মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রোববার রাতে বিমানবন্দর ও খিলগাঁও এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন- ইদ্রীস শেখ, মো. মকবুল শরিফ, মো. সালাম ও মো. মোস্তফা জামান।
চারজনের কাছ থেকে জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত ২৬টি বই, তিনটি পাসপোর্ট, পাকিস্তানী চার হাজার রুপি, ভারতীয় পণ্যসামগ্রী, বাহারাইনের ১৩শ ডলার, জর্ডানের ১৬শ ডলার উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা।
সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, ইদ্রীস ও মকবুলের পাকিস্তানী পাসপোর্ট রয়েছে। তারা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে নিয়মিত যাতায়াত করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক চারজন জেএমবির সদস্য বলে স্বীকার করেছেন জানিয়ে মনিরুল বলেন, “বাংলাদেশে জেএমবিকে পুনরায় সক্রিয় করা এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা সৃষ্টির জন্য তারা সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করে আসছে বলে তারা স্বীকার করেছে।”
তারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যার পরিকল্পনাও করছিলেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
গ্রেপ্তারদের কাছে পাওয়া পাঁচটি মোবাইলের মধ্যে ইদ্রীসেরটি ‘স্পাই মোবাইল’ উল্লেখ করে মনিরুল বলেন, “এটা দিয়ে সে দেশের বাইরে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং তথ্য আদান-প্রদান করত। একটি হাই কমিশনের নারী কর্মকর্তার সঙ্গেও তারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখত।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইদ্রীস ১৯৮৫ সালে ভারত হয়ে পাকিস্তান যান। সেখানে ১৯৯০ সালে পাকিস্তানী এক নারীকে বিয়ে করে বসবাস শুরু করেন। পরে ২০০২ সালে দেশটির ‘পাক-মুসলিম অ্যালায়েন্স’ নামে একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে একাই ফেরত এসে জেএমবির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।
ইদ্রীস গত দুই বছরে ৪৮ বার পাকিস্তান গেছেন বলে তার পাসপোর্ট থেকে জানা গেছে, বলেন পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল।
মকবুলও ১৯৮৫ সালে পাকিস্তান যান এবং নিয়মিত বাংলাদেশ-পাকিস্তান যাতায়াত করতেন। কাপড়ের ব্যবসার আড়ালে পাকিস্তানে জেএমবির সঙ্গে সক্রিয় মকবুল জঙ্গি সংগঠনকে অর্থায়নও করেন।
গ্রেপ্তার সালামও নিয়মিত পাকিস্তান যাতায়াত করেন। এছাড়া মোস্তফা ‘পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের’ ‘অ্যাসিসটেন্ট ট্রাফিক ইন্সপেক্টর’ বলে জানান মনিরুল।
চারজনই ভারতীয় ও পাকস্তানী জাল মুদ্রা পাচারে জড়িত বলেও মনিরুল ইসলাম জানান।
আটকদের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় দুইটি এবং খিলগাঁও থানায় একটি মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ত্রিশালে আসামি ছিনতাই, সাভারে ব্যাংক ডাকাতি এবং সম্প্রতি হোসাইনী দালানে বোমা হামলা ও আশুলিয়ায় পুলিশ হত্যার ঘটনায় জেএমবি জঙ্গিদের জড়িত থাকার বিষয়টি পুলিশের পক্ষ থেকে জোরেশোরে বলা হচ্ছে।
গত বুধবার রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে সন্দেহভাজন এক জেএমবি সদস্য নিহত হওয়ার পর সংগঠনটির আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ।
পুলিশের দাবি, বন্দুকযুদ্ধে নিহত আল বাণী ওরফে মাহফুজ ওরফে হোজ্জা ভাইসহ গ্রেপ্তাররা ওইসব হামলায় অংশ নিয়েছে অথবা সহযোগিতা করেছে।
নিহত হোজ্জা ভাইকে জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান হিসাবে পরিচয় দিয়েছে পুলিশ।