নিজামীর মৃত্যুদণ্ড বহাল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড বহালের পক্ষে বক্তব্য দিয়ে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2015, 04:31 AM
Updated : 7 Dec 2015, 12:02 PM

সোমবার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ দশম দিনের মতো এ মামলা শোনে। মঙ্গলবার আসামিপক্ষের জবাব দেওয়ার কথা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসা ষষ্ঠ মামলা এটি, যার ওপর শুনানি চলছে।

এর আগে নবম দিনের শুনানিতে ২ ডিসেম্বর আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন শেষ করে।

ওইদিন নিজামীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন দাবি করেন, আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ যে সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করেছে তাতে জামায়াত আমিরের অপরাধ “প্রমাণিত হয় না”।

“অনেকগুলো অভিযোগের কোনোটিতে যদি মনে হয়, অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে, সেক্ষেত্রেও বয়স ও স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করে তিনি লঘু দণ্ড পাওয়ার যোগ্য।”

আদালতে সোমবার রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল মুরাদ রেজা, মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

অন্যদিকে নিজামীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, এস এম শাজাহান ও শিশির মনির।

রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি

আদালত থেকে বেরিয়ে অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, চারটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল আসামির মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। তা বহাল রাখতে তিনি যুক্তি দিয়েছেন।

“২, ৪ ও ৬ নম্বর অভিযোগে সাক্ষীরা বলেছেন নিজামীর উপস্থিতির কথা। আর ১৬ নম্বর অভিযোগে হচ্ছে বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগ। এই বুদ্ধিজীবী হত্যার ব্যাপারে আমি বলেছি, শুধু বুদ্ধিজীবীর পরিবারগুলো বিচারপ্রার্থী নয়, সারাদেশের মানুষ আজ বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার প্রার্থী। তারা সবাই ন্যায় বিচার চায়।

“এ অপরাধের ন্যায়বিচার একভাবেই হতে পারে- তা হল এই আসামির মৃত্যুদণ্ড দেওয়া। যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালে, সেটা বহাল রাখা।”

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নাৎসি নেতা হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিজের হাতে কাউকে মেরেছেন এমন কোনো সাক্ষ্য কেউ দেয়নি। কিন্তু এক বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিধন করার পরিকল্পনা তার ছিল।

“একইভাবে আল বদরের পরিকল্পনা ছিল- যারা স্বাধীনতার কথা বলে, যারা বাংলাদেশের কথা বলে এবং মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে তাদের নিধন করা। …উনি (নিজামী) যখন ছাত্র সংঘের সভাপতি তখনই আল বদরের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটাও আসামিপক্ষ স্বীকার করে নিয়েছে- আল বদর বাহিনী গঠিত হয়েছিল জামায়তে ইসলামীর কর্মীদের দ্বারা।”

নিজামী অপরাধের ঘটনাস্থলে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন না- আসামিপক্ষের এমন যুক্তির বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “মুজাহিদ ও ভারতের ইয়াকুব মেমনের রায় উল্লেখ করেছি। যদিও ইয়াকুব মেমন নিজে হাতে কাউকে মারেননি। নিজে হাতে বোমা ফাটাননি। যেহেতু মেমন ষড়যন্ত্রে ছিলেন, এজন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।”

বুদ্ধিজীবী গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, সম্পত্তি ধ্বংস, দেশত্যাগে বাধ্য করা, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সংঘটনে সহযোগিতার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল।

জামায়াতে ইসলামীর আমির নিজামী একাত্তরে ছিলেন দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নাজিমে আলা বা সভাপতি এবং সেই সূত্রে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত আল বদর বাহিনীর প্রধান।

স্বাধীনতাকামী বাঙলির ওপর দমন-পীড়ন চালাতে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটিতেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উঠে আসে।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৩ নভেম্বর সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন নিজামী। ছয় হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার নথিপত্রসহ নিজামীর করা আপিলে ১৬৮টি যুক্তি তুলে ধরে সাজার আদেশ বাতিল করে খালাস চাওয়া হয়। সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ায় রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেনি রাষ্ট্রপক্ষ। এই আপিলের ওপর চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর শুনানি শুরু হয়।