যাত্রীদের চুক্তিতে যেতে বাধ্য করছেন অটোরিকশার চালকরা

ভাড়া বাড়িয়ে প্রায় ‍দ্বিগুণ করেও রাজধানীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদেরকে মিটারে চলতে বাধ্য করা যায়নি। এখনও চালকদের কণ্ঠে সেই পুরনো সুর- ‘পোষায় না’। 

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2016, 07:21 AM
Updated : 3 Feb 2016, 07:23 AM

কম দূরত্বে যেতে চালকদের অনীহা এবং মিটারের পরিবর্তে চুক্তিতে যেতে বাধ্য করা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কোনো চালক মিটারে যেতে রাজি হলেও বাড়তি ২০-৫০ টাকা দাবি করছেন। অটোরিকশার ভাড়া নিয়ে প্রতিদিনই রাজধানীতে চালকদের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়াচ্ছেন যাত্রীরা।

গত ১ নভেম্বর বর্ধিত ভাড়া কার্যকরের পর কয়েকদিন অটোরিকশা চালকদেরকে নিয়ম মেনে মিটারে চলতে দেখা গেলেও অল্পদিনের মধ্যেই চালকরা আগের চেহারায় ফেরেন।

নতুন নিয়মে সিএনজিচালিত অটোরিকশার প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়েছে।

প্রথম দুই কিলোমিটারের পর প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৭ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বেড়ে এখন ১২ টাকা। প্রতি মিনিট বিরতির জন্য গুণতে হবে দুই টাকা করে, আগে যা ১ টাকা ৪ পয়সা ছিল।

আগে যখন মালিকদের দৈনিক জমা ৬০০ টাকা ছিল তখন চালকদের অভিযোগ ছিল, মালিকরা দিনে হাজার টাকা থেকে ১২শ টাকা পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে আদায় করতেন। মালিকদের দৈনিক জমা বাড়িয়ে এখন ৯০০ টাকা করা হয়েছে।

‘যাত্রীকল্যাণ সমিতি’ জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে রাজধানীতে অটোরিকশা ভাড়ার পরিস্থিতি যাচাইয়ে মাঠ পর্যায়ে একটি জরিপ চালায়। ঢাকার ১৯টি স্থানে ১ হাজার ৯৩টি অটোরিকশার খোঁজখবর নেওয়া হয়। এসময় ১ হাজার ১৬০ জন যাত্রীর বক্তব্যও নেওয়া হয়।

তাদের জরিপ প্রতিবেদনে দেখানো হয়, শতকরা ৬২ ভাগ অটোরিকশা চুক্তিতে চলাচল করছে। আর মিটারে যেতে রাজি হলেও ২০-৪০ টাকা বখশিশ দাবি করেন ৮১ শতাংশ চালক। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী গন্তব্যে যেতে রাজি হন না ৭৩ ভাগ চালক।

ওই প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর রাজধানীর শাহবাগ, ফার্মগেইট, মহাখালী এলাকায় অটোরিকশার ভাড়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে। এসব স্থানেও প্রায় একই ধরনের চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।

গত রোববার বিকাল ৪টার দিকে স্ত্রী আর মালামাল নিয়ে মহখালী রেল ক্রসিংয়ের কাছে দাঁড়িয়ে অটোরিকশা ভাড়া নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন উত্তরার যাত্রী আব্দুল হালিম। প্রায় আধাঘণ্টা পর হাল ছেড়ে দিয়ে বাসেই চেপে বসেন তিনি।

হালিম বলেন, “বোঝা বেশি হওয়ায় বাসে চড়তে চাইছিলাম না। কিন্তু সিএনজিগুলো ৩০০ টাকা চায়। এটা তো আসলে অনেক বেশি।”

‘এখন মিটারে যাওয়া বাধ্যতামূলক’ এমনটি জানালে তিনি বলেন, “চুক্তিতেই যেখানে যাচ্ছেনা, সেখানে মিটারের কথা বলে কি লাভ। আমাকে তো যেতে হবে।”

মহাখালী কাঁচাবাজারের সামনে সবসময়ই ১০-১২টি অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এখানেও যাত্রীদের সঙ্গে অটোচালকদের দরকষাকষির দৃশ্য স্বাভাবিক।

মিটারে চলার বিষয়ে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)  কড়াকড়ি থাকলেও তা না মানার কারণ জানতে চাওয়া হয় মো. মোস্তফা নামের এক চালকের কাছে।

তার মতে, এখন অধিকাংশ চালক মিটারেই চলে। কিন্তু যাত্রাপথে ২/৩টা জ্যাম বা সিগনাল না পড়লে পোষায় না। রাত ৯টার পরই চুক্তিতে যাওয়ার হার বাড়ে।

“দরকষাকষি সব ক্ষেত্রেই আছে। সিএনজির ভাড়ার ক্ষেত্রে দরকষাকষি আগের মতো হয় না। আমি নিজেও মাঝে মধ্যে ২০/৩০ টাকা দাবি করি, না দিলে তো জোরাজুরি নাই,” বলেন মোস্তফা।

তবে বিআরটিএ ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের দাবি, আগের চেয়ে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে।

বিআরটিএর এনফোর্সমেন্ট বিভাগের পরিচালক বিজয় ভূষণ পাল বলেন, “পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছে। সিএনজি অটোরিকশায় কিছু অনিয়মের অভিযোগ শোনা গেলেও তা ধীরে ধীরে কমে আসছে।

“গত ২৫ ও ২৬ জানুয়ারি আগারগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে অনিয়মের অভিযোগে ৫৪টি অটোরিকশা ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে। ৫১ জন চালককে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।”

সম্প্রতি বিআরটিএর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “জানুয়ারির প্রথম ২১ দিনে আইনভঙ্গের দায়ে ৮৩২টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, যার অধিকাংশই অটোরিকশা।”

ট্রাফিক পুলিশের মহাখালী জোনের উপ-কমিশনার মাহবুবুর রহমান বলেন, “বুদ্ধিমান চালকরা এখন মিটারেই চলাচল করে। কারণ মিটার এখন তাদের জন্য এবং যাত্রীর জন্য স্বস্তির।

“তবুও কোনো চালকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি। সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বর্তমানে ট্রাফিক পুলিশের পৃথক মনিটরিং চলছে। পৃথক রিপোর্টও জমা দেওয়া হয়।”