প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আচরণবিধি সংশোধন বা ভোট পেছানো- কোনোটাই এ মুহূর্তে সম্ভব না।
দেশের প্রধান তিনটি দল রোববার নির্বাচন কমিশনে এসে তাদের দাবিগুলো সিইসির সামনে তুলে ধরেছিলেন। সোমবার চার নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে সেসব দাবি ও প্রস্তাব নিয়ে বৈঠক করেন সিইসি।
সন্ধ্যায় শেরেবাংলা নগরে ইসি কার্যালয় থেকে বের হওয়ার আগে কাজী রকিব সাংবাদিকদের বলেন, “সংসদ সদস্যদের প্রচারে যেতে দিতে বিধি সংশোধনের দাবি এসেছে। আমরা আলোচনা করে দেখেছি, তফসিল ঘোষণার পর এ পর্যায়ে কোনো সংশোধনী সমীচীন হবে না।”
ভোট পেছানোর দাবির বিষয়ে সিইসি বলেন, আইন-বিধি সংশোধনের পর খুব স্বল্প সময় হাতে নিয়ে তফসিল ঘোষণা হয়েছে। এখন তা পেছানোও সম্ভব না।
“যদি ২০ ডিসেম্বর ভোটের সময় রেখে তফসিল করা যেত, তখনও পেছানোর সুযোগ থাকত। শেষ সময়ে এসে তফসিল দিতে গিয়ে ৩০ ডিসেম্বরে ভোটের তারিখ রেখে পর্যাপ্ত সময় রাখা হয়েছে। এরপরও একদিন পেছানো যায় কিনা যাচাই করে দেখেছি- সে সুযোগও নেই,” বলেন কাজী রকিব।
প্রধান তিন দল ছাড়াও কয়েকটি দল প্রস্তাবক-সমর্থকসহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে ইসির কাছে সুপারিশ রেখেছিল। ইসির পর্যালোচনায় সেগুলোও নাকচ হয়েছে।
শেষ সময়ে এসে ‘আর কিছু সংশোধন সম্ভব নয়’ বলে জানান সিইসি।
ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৬ পৌরসভায় ভোট হবে, যাতে প্রথমবারের মতো মেয়র পদে নির্বাচন হবে দলীয় মনোনয়নে, দলীয় প্রতীকে।
অবশ্য কাউন্সিলর পদের ভোট আগের মতোই নির্দলীয়ভাবে হবে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে।
৫ ও ৬ ডিসেম্বর মনোনয়ন বাছাই, প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৩ ডিসেম্বর।
সংশোধন ‘তোলা থাক’
বিদ্যমান আইন ও বিধিতে নানা অসঙ্গতির অভিযোগ এবং দলগুলোর দাবি ভবিষ্যতে পর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যমান আচরণবিধি অনুযায়ী প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে যেতে পারেন কিনা জানতে চাইলে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি সিইসি কাজী রকিব।
‘সরাসরি’ কোনো উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, “এটা তো আইনেই বলা রয়েছে।”
বিদ্যমান আচরণবিধিতে দলীয় প্রধানদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারের সুযোগ রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে দলীয় প্রধানের প্রচারে হেলিকপ্টার পর্যন্ত ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, উপনেতা, মন্ত্রীসহ সম পর্যায়ের সুবিধাভোগী ব্যক্তি, এমপি ও সিটি মেয়রদের ক্ষেত্রে পৌর নির্বাচনের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আইনে।
এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হয়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদকে প্রচারে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে বিধি নিষেধে পড়তে হতে পারে।
অবশ্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সে ধরনের কোনো পদে না থাকায় এখন বিধি নিষেধের বাইরে থাকবেন।
এক দলের শীর্ষ নেতা প্রচারে যাবেন, অন্যজন যেতে পারবেন না- এ ধরনের ‘অসম’ আচরণবিধি ‘ইসির ভুলে হয়েছে’ বলে মনে করেন না সিইসি।
তিনি বলেন, “এটা তো ভুল না, এটা একটা বিষয়ের পরিমাপ করা। এটাই তো (এ নির্বাচন) শেষ না! আমরা অভিজ্ঞতা নেব। যদি দেখি কোনোটা সঠিক হচ্ছে না; সামনে অন্য নির্বাচন রয়েছে। তাতে এগুলোকে শুধরানোর ব্যবস্থা করব।”