প্রতিবন্ধী-প্রবীণদের স্বচ্ছন্দ বিচরণ বইমেলায়

বয়সের ভারে চলাফেরায় কষ্ট হলেও ‘মনটা পড়ে থাকে বইমেলায়’- সেই টানে মেলামুখী সত্তরোর্ধ্ব কবি-গীতিকার হালিমা জব্বার।

মাসুম বিল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2016, 04:18 PM
Updated : 4 Feb 2016, 07:56 PM

বৃহস্পতিবার বিকালে বইমেলার প্রবেশপথে টিএসসিতে এসে তিনি পেলেন একদল স্বেচ্ছাসেবী, যারা বয়স্ক আর প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ারে করে মেলা ঘুরিয়ে দেখান।

সেই হুইল চেয়ারে চেপে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরতে পেরে আনন্দে আত্মহারা হালিমা জব্বার; বললেন, “এই তো আন্তর্জাতিক মানের সেবা!”

কবি হালিমা জব্বার বাংলাদেশ টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ গীতিকার। বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী আবদুল জব্বারের সহধর্মিণী তিনি।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের বটতলায় হুইল চেয়ারে বসেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেন হালিমা জব্বার। হাতিরপুল এলাকার বাসা থেকে মেলায় এসেছেন বলে জানালেন তিনি।

“বয়স বেশি হয়ে গেছে। এতোদিন ধরে বইমেলায় আসি। পঞ্চাশ বছর এই মেলার সঙ্গে, এখন কি আর বাসায় বসে থাকা যায়!”

এবারের বইমেলায় হিমু’স প্রকাশনী থেকে তার ‘বৃষ্টিস্নাত জোৎস্না কুমার’ নামে একটি কবিতার বই বেরিয়েছে বলে জানান হালিমা। একই প্রকাশনীর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে তার আরেকটি বই ‘মহাকালের একাত্তর’।

হালিমা জব্বারের মতো বয়স্ক ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য এবার বইমেলায় করা হয়েছে হুইল চেয়ার সেবার ব্যবস্থা।

বাংলা একাডেমির আয়োজনে এই সেবার ব্যবস্থাপনায় আছে ‘সুইচ’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের এই সংগঠন ২০১১ সাল থেকে শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করে আসছে।

সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক মুইনুল ফয়সাল বলেন, প্রতিবন্ধী ও বয়স্করা যাতে ‘নিঃশঙ্কোচে’ মেলায় আসতে পারেন সেজন্য এই ব্যবস্থা।

“মেলার টিএসসি প্রবেশমুখে ১০টি হুইল চেয়ার নিয়ে প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের অপেক্ষায় আছি আমরা। কাউকে পাওয়া গেলে আমাদের একজন তাকে হুইল চেয়ারে নিয়ে মেলা ঘুরে দেখায়।”

মেলার প্রথম চারদিনে চারজন বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীকে মেলা প্রাঙ্গণ ও বিভিন্ন স্টল ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

কয়েকদিনের মধ্যে বইমেলার দোয়েল চত্বর প্রবেশমুখেও এই সেবা শুরুর আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বইমেলার এই সেবা প্রসঙ্গে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যাদের চলাফেলার কষ্ট হয় তাদের জন্য এবার আমরা বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছি। এখন পর্যন্ত বেশ সাড়া পাচ্ছি। সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে।

“বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের উদ্দেশ্যে আমাদের আহ্বান, এই মেলা সকলের, আপনারাও আসুন।”

এদিকে দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বইমেলায় পাঠক সমাগমও বাড়ছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার অফিস ছুটির পর দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ।

মাসব্যাপী মেলার পঞ্চম দিন প্রথম শুক্রবারে বড় ধরনের পাঠক সমাগম ও বিক্রির প্রত্যাশায় আছেন প্রকাশকরা।

অন্বেষা প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন বিডিনিউজ ডটকমকে বলেন, “এখন তো মেলার চতুর্থ দিন। মানুষ আস্তে আস্তে মেলামুখী হচ্ছে। আগামীকাল শুক্রবার ছুটির দিনে মানুষের উপস্থিতি বাড়লে আমাদের বিক্রিও বাড়বে, এটা স্বাভাবিক।”

শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত বইমেলায় শিশুপ্রহর, এদিন মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।

শিশুরা যাতে মেলা প্রাঙ্গণে পরিবারের সদস্যের সঙ্গে স্বচ্ছন্দে ঘুরতে এবং তাদের পছন্দের বই খুঁজে নিতে পারে সে লক্ষ্যে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জালাল।

শিশুপ্রহরে বাংলা একাডেমির নিয়মিত আয়োজন শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।

বাংলা একাডেমির তথ্য অনুযায়ী, চতুর্থ দিন বৃহস্পতিবার বইমেলায় নতুন বই এসেছে ৯৩টি।

এর মধ্যে গল্প ১৭টি, উপন্যাস ২০টি, প্রবন্ধ ১৩টি, গবেষণা ৩টি, ছড়া ৩টি, শিশু সাহিত্য ২টি, মুক্তিযুদ্ধ ১টি, বিজ্ঞান ২টি, ভ্রমণ ২টি, স্বাস্থ্য ৩টি, ধর্মীয় ২টি, সায়েন্স ফিকশন ১টি এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর ১১টি বই এসেছে।

মেলার মূলমঞ্চ

প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবারও বইমেলার মূলমঞ্চে আলোচনা সভায় হয়। ‘বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী: গবেষণা কার্যক্রম, অতীত থেকে বর্তমান’ বিষয়ে এদিন আলোচনায় অংশ নেন বক্তারা।

এ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. আবুল আহসান চৌধুরী। এবার বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন  অধ্যাপক মনসুর মুসা, ড. ভূঁইয়া ইকবাল ও ড. আমিনুর রহমান সুলতান।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সাদী মহম্মদ, খায়রুল আনাম শাকিল, ফেরদৌস আরা, রাহাত আরা গীতি, মহিউজ্জামান চৌধুরী ও নার্গিস চৌধুরী।