শিক্ষার্থী আফিফার। তাই বাবার হাত ছেড়ে ছুটল সামনের হলি পাবলিকেশন্সের দিকে।

বাবা আনোয়ার হোসেনও পিছু নেন মেয়ের। দেখলেন, হলি পাবলিকেশন্স থেকে ড্রয়িংয়ের একটি বই ব্যাগে ভরে নিয়েছে আফিফা। তিনি হাসিমুখে মেয়ের আবদার ও বইয়ের দাম পরিশোধ করেন।

মেলা থেকে মেয়েকে নিয়ে বাসার পথ ধরতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছিল গুলশান থেকে আসা আনোয়ারের; মেয়ে যে আরও ঘুরতে চায়, কিনতে চায় অনেক বই।

শিশুপ্রহরে বইমেলা প্রাঙ্গণে শিশুদের মনোরঞ্জনে হাজির পাপেট শো সিসিমপুরের চরিত্ররা। ছবি: নয়ন কুমার

আনোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ও সিসিমপুরের খুব ভক্ত। নিয়মিতই সিসিমপুর দেখে। সিসিমপুর স্টল থেকে অনেক বই কিনে দিলাম। তবু ওর শখ মেটেনি।”

মেলায় শিশু কর্নারের অবস্থান মেলার বর্ধিত অংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বরেণ্য শিশু সাহিত্যিক রোকানুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের নামে এই কর্নারে আছে ৩৯টি শিশুতোষ বইয়ের প্রকাশনা সংস্থার স্টল।

শুক্রবার, স্কুল বন্ধ। তাই শিশু একাডেমির গান আর ড্রয়িং ক্লাস শেষে মায়ের হাত ধরে সোজা বইমেলায় এসেছে অপ্সরা আনি।

ছোটো ছেলেকে কোলে নিয়ে তার সঙ্গে মেলায় ঘুরছিলেন অপ্সরার মা। মেয়েকে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের বই কিনে দিতে চাইলেও অপ্সরার আগ্রহ ভূতের গল্প বা কার্টুনে।

পুরান ঢাকার অপ্সরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “আম্মু আমাকে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের বই কিনে দিবে বলছে। ওই রকম কয়েকটা কিনব। কমিকস, ধাঁধা, ভূতের গল্প ও কার্টুনের বইও চাই।”

সকালে শিশু কর্নারের বটতলার ছোট্ট জায়গায় শিশুদের জটলা ছিল চোখে পড়ার মতো। সেখানে শিশুরা মশগুল ছিল প্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘সিসিমপুর’-এর পাপেট চরিত্র হালুম, ইকরি আর টুকটুকির সঙ্গে।

এতোদিন যাদেরকে দেখে এসেছে টেলিভিশনের পর্দায়, এখন তারা চোখের সামনে! আর তাদের সঙ্গে হেসে-গেয়ে হাত মিলিয়ে কিংবা ছবি তুলে সময় পার করতে দেখা গেল শিশুদের।

শিশুপ্রহরে বইমেলা প্রাঙ্গণে শিশুদের মনোরঞ্জনে হাজির পাপেট শো সিসিমপুরের চরিত্ররা। ছবি: নয়ন কুমার

সেখানেই কথা হয় আইডিয়াল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী অপর্ণা জাহানের সঙ্গে। মা আকলিমা জাহানসহ মেলায় এসেছে সে।

অপর্ণা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “সিসিমপুর আমার অনেক পছন্দ। বাসায় নিয়মিত দেখি। ওদেরকে সামনে পেয়ে অনেক মজা লাগতেছে।”

হালুম, ইকরি আর টুকটুকিদের সঙ্গে ছবি তুলে স্টলে বই দেখতে যাওয়ার কথা জানায় সে।

মেলায় এতো শিশুকে একসঙ্গে পেয়ে বিক্রি বাড়ায় খুশি হলেও শিশু কর্নারের স্থান নির্বাচন নিয়ে মন ভার ছিল প্রকাশনা সংস্থা সংশ্লিষ্টদের।

তারা বলেন, এবার জায়গা বেড়েছে তা ঠিক, কিন্তু শিশু কর্নার আগে যে রকম আলাদা থাকতো, এবার অনেকটা গোলমেলে।

শিশুতোষ প্রকাশনা সংস্থা প্রগতি পাবলিশার্সের মালিক আসরার মাসুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে কিছু বিক্রি হচ্ছে। তবে বিক্রি গতবারের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

“মেলার জায়গা বেড়েছে- তা ঠিক। কিন্তু এটা যে শিশু কর্নার তা তো বোঝা যাচ্ছে না। অন্য স্টলগুলোর সঙ্গে গোলমেলে হয়ে গেছে।”

একই রকম মত প্রকাশ করেন চিলড্রেনস বুক সেন্টারের প্রকাশক লেখক যুগল সরকারও।

এবারের একুশে বইমেলার প্রথম শিশুপ্রহর ছিল শুক্রবার। বাবা-মায়ের হাত ধরে বইয়ের রাজ্যে ঘুরে বেড়িয়েছে শিশুরা। ছবি: নয়ন কুমার

তিন সন্তানকে নিয়ে শিশুপ্রহরে মেলায় এসেছিলেন ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুদ ইবনে রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোমানা পারভীন দম্পতি।

মাসুদ যখন বেবি চেয়ারে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিলেন মেয়ে প্রার্থনাকে, তখন স্কুলপড়ুয়া দুই ছেলেকে সামলে রাখতে ব্যস্ত ছিলেন রোমানা।

শিশুপ্রহরের সময় শেষে বাসায় যেতে প্রস্তুত ওই পরিবারের সবাই; কিন্তু তখনও বটতলায় সিসিমপুরের বর্ণমালার লুডু খেলায় ব্যস্ত শিক্ষক দম্পতির বড় ছেলে শাফায়াত ওমর রিহান।

“চলো রিহান, বাসায় যাই”, বলে ছেলেকে হাঁক দেন রোমানা পারভীন।

“এতো তাড়াতাড়ি কেন যাব?” উত্তর উদয়ন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র রিহানের।

সকাল সাড়ে ৮টায় মেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বরেণ্য শিল্পী সমরজিৎ রায়চৌধুরী এর উদ্বোধন করেন।