রাজাকার সাঈদীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Dec 2015, 05:30 AM
Updated : 20 Dec 2021, 02:26 PM

ওই অনুলিপির সত্যায়িত কপি পেলেই রাষ্ট্রপক্ষ সর্বোচ্চ আদালতের ওই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আবেদন করবে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম অভিযুক্ত ব্যক্তি হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাঈদীর বিচার শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।

এরপর সাঈদী আপিল করলে সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ গতবছর ১৭ সেপ্টেম্বর সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাজা কমিয়ে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের মূল রায়টি লিখেছেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন তখনকার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

তবে এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে বেঞ্চের অপর বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা অভিযোগ থেকে সাঈদীকে খালাস দেন। আর বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার পক্ষে রায় দেন।

সব মিলিয়ে ৬১৪ পৃষ্ঠার এই রায়ে বিচারকদের স্বাক্ষরের পর বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে তার অনুলিপি প্রকাশ করা হয়।

আপিলের রায়ে ১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে হত্যা, নিপীড়ন, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও ধর্মান্তরে বাধ্য করায় সাঈদীকে ‘যাবজ্জীবন’ কারাদণ্ড দেয়া হয়। যাবজ্জীবন বলতে ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর সময় পর্যন্ত’ কারাবাস বোঝাবে বলে ব্যাখ্যা দেয় আদালত।

এছাড়া ৮ নম্বর অভিযোগের একাংশের জন্য সাঈদীকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৭ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ।

এর মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাঈদীর ফাঁসির রায় দিয়েছিল।

এই মামলায় সাঈদী ও রাষ্ট্রপক্ষের দুটি আপিল ছিল; আদালত উভয়টির আংশিক মঞ্জুর করেছে।

আমৃত্যু দণ্ডের তিন অপরাধ

অভিযোগ-১০:  ১৯৭১ সালের ২ জুন সকাল ১০টার দিকে সাঈদীর নেতৃত্বে তার সশস্ত্র সহযোগীরা ইন্দুরকানি থানার উমেদপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ার হানা দিয়ে ২৫টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। যার মধ্যে রয়েছে চিত্তরঞ্জন তালুকদার, হরেণ ঠাকুর, অনিল মণ্ডল, বিশাবালী, সুকাবালি, সতিশবালার ঘর। সাঈদীর ইন্ধনে তার সহযোগীরা বিসাবালীকে নারকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা করে।

অভিযোগ-১৬:  স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সাঈদীর নেতৃত্বে ১০-১২ জন সশস্ত্র রাজাকার পারেরহাট বন্দরের গৌরাঙ্গ সাহার বাড়ি থেকে তার তিন বোনকে অপহরণ করে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেয়। সেখানে তাদের আটকে রেখে তিন দিন ধরে ধর্ষণ করে পরে ছেড়ে দেয়া হয়।

অভিযোগ-১৯: স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সাঈদী জোর করে মধুসুদন ঘরামী, কৃষ্ট সাহা, ডা. গণেশ সাহা, অজিত কুমার শীল, বিপদ সাহা, নারায়ণ সাহা, গৌরাঙ্গ পাল, সুনীল পাল, নারায়ণ পাল, অমূল্য হাওলাদার, শান্তি রায়, হরি রায় জুরান, ফকির দাস, টোনা দাস, গৌরাঙ্গ সাহা, হরিদাস, গৌরাঙ্গ সাহার মা ও তিন বোন মহামায়া, অন্যরাণী ও কামাল রাণীসহ ১০০/১৫০ জন হিন্দুকে ধর্মান্তরিত করেন।

একাত্তরে ভূমিকার কারণে ‘দেইল্যা রাজাকার’ নামে খ্যাত এই জামায়াত নেতার সাজা কমানোর আদেশ আসায় আপিলের রায়ের পর আদালতের বাইরে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল ও শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এই জামায়াত নেতার ছেলে মাসুদ সাঈদী ও আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, তারা খালাস আশা করেছিলেন। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেলে পুনর্বিবেচনার আবেদন করবেন।

অন্যদিকে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম সেদিন বলেন, তারা প্রত্যাশিত রায় পাননি। তবে এই রায়েও ‘ধর্মীয় নেতা’ হিসাবে সাঈদীর মুখোশ খুলে গেছে।

ওই রায়ের ১৫ মাস পর বৃহস্পতিবার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপির জন্য আবেদন করা হয়েছে। অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর রিভিউ করা হবে। এক্ষেত্রে নির্ধারিত ১৫ দিনের মধ্যেই রিভিউ করতে হবে।”

