ঢাবিতে মেট্রোরেলে সতর্কতার পরামর্শ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে মেট্রোরেলের রুট নির্মাণের সময় প্রত্নতাত্ত্বিক ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2016, 05:06 PM
Updated : 14 Jan 2016, 05:54 PM

মেট্রোরেলের রুট নিয়ে করা প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপে নেতৃত্বদানকারী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হক বলেছেন, “শাহবাগ থেকে টিএসসি, কার্জন হল- এই এলাকাটা ইনস্টিটিউশনাল এরিয়া। এখানে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আছে।

“এখান দিয়ে মেট্রোরেলের রুট যেতে হলে সাউন্ড প্রুফ ও ভাইব্রেশন কন্ট্রোলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। তা না হলে রাজু ভাস্কর্যসহ যে সব স্থাপনা আছে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত, এমনকি ভেঙে যেতে পারে।”

তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী তারা মেট্রোরেলের রুট পরিবর্তনের প্রস্তাব করেননি বলে জানান অধ্যাপক মোজাম্মেল।

বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেট্রোরেলের রুট বদলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মেট্রোরেলের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপে শাহবাগ থেকে টিএসসি না হয়ে মৎস্যভবন দিয়ে মেট্রোরেলের রুট নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

দুপুরে ‘মেট্রোরেলের রুট বদলাও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচাও’ ব্যানারে মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এইসিএল নামে একটি প্রতিষ্ঠান মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপটি করিয়েছিল, যেখানে অধ্যাপক মোজাম্মেলের নেতৃত্বে ১২ জন গবেষক কাজ করেন।

“ওই সার্ভের খসড়া প্রতিবেদনে ন্যাশনাল রেকর্ড, প্রত্নতত্ত্ব এবং ঐতিহাসিক মূল্য বিবেচনায় টিএসসি দোয়েল চত্বর দিয়ে রুট না নিয়ে শাহবাগ, মৎস্যভবন দিয়ে রুট নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল।

“সার্ভেতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এমনকি পয়েন্ট টু পয়েন্ট স্থাপনা ধরে বলা হয়, মেট্রোরেলের কারণে এগুলো ঝুকিঁপূর্ণ। ওই সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।”

সতর্কতা অবলম্বন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য দিয়ে মেট্রোরেলের রুট নেওয়া হলে কোনো ক্ষতি হবে কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক মোজাম্মেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাউন্ড প্রুফ ও ভাইব্রেশন মিনিমাইজ করলে তা হবে না।”

“তবে যে কোনো স্থাপনার সাথে আরেকটা স্থাপনা করা হলে কোনো না কোনোভাবে প্রভাবিত হয়। কোনো না কোনোভাবে ডিস্টার্ব হবে।”

তারপরেও ‘ক্ষতি’ পুষিয়ে নিতে তারা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন জানিয়ে দৃষ্টান্ত হিসেবে মোজাম্মেল হক বলেন, টিএসসিতে প্রতিদিন যে সংখ্যক মানুষ আসেন তাদের স্থান সংকুলানের জন্য টিএসসির দেওয়াল উঠিয়ে সেখানে বসার স্থান করে দেওয়ার পরামর্শ রয়েছে তাদের।

এছাড়া মেট্রোরেলের রুটকে আকর্ষণীয় করে তোলারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

প্রকল্পের যে চূড়ান্ত নকশা করা হয়েছে তাতে এসব পরামর্শ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত নন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী তাইশা তাশরীন।

তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহাসিক মুঘল স্থাপনা ঢাকা গেইটের উপর দিয়ে এবং সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের একেবারে গা ঘেঁষে মেট্রোরেলের লাইন যাবে।

“এতে স্থাপনাগুলোর যেমন সৌন্দর্য নষ্ট হবে তেমনি মেট্রোরেলের যাতায়াতের সৃষ্ট কম্পনে স্থাপনাগুলোর স্থায়িত্বও হুমকির মুখে পড়বে। এছাড়া পহেলা বৈশাখে যে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয় তা অনেকটাই সংকুচিত হয়ে যাবে। শব্দে বিঘ্নিত হবে টিএসসির সাংস্কৃতিক মহড়া, নাটমণ্ডলের কার্যক্রম।”

ক্যাম্পাসের ভিতর দিয়ে মেট্রোরেলের রুট বদলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর মানববন্ধনের পর গত ৯ জানুয়ারি এ নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মেট্রোরেলের শব্দে লেখাপড়া ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা নাকচ করে তিনি বলেন, “আধুনিক প্রযুক্তির সাউন্ড সিস্টেম কন্ট্রোল করা হবে। সে জ্ঞানও তাদের নেই। সে খবরটাও তারা রাখেন না।”

তবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের বক্তব্য খণ্ডিত আকারে পৌঁছেছে বলে মনে করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তাশরীন বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা মনে করি, আমাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতার নানা দিক খণ্ডিত আকারে আপনার কাছে পৌঁছেছে।

“আমরা কোনোভাবেই রাষ্ট্রের চলমান উন্নয়নের বিপক্ষে নই, বরং রাষ্ট্রের উন্নয়নটি আরও টেকসই হওয়া প্রয়োজন। রাজধানীর যানজট নিরসনে মেট্রোরেল স্থাপনে নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কিন্তু এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে যদি আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারকচিহ্ন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে তা বাস্তবায়িত হলেও প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাবে।”

শাহবাগ থেকে মৎস্যভবন হয়ে মতিঝিলের দিকে মেট্রোরেল করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা উন্নয়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি না। যদি এমন হতো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া মেট্রোরেল স্থাপনের অন্য কোনো পথ নেই, তাহলে প্রেক্ষাপট ভিন্ন হতে পারত।

“কিন্তু বিকল্প সোজা পথ থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে মেট্রোরেল করার প্রতিবাদে যৌক্তিকভাবে আমাদের আন্দোলনে নামতে বাধ্য করেছে।”

মেট্রোরেলের রুট বদলের দাবিতে আগামী ২০ জানুয়ারি সকাল ১১টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে সংহতি সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ, সঞ্জীবন চক্রবর্তী, হাসিব মো. আশিক, রুদ্রনীল রানা, অনুপম দত্ত, উয়শা তাজরীন ও রিয়াজুল আলম ভূইয়া উপস্থিত ছিলেন।