ভূমিরক্ষা আন্দোলনে চাঁন্দপুর চা বাগানের শ্রমিকরা

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চাঁন্দপুর  চা বাগানের নামে ইজারা নেওয়া জমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার উদ্যোগের প্রতিবাদে ‘ভূমিরক্ষা আন্দোলন’ শুরু করেছেন ১৬ হাজার শ্রমিক।

ফায়হাম ইবনে শরীফ, হবিগঞ্জ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2015, 06:22 AM
Updated : 25 Dec 2015, 06:22 AM

গত ২০ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকরা বলেছেন, সাত দিনের মধ্যে তাদের দাবি মেনে না নিলে তারা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন। 

সরকার গতবছর দেশের ১০০টি স্থানে  ‘স্পেশাল ইকোনোমিক জোন’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়ার পর চাঁন্দপুরের ৫১১.৮৩ একর জমি ‘ফিরিয়ে নিয়ে’ শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করে ‘বাংলাদেশ ইকোনোমিক জোন অথরিটি’ - বেজা।

প্রায় দেড়শ বছর ধরে স্থানীয়দের কৃষিকাজে ব্যবহৃত ওই জমিতে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা গণমাধ্যমে জানতে পেরে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু করেন  ‘ডানকান ব্রাদার্স’ এর ওই চা বাগানের শ্রমিকরা।

এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ১ ডিসেম্বর গঠিত হয়  ‘ভূমিরক্ষা কমিটি’। কিন্তু ১২ ডিসেম্বর ওই জমিতে খুঁটি গেড়ে শিল্পাঞ্চলের জন্য ‘দখল নেওয়ার কথা জানানো হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষ থেকে। 

এই প্রেক্ষাপটে চাঁন্দপুর বাগান ও চাঁন্দপুর ফাঁড়ির অন্তর্ভুক্ত বেগমখান, জোয়ালভাঙা ও রামগঙ্গা চা বাগানের শ্রমিকেরা ১৩ ডিসেম্বর সকাল থেকে ওই জমিতে অবস্থান নেন, শুরু হয় কর্মবিরতি।

ওই এলাকার ‘লস্করপুর ভ্যালির’ ২৩টি চা বাগানের শ্রমিকরা ১৯ ডিসেম্বর কর্মবিরতিতে যোগ দেন। পরদিন হবিগঞ্জ সদরে হয় বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ।

আন্দোলন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক কাঞ্চন পাত্র বলেন, “আমাদের মূল দাবি, এই জমি নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই জমি ভোগ করে আসছি। তাই বসতবাড়িসহ এই ক্ষেতল্যান্ড আমাদের নামে রেজিস্ট্রি করে দিতে হবে।”

চা শ্রমিকদের এই নেতা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তাদের ভূমির অধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০১২ সালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে একই দাবি জানিয়ে এসেছিলেন চা শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধিদল।

“আর সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলবার জন্য আবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি আবেদনপত্র পাঠিয়েছি।”

চা বাগানে ঘুরে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা সরকারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে নন। কিন্তু মাত্র ৬৯ টাকা দৈনিক মজুরি নিয়ে শিক্ষা, বাসস্থান ও চিকিৎসার মত সেবা থেকে ‘প্রায়’ বঞ্চিত এই জনগোষ্ঠী তাদের এই ভূমির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

এ জমির বদলে চুনারুঘাটের অন্য পতিত জমিতে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার দাবি জানান ভূমি আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব নৃপেণ পাল।

তিনি বলেন, “স্মারকলিপিতে সাতদিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে।… এই সময়ের মাঝে দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব আমরা।”

শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে চুনারুঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুল কবির বলেন, ১৯৭২ সালে এই চা বাগানগুলোর জমি ইজারা দেওয়া হয়। ওই জমিতে চা চাষ করার কথা থাকলেও, ইজারাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটি পুরো জমিতে তা করছে না। বরং ওই জমির একটি অংশ মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতে শ্রমিকদের ব্যবহার করতে দিয়েছে তারা।

“জমিগুলো মূলত নিচু ও অনাবাদি। গত কয়েক বছরে অল্প আবাদ হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই এ জমি বাইরের মানুষদের নিয়ে বর্গা চাষ করায় চা শ্রমিকরা। আর ইকোনোমিক জোন হলে যে তারাও লাভবান হবে- এ কথা কোনো এক কারণে তারা বুঝতে পারছেন না।”