আপিল বিভাগ থেকে এ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধ মামলার যে পাঁচটি রায় এসেছে, তার মধ্যে কেবল সাঈদীর ক্ষেত্রেই রিভিউ বাকি রয়েছে।   

বাকি চার মামলায় জামায়াতে ইসলামীর দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামা, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রিভিউ খারিজ হয়ে যাওয়ায় তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

সাঈদীর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ রায়ের রিভিউ চাইলে তা হবে যুদ্ধাপরাধ মামলায় সাজা বাড়ানোর জন্য প্রথম পুনর্বিবেচনার আবেদন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে একাত্তরে জামায়াত নেতা সাঈদীকে পিরোজপুরের মানুষ চিনত ‘দেইল্লা  রাজাকার’ নামে। তিনি যে রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় অংশ নিয়েছেন, প্রসিকিউশন তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে যা আছে

৬১৪ পৃষ্ঠার রায়ের মধ্যে বিচারপতি এস কে সিনহা লিখেছেন ১৫২ পৃষ্ঠা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা লিখেছেন ২৪৪ পৃষ্ঠা। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী লিখেছেন ২১৮ পৃষ্ঠা।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে সাঈদীর বিরুদ্ধে আনা আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হলেও আপিল আদালতে তিনটি টেকেনি। আপিল বিভাগে প্রমাণিত হয়েছে পাঁচ অভিযোগ। এর মধ্যে তিনটিতে আপিল বিভাগ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড, একটিতে ১২ বছর ও অন্যদিতে দশ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেয়।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের চূড়ান্ত রায়ে বলা হয়, ‘সব আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে আমরা মনে করি, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল দোষী সাব্যস্ত করে ৭, ১০, ১৬, ১৯ ও ৮ (অংশবিশেষ) নম্বর অভিযোগে যথাযথভাবে দোষী সাব্যস্ত করেছে। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ৭, ৮ (অংশবিশেষ) ও ১০ নম্বর অভিযোগে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছে। ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে শাস্তি বহাল রাখা হচ্ছে।  ট্রাইব্যুনাল ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।

“৮ নম্বর অভিযোগের আংশিক মানিক পসারির ভাইয়ের ওপর নির্যাতন ও তাদের বাড়িতে লুটপাটের জন্য দোষী সাব্যস্ত করছি। ১০ নম্বর অভিযোগে শান্তি কমিটির সদস্য হিসেবে উমেদপুর গ্রামে হামলা, অগ্নি-সংযোগ এবং বিশাবালী হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়ার জন্য দোষী সাব্যস্ত করছি।  এ অভিযোগে অন্য রাজাকাররা বিশাবালীকে হত্যা করে। আর সাঈদী ওই হত্যাকাণ্ডের সহযোগী ছিলেন। প্রধান আসামি ছিল অন্য রাজাকার। প্রসিকিউশন তাকে বিচারের আওতায় আনতে পারেনি। এমনকি তার নামও সনাক্ত করতে পারেনি।

“এটা সত্য যে উভয় অপরাধই জঘন্য। কিন্তু মূল অপরাধীর অনুপস্থিতিতে সহযোগীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায় না। মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে দেখা হয় যে, অভিযুক্তকে যেজন্য সাজা দেওয়া হচ্ছে তা নির্মম ও নারকীয় কী না। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের ২০ (২) ধারা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী যেটা যৌক্তিক সে শাস্তি দেবে।”

তদন্তে গাফিলতি

তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতি তুলে ধরে রায়ে বলা হয়, “আমরা বেশ কয়েকটি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতি লক্ষ্য করেছি। তদন্ত কর্মকর্তা ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার অভিযোগের বিষয়ে মমতাজ বেগমের করা এজাহার সংগ্রহে কার্যকর চেষ্টা চালাননি। একইভাবে প্রসিকিউটরও কোনো পদক্ষেপ নেননি। মমতাজ বেগমের করা ওই এজাহার সত্য না মিথ্যা- প্রসিকিউটর তার তদন্ত করেনি।… প্রসিকিউশন দল শহীদের রক্ত নিয়ে জুয়া খেলতে পারে না।”

