‘নিজামীকে যারা মন্ত্রী করেছিল, তাদের প্রতি চপেটাঘাত’

চূড়ান্ত রায়ে মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ড বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করে অবিলম্বে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দাবি জানিয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2016, 06:51 AM
Updated : 7 Jan 2016, 02:34 AM

আপিল বিভাগ বুধবার সকালে নিজামীর রায় ঘোষণা করার পর শাহবাগে আনন্দ মিছিল করেছেন মঞ্চের কর্মীরা।  

মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রজন্ম চত্বরে এক সমাবেশে বলেন, “এই নিজামী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, যেটি ত্রিশ লাখ মানুষের রক্তে রঞ্জিত, সেই জাতীয় পতাকা তার গাড়িতেও লাগানোর ধৃষ্টতা দেখিয়েছিল। সেই রাজনীতিবিদ- যারা অপশক্তি, রাজাকারদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে দিয়েছিল, আজকের এই ফাঁসির রায় তাদের জন্য চপেটাঘাত, তাদের জন্য উপযুক্ত জবাব।”

আপিল বিভাগে নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল রাখার দাবিতে সকালেই শাহবাগে অবস্থান নেন গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা।

সকাল ৯টা পর আপিল বিভাগ ফাঁসির রায় বহাল রাখার ঘোষণা দিলে শুরু হয় গণজাগরণের আনন্দ মিছিল। মিছিলটি শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে আবার শাহবাগে এসে শেষ হয়।

বিগত চার দলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী নিজামী চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র মামলারও মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি। একাত্তরে তার নেতৃত্বেই আল-বদর বাহিনী বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধ ঘটায় বলে আদালতের রায়ে উঠে  আসে।

২০১৪ সালে জামায়াতে ইসলামীর আমির নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়ে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “তৎকালীন সরকার কর্তৃক এই অভিযুক্তকে মন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দেওয়া একটা বড় ধরনের ভুল (ব্লান্ডার) ছিল। পাশাপাশি এটা ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রম হারানো দুই লাখ নারীর প্রতি ছিল সুস্পষ্ট চপেটাঘাত। এই লজ্জাজনক ঘটনা পুরো জাতির জন্য অবমাননাকর।’

চূড়ান্ত রায়েও নিজামীর সাজা বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করে গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশে ইমরান বলেন, এই রায়ে মানুষের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হয়েছে, ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়েছে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম হয়েছে।

“উচ্চ আদালতের এই রায় জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছে। আমরা অবিলম্বে এই রায় কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি।”

ইমরান বলেন, এই নিজামী পাবনায় শত শত মানুষকে হত্যা করেছেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ রায়ে পাবনা অঞ্চলের মানুষের মুখেও হাসি ফুটবে।

“নিজামী একাত্তরে গণহত্যা করেও কিন্তু ক্ষান্ত হননি, স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে পাকিস্তান পুনরুদ্ধার আন্দোলন করেছেন। পুনরুদ্ধার কমিটি করে পাকিস্তান ফিরিয়ে আনার চেষ্টা তিনি করেছেন।”

পাকিস্তান সেখানে নিযুক্ত একজন বাংলাদেশি কূটনীতিবিদকে ফিরিয়ে নিতে বলেছে- এমন খবরের প্রতিক্রিয়ায় ইমরান বলেন, “আজকের রায় সেটারও উপযুক্ত জবাব।”

সরকারকে পাকিস্তানের দূতাবাসে তালা লাগিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, “সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, আর কালক্ষেপণ না করে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে পিআইএর ফ্লাইটে তুলে দিয়ে পাকিস্তানের দূতাবাসে অবিলম্বে তালা লাগিয়ে দিন।

“এবং পাকিস্তানকে জানিয়ে দিন, একাত্তরে আমরা আত্মমর্যদার প্রশ্নে আপস করিনি, ২০১৬ সালেও করব না।”