যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক কর্মকর্তা ব্রুস রিডেলের লেখা ‘জেএফকে’স ফরগটেন ক্রাইসিস’ বইয়ে বলা হয়েছে, গত শতকের পঞ্চাশের দশকে শত শত তিব্বতি বিদ্রোহীকে প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো এবং প্রশিক্ষণের পর তিব্বতে পাঠাতে কুর্মিটোলা বিমান ঘাঁটি ব্যবহার করা হয়।
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এই ব্যবস্থা করে দেয় বলে জানান রিডেল, যিনি ৩০ বছর সিআইএতে কাজ করার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের চারজন প্রেসিডেন্টের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন।
বইয়ে বলা হয়, ১৯৫৭ সালে তিব্বতের ছয়জন গেরিলার প্রথম দলটি কুর্মিটোলা থেকেই প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি ‘সাইপান’ দ্বীপে উড়াল দিয়েছিল।
তিব্বতের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা দালাই লামার বড়ভাই থুবতেন নোরবুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা প্রতিরোধযুদ্ধের অন্যতম নেতা ছিলেন এই ছয় গেরিলা। রিডেলের ভাষ্য অনুযায়ী, নোরবু সে সময় সিআইএর সহায়তায় চলা ‘কমিটি ফর ফ্রি এশিয়ার’ সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
তিব্বতীয় প্রথম গেরিলাদলের চীনযাত্রার বর্ণনা করে বইটিতে বলা হয়, “১৯৫৭ সালের অক্টোবর নাগাদ তিব্বতীদের প্রথম দলটি দেশে ফিরে বিদ্রোহীদের সহায়তায় নিজেদের দক্ষতা কাজে লাগানোর জন্য প্রস্তুত হয়।
“সেটি ছিল সফল একটি মিশন এবং পূর্ব পাকিস্তান থেকে দ্বিতীয় ফ্লাইট উড়েছিল ১৯৫৭ সালের নভেম্বরে।”
পঞ্চশের দশকের শেষভাগ জুড়ে তিব্বতের শত শত গেরিলাকে কুর্মিটোলা ঘাঁটি হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের গোপন প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে নিয়ে গেছে আবার তাদের তিব্বতে ফেরত পাঠিয়েছে বলে জানান রিডেল।
এ সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ, বেতার সরঞ্জামও কুর্মিটোলা হয়ে বিমানে করে তিব্বতে নেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
“তবে তাদের অধিকাংশকেই চীনা সৈন্যরা নিরস্ত্র করে। এ সময় তিব্বতে চীনের সৈন্য সংখ্যাও বাড়ে,” বলেন রিডেল।
তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান পশ্চিম পাকিস্তানের পেশোয়ার এবং পূর্ব পাকিস্তানের কুর্মিটোলা বিমান ঘাঁটি সিআইএকে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র পেশোয়ার থেকে ইউ-২ গোয়েন্দা বিমানের সাহায্যে রাশিয়া ও চীনে নজরদারি এবং তিব্বত অভিযানের জন্য কুর্মিটোলাকে ব্যবহার করত।
“ধরা পড়া কয়েকজন তিব্বতীয় বিদ্রোহীর কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র-গোলাবারুদ পাওয়ার কথা জানতে পারলেও চীন এ বিষয়টি ধরতে পারেনি। বিস্ময়করভাবে তারা পাকিস্তান নয়, এই তৎপরতায় ভারতের হাত ছিল বলে সন্দেহ করত।”
১৯৬০ দশকের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন চীন সফরে যাওয়ার আগে তিব্বত অভিযানের সমাপ্তি ঘটে বলে জানিয়েছেন রিডেল।