ন্যায়বিচার পাইনি: রাজীবের বাবা

গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলার রায়ে সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী রাজীবের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Dec 2015, 09:33 AM
Updated : 31 Dec 2015, 01:46 PM

আলোচিত এ মামলার রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি ন্যায়বিচার পাইনি। আমি হতাশ।”

২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলন শুরুর দশম দিনে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পল্লবীতে নিজের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজীবকে।

ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহম্মেদ বৃহস্পতিবার এ মামলার যে রায় দিয়েছেন, তাতে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাঈম দীপের ফাঁসির আদেশ এসেছে।

এছাড়া মাকসুদুল হাসান অনিকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এহসান রেজা রুম্মান, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানীকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং সাদমান ইয়াছির মাহমুদকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন জানিয়ে রাজীবের বাবা বলেন, “হত্যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত ছিল। দুইজনের ফাঁসি দিয়ে অপর আসামিদের ১০ বছর, পাঁচ বছর ও তিন বছরের দণ্ড হত্যার সাজা হতে পারে না। এটা প্রভাবিত রায়; রায়ে বিচার বিভাগের ব্যর্থতা বেরিয়ে এসেছে।

পেশায় স্থপতি রাজীব ধর্মান্ধতা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতাকারীদের বিপক্ষে ব্লগে লিখতেন।

তার হত্যাকাণ্ডের বিচারে আসামিদের সবার সার্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নাজিম উদ্দিন বলেন, “মৌলবাদের জয় হলো। আমরা যারা নীরিহ, মুক্তমনা, তাদের পরাজয় হলো।”

রাজীবের পর গত তিন বছরে আর যে ব্লগার-লেখক-প্রকাশক হত্যার ঘটনা ঘটেছে, তার ন্যায়বিচার হওয়ার আশা নিয়েও তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। 

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান বলেন, তারাও এ রায়ে ‘পুরোপুরি সন্তুষ্ট’ নন।  

“আমরা সকল আসামির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। তাই এই রায়ের কিছু অংশ আমাদের প্রত্যাশার বাইরে। তবে পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে  বিস্তারিত মন্তব্য করা যাবে।”

রায়ে বলা হয়, দীপের চাপাতির আঘাতে রাজীবের মৃত্যু হয়। এ কারণে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অনিক সেই চাপাতি কিনে এনেছিলেন, তাকে দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন।

সাদমান ইয়াসির মাহমুদ অনেক পরে ধরা পড়ে আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন, ‘তার ভিত্তিতে’ তাকে তিন বছর করাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

রায়ে বলা হয়, মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানী যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তাতে হত্যাকাণ্ডে তার নিজের বা অন্য আসামিদের কারও সম্পৃক্ততার কথা আসেনি।

“তবে তার খুৎবায় অনুপ্রাণিত হয়েছে এ সব আসামিরা। যে করাণে তার বিরুদ্ধে প্ররোচনার অভিযোগ আসে। তার শাস্তি পাঁচ বছরের।”

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলা নিয়ে রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারকও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।  

তিনি বলেন, “তদন্ত ঠিকমতো হলে রাজিব যে তার বাসা থেকে তার বান্ধবী তানজিলার সাথে বেরিয়ে গেল সেই তানজিলার জবানবন্দি নিতে পারতেন আইও। আমাদের আসলে সবাইকে বিবেক নিয়ে চলতে হবে, ধৈর্য্য নিয়ে চলতে হবে।”

মামলার তদন্ত শেষে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি জসীমউদ্দিন রাহমানীসহ ওই আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ। আর এবছরের ১৮ মার্চ তাদের সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে আদালত।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছিল, জসীমউদ্দিন রাহমানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে দুটি মসজিদে জুমার খুতবায় ধর্মের বিরুদ্ধে লেখে এমন ব্লগারদের হত্যার ফতোয়া দিতেন। অন্য আসামিরা সবাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং তারা ওই খুতবা শুনতেন। এভাবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হয়।

জসীমউদ্দিনের লেখা বই পড়ে এবং সরাসরি তার বয়ান ও খুতবা শুনে বাকি আসামিরা ‘নাস্তিক ব্লগারদের’ খুন করতে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত হন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ব্লগার রাজীব খুন হন।

রাহমানীকে হত্যাকাণ্ডের উৎসাহদাতা হিসেবে তুলে ধরা হয় অভিযোগপত্রে।

ওই হত্যার আলামত মিললেও তদন্ত কর্মকর্তা চাক্ষুষ কোনো সাক্ষী হাজির করতে পারেনি জানিয়ে পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “তদন্তের গতি অনেক লম্বা হয়েছে; আসামিপক্ষ থেকে কেউ সাজা কমানোর দাবি করেনি। সবাই খালাস চেয়েছেন – কিন্তু খালাস দেওয়ার মতো কাউকে পাইনি। হত্যায় অংশগ্রহণের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”