গত ৩০ নভেম্বর এই অভিযোগপত্র দাখিল করা হলেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রেজাউস সাদিক বৃহস্পতিবার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “তদন্তে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাসরিন আখতার রেশমার সঙ্গে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরেই অধ্যাপক শফিউলকে হত্যা করা হয়েছে।”
গত বছর ১৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় নিজের বাসার সামনে সন্ত্রাসী হামলায় খুন হন লালনভক্ত শফিউল। এর এক বছরের বেশি সময় পর অভিযোগপত্র দিল পুলিশ।
আসামিরা হলেন- জেলা যুবদলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি আব্দুস সামাদ পিন্টু, তার স্ত্রী নাসরিন আখতার রেশমা, পৌর যুবদলের নেতা আরিফুল ইসলাম মানিক, মুদি দোকানি সিরাজুল ইসলাম ওরফে কালু, মো. সবুজ শেখ, আল মামুন, আরিফ, সাগর, জিন্নাত আলী ও ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক ইব্রাহিম খলিল ওরফে টোকাই বাবু।
ওই হত্যাকাণ্ডের পাঁচ ঘণ্টা পর আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২ নামে একটি ফেইসবুক পৃষ্ঠা খুলে তাতে দায় স্বীকারের বার্তা দেওয়া হয়েছিল। তবে তদন্ত কর্মকর্তা তার প্রতিবেদনে বলেছেন, ‘তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই’ তা করা হয়েছিল।
ঘটনার পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এন্তাজুল হক বাদী হয়ে মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোনো জঙ্গি সংগঠন এর পেছনে জড়িত থাকতে পারে।
নিহতের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেও জোর দিয়ে বলেন, মতাদর্শিক অবস্থানের কারণে তার বাবাকে জঙ্গিরাই হত্যা করেছে। প্রাথমিক তদন্ত শুরুর পর ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
সে সময় এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব বলে, পিন্টুর স্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাসরিন আখতার রেশমার সঙ্গে অধ্যাপক শফিউল ‘অসৌজন্যমূলক আচরণ’ করেন, যার জের ধরে উজ্জ্বলের ‘পরিকল্পনায়’ ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
মতিহার থানার তখনকার ওসি আলমগীর হোসেন প্রথমে এ মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকলেও পরে তা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
চলতি বছর মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন মেহেরচণ্ডি এলাকার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে রেশমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ মামলার আসামি আরিফ, সাগর, জিন্নাত আলীও গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে।
তবে পুলিশ যাকে ওই হত্যাকাণ্ডের ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ বলছে, সেই উজ্জ্বল এখনও পলাতক।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নীলুফার সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সহকর্মীর হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমরা খুবই হতাশায় ভুগছিলাম। অবশেষ যে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, তাতে আমরা আশা ফিরে পেয়েছি।”
এখন সুষ্ঠুভাবে এই বিচার শেষ করে হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।