বইমেলা ঘিরে থাকবে ক্যামেরা, ২৪ ঘণ্টা চোখ রাখবে পুলিশ 

এক বছর আগে লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি মাথায় রেখে একুশের বইমেলায় নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2016, 07:21 PM
Updated : 31 Jan 2016, 07:23 PM

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই বইমেলাকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকার পুরোটা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় রাখা হবে।

ওই সব ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওচিত্র পর্যবেক্ষণে দুটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থাকবে। একটি বাংলা একাডেমিতে এবং অন্যটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

“দুজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা দুটি কন্ট্রোল রুমে থেকে মনিটরিং করবেন। সেখান থেকে সিটিটিভি পর্যবেক্ষণ করা হবে। সন্দেহজনক কিছু পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” বলেছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।

মাসব্যাপী বইমেলার শুরুর আগের দিন রোববার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নিজের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সবার জন্য খুলবে বইমেলা।

গত বছর বইমেলা চলার সময় টিএসসির কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় লেখক অভিজিৎ রায়কে। তার এক যুগ আগে একই এলাকায়ই হামলার শিকার হয়েছিলেন লেখক হুমায়ুন আজাদ।

এই স্থানেই আক্রান্ত হন অভিজিৎ রায়

দুটি হামলা এবং আরও ব্লগার, প্রকাশক হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিরা জড়িত বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। জঙ্গিদের হুমকির মুখে আছেন আরও লেখক-অধ্যাপক। 

লেখকরা চাইলে নিরাপত্তা দিতে পুলিশ প্রস্তুত জানিয়ে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “কোনো নাগরিকের যদি বিশেষ নিরাপত্তা দরকার হয়, তিনি পুলিশের কন্ট্রোলরুমে জানালে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।”

অভিজিতের উপর যখন হামলা হয়েছিল, তখন সময় রাত ৯টা এবং ওই এলাকায় আলোও বেশি ছিল না।

এবার বইমেলা এবং সংলগ্ন এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হবে বলে পুলিশ কমিশনার জানান।  

“ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে কথা বলে টিএসটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি ফায়ার ব্রিগেডের নিজস্ব লাইটিং থাকবে।”

মেলায় ঢোকা ও বের হওয়া সহজ করতে এবার ফটকের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি তল্লাশিও জোরদার থাকবে বলে জানান আছাদুজ্জামান মিয়া।

“প্রত্যেক গেইটে আর্চওয়ে থাকবে এবং যে কোনো ব্যক্তিকে তল্লাশির মধ্য দিয়ে মেলায় প্রবেশ করতে দেয়া হবে।”

মেলার আগের দিন নিরাপত্তা তল্লাশি

ভিড় এড়াতে ঢোকা ও বের হওয়ার পথ আলাদা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে যৌন হয়রানির মতো ঘটনাও এড়ানো যাবে।

“টিএসটি চত্বরের সামনে যে মূল প্রবেশ পথ এই পথ দিয়ে আগে মানুষ প্রবেশ করত ও বের হত। এ কারণে আগে এই নিয়ে জটিলতা তৈরি হত এবং অনেক অনাকাঙ্ক্ষিক ঘটনা এমনকি ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনা ঘটারও সুযোগ ছিল।”

নিরাপত্তা নিশ্চিতে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি বাহিনীর সদস্যরা পুরো বইমেলায় নজরদারি রাখবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার।

তিনি জানান, হকাররা যেন টিএসসির সড়কদ্বীপে বসতে না পারে সে ব্যবস্থা নেবেন তারা। জননিরাপত্তার স্বার্থে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার পর কাউকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

পুরো বইমেলাকে সক্ষমতার সর্ব্বোচ্চ দিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখার চেষ্টা করার আশ্বাস দিয়ে নগরবাসীর সহযোগিতাও প্রত্যাশা করেছেন আছাদুজ্জামান মিয়া।

সংবাদ সম্মেলনে তার  সঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মারুফ হাসান, যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলামও ছিলেন।