যমুনার বাবুলের বিরুদ্ধে এনবিআরের জিডি

যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল ও তার মালিকানাধীন যুগান্তর পত্রিকার সাংবাদিক হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড - এনবিআর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2015, 01:53 PM
Updated : 9 Dec 2015, 08:17 PM

রমনা মডেল থানার ওসি মশিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (বোর্ড প্রশাসন-১) এ এইচ এম আবদুল করিম বুধবার সন্ধ্যায় এই জিডি করেন।

এনবিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বুধবার চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ বোর্ড সভায়  জিডি করার এ সিদ্ধান্ত হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বাবুলের প্রতিষ্ঠান যমুনা গ্রুপকে ‘বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি প্রদানকারী’ প্রতিষ্ঠান বলা হয়েছে। বাবুলের মালিকানাধীন দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনের বিরুদ্ধে ‘অমার্জিত, শিষ্টাচারবিবর্জিত, মানহানিকর, বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্যসম্বলিত ধারাবাহিক প্রতিশোধপরায়ণমূলক’ প্রতিবেদন প্রকাশের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যানকে উদ্ধৃত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “রাষ্ট্রের জন্য রাজস্ব আহরণকারী প্রতিষ্ঠান এনবিআর যদি সঠিকভাবে কাজ করতে না পারে তাহলে দেশের অগ্রগতি হবে না। এনবিআর এর উপর আক্রমণ হলে তা দেশের উপর আক্রমণের শামিল।”

অন্যদিকে এনবিআরের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বাবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনি (নজিবুর রহমান) তো একটা পাগল। কার কাছ থেকে কি ইনফরমেশন পেয়ে বলছে, যমুনা গ্রুপ রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।”

এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সভায় উপস্থিত সদস্যরা মতামত দেন যে, পত্রিকাটির এসব কার্যক্রম এনবিআর তথা সরকারের সার্বিক রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যর্থ করার লক্ষ্যে একটি সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত ও দুরভিসন্ধিমূলক কৌশল; যা প্রতিহত করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”

নজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ‘দুরভিসন্ধিমূলকভাবে’ দৈনিক যুগান্তরে ধারাবাহিকভাবে সাতটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এ ধরনের মিথ্যা ও অপপ্রচারের মাধ্যমে এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি এবং এনবিআর ও এর চেয়ারম্যানকে হেয় করার হীন উদ্দেশ্য নিহিত আছে। এমতাবস্থায়, উক্ত পত্রিকার এ ধরনের অপতৎপরতা বন্ধ করার জন্য উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে জিডি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”

সভায় যমুনা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব অনিয়মের একটি চিত্র তুলে ধরা হয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এনবিআর চেয়ারম্যানকে উদ্ধৃত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “অসৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বার্থ হাসিলের জন্য যমুনা গ্রুপের যুগান্তর পত্রিকার সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন বিভিন্নভাবে আমাদের সহকর্মী ও পরিবার পরিজনদের নিয়ে নানা বিভ্রান্তিকর সংবাদ ধারাবাহিকভাবে পরিবেশন করে আসছেন।

“এ অপতৎপরতার বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হবে উত্তপ্ত লোহার মতো। সৎ লোক ধরলে ফুলের মতো অনুভব হবে, অসৎ লোক ধরলে আগুনে হাত পুড়ে যাবে।”

এনবিআরের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে যমুনার চেয়ারম্যান বাবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার গ্রুপের যত কোম্পানি আছে সব ‘জে’ দিয়ে বা যমুনা দিয়ে। শুধু আমার ছেলের নামে আছে শামীম স্পিনিং। উনি পাগলামি শুরু করেছেন ভুয়া কোম্পানি নিয়ে।”

বাবুল বলছেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর তিনি খোলা চিঠি লিখবেন, যা পত্রিকায় আসবে।

নজিবুর রহমানের এনবিআর চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেওয়ার সময়ের এক সংবাদ সম্মেলনের প্রসঙ্গ তুলে নুরুল ইসলাম বাবুল বলেন, “সেই সংবাদ সম্মেলনে আমার যুগান্তরের একজন সাংবাদিক তাকে কিছু প্রশ্ন করে, যাতে তিনি ক্ষুদ্ধ হন।

“এরপর তিনি (নজিবুর) আমাকে চায়ের দাওয়াত দেন। ... ....। এনবিআর চেয়ারম্যান আমার অনেক প্রশংসা করলেন। আমিও তাকে উৎসাহিত করলাম। বললাম, আমরা ব্যবসায়ী, আমাদের সাথে আপনাদের সুসম্পর্ক থাকবে সেটা আশা করি।”

বাবুলের অভিযোগ, ওই সময় এনবিআর চেয়ারম্যান যুগান্তরের প্রতিবেদক হেলালের প্রসঙ্গ তুলে তার চাকরি ‘খেয়ে দিতে বলেন’।

“আমি তাকে হেলালের হয়ে সরি বললাম, আরও বললাম সে আর এ ধরনের কিছু করবে না।

“কিন্তু উনি তাতে রাজি না। আমি তাকে বললাম হেলাল সিনিয়র সাংবাদিক, তাকে চাকরিচ্যুত করলে সাংবাদিক সমাজে আমার সম্পর্কে খারাপ ধারণা যাবে। এছাড়া সে যুগান্তরে চাকরি না করলেও অন্য কোথাও করবে। তাতে আপনার লাভ হবে না, বরং যুগান্তরে থাকলে আপনার অসুবিধা করবে না।

“কিন্তু তিনি আমার কথা বুঝলেন না। এরপর হেলালের ব্যাংক হিসাব তলব করলেন। আমার, আমার স্ত্রী, সন্তানদের ব্যাংক হিসাবও তলব করেছেন। যেরকম ওয়ান ইলেভেনের সময় করেছিল। উনি একটা পাগল, সেই পাগলামি শুরু করেছেন,” বলেন বাবুল

তিনি ‘চ্যালেঞ্জ’ করেন, যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনে এনবিআর নিয়ে যেসব প্রতিবেদন হয়েছে তার ‘সব সত্য’। একটাও মিথ্যা প্রমাণ করা যাবে না।

এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর কারও মাধ্যমে ‘প্ররোচিত হয়ে এসব পাগলামি করছেন’ বলেও মন্তব্য করেন বাবুল।