রায়ে বলা হয়, সরকার জনমতের দিকে তাকিয়ে এই বিচারের ঝুঁকি নিয়েছে। কর্মকর্তসহ এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট, তাদের ঝুঁকির জন্য সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। প্রসিকিউটরদের দায়িত্ব ছিল যথাযথ আইনি সাক্ষ্য সংগ্রহ করা, এতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন।

তদন্ত সংস্থার ব্যর্থতা নিয়ে রায়ে বলা হয়, তদন্ত সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অযোগ্য তদন্ত কর্মকর্তাকে এ ধরনের তদন্ত কাজে রাখা ঠিক হবে না। অন্য মামলায় এ ধরনের ক্ষতি এড়াতে এমন কর্মকর্তাদের অবিলম্বে বাদ দেওয়া উচিৎ। তা না হলে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের মতো জঘন্যতম অপরাধের সঙ্গে জড়িতরা সুবিধা নেবে।

ভিন্নমত

বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞার লেখা রায়ে বলা হয়, আসামিপক্ষের দাবি অনুযায়ী অপরাধ সংগঠনের স্থানে ও ঘটনার সময় আসামি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। ১৯৭১ সালের মধ্য জুলাইয়ের পূর্ব পর্যন্ত সাঈদী যশোরের বাঘারপাড়া থানার দোহাখোলা গ্রামের রওশন আলীর বাড়িতে ছিল। অন্যদিকে প্রসিকিউশন বলেছে, আসামি রাজাকার ছিলেন এবং দিনি একাত্তরে ওইসব অপরাধ করেছেন।

“আসামি ঘটনাস্থলে ছিলেন, রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন- এটা প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে।… আসামির আপিল মঞ্জুর করা হলো, রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করা হলো।”

অন্যদিকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচলিত সাজা সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা তুলে ধরে বিচারপতি এ এইচ শাসুদ্দিন চৌধুরী তার রায়ে বলেন, একমাত্র ফাঁসিই হবে এ আসামির উপযুক্ত শাস্তি।

“সাঈদী যে অপরাধের অংশীদার ছিলেন, সেসব অপরাধ ১৯৭১ সাল এবং পরবর্তীতে বিশ্ব বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এটা প্রমাণিত যে,  সাঈদী ও তার পরিবারের লোকদের ভয়ে বহু লোক সাক্ষ্য দিতে আসেননি, বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছেন। তার মতো একজন জঘন্য কুলাঙ্গারকে বাঁচিয়ে রাখার অর্থ হবে তার এবং তার পরিবারকে আবার এ ধরনের অপরাধ করার সুযোগ করে দেওয়া।”

‘দেইল্লা  রাজাকার’

মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে একাত্তরে জামায়াত নেতা সাঈদীকে পিরোজপুরের মানুষ চিনত ‘দেইল্লা  রাজাকার’ নামে। তিনি যে রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় অংশ নিয়েছেন, তা উঠে এসেছে এ মামলার বিচারে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুরে হত্যা, লুণ্ঠনসহ বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার করা হয় পিরোজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য সাঈদীকে। ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয় তার।

২০১৩ সালে ট্রাইব্যুনালে তার ফাঁসির রায় এলে দেশজুড়ে সহিংসতা চালায় জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। ওই তাণ্ডবে প্রথম তিন দিনেই নিহত হন অন্তত ৭০ জন। এছাড়া বহু গাড়ি-দোকানপাট ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের মন্দির-ঘরবাড়ি ভাংচুর করা হয়।

বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালে বাংলাদেশের ক্ষমতায় এলে সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায় ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নির্যাতনকারী হিসেবে ২৬ হাজার ৩৫২ জনকে চিহ্নিত করে, যে তালিকায় সাঈদীর নামও আসে।

জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ‘মাওলানা সাঈদী’ সমাদৃত একজন ‘সুবক্তা’ হিসেবে, যদিও তার সেসব ওয়াজে নারী ও প্রগতি বিদ্বেষী বিভিন্ন বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক শিক্ষার্থী তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অংশ হিসেবে করা এক গবেষণায় দেখান, জামায়াত নেতা সাঈদী ওয়াজের একটি বড় অংশজুড়ে নারীদের নিয়ে বিভিন্ন চটকদার মন্তব্য থাকত, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল পুরুষদের তার মতাদর্শে আকৃষ্ট করা।

৭৪ বছর বয়সী সাঈদী বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। ২০১০ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই তিনি কারাবন্দি। তবে এর মধ্যে মা ও ছেলের মৃত্যুর পর দুই দফায় কয়েক ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন।