‘লেখনী-গানেই বেঁচে থাকবেন হুমায়ূন’

হুমায়ূন আহমেদ তার সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে বাঙালির মাঝে যুগ-যুগ ‘বেঁচে থাকবেন’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2015, 08:23 PM
Updated : 27 Nov 2015, 08:23 PM

প্রয়াত এই লেখকের ৬৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার জাতীয় জাদুঘরে তার স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

তিনি বলেন, “কখনও উপন্যাস, কখনও গল্প, কখনও নাটক কিংবা গানে হুমায়ূন আহমেদ ঠাঁই করে নিয়েছেন অগণিত ভক্ত-পাঠকের আঁখিপল্লবে, নিপুণ দক্ষতায় আসন গড়েছেন তাদের হৃদয়ে। নিজের সৃষ্টিকর্মে এভাবেই যুগে-যুগে বেঁচে থাকবেন বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ।”

সভায় হুমায়ূন আহমেদের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হক, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম, হুমায়ূনপত্নী অভিনেত্রী-পরিচালক মেহের আফরোজ শাওন। স্মৃতিচারণায় যোগ দেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী।

হুমায়ূন আহমেদের লেখায় বাংলার রূপবৈচিত্র্য ও বাঙালির অর্জনের নানা দিক উঠে এসেছে বলে মনে করেন ফয়জুল লতিফ চৌধুরী।

তিনি বলেন, “হুমায়ূন আহমেদ আসলে কত বড় মাপের লেখক তা আজও সুরাহা হয়নি। আমাদের আক্ষেপ, জীবদ্দশায় আমরা হুমায়ূন আহমেদকে মোটেই মূল্যায়ন করতে পারিনি।”

আনিসুল হকের মতে, হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে ‘জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ লেখক’।

তিনি বলেন, “গত ৪ দশক ধরে হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তা সেই যে চূড়ায় উঠতেই লাগল আর নামল না। হুমায়ূন আহমেদ তার গল্প, নাটক, উপন্যাসে বাস্তব ঘটনার পাশাপাশি হাস্যরস তুলে ধরেছেন। যাপিত জীবনের সুখ-দুঃখ দক্ষতায় তার সাহিত্যের উপাদান হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আবার গুরুগম্ভীর বক্তব্যের পাশাপাশি তার হাস্যরস, রসাত্মক বক্তব্যে পাঠক, দর্শক আনন্দিত হয়েছে।”

দৈনিক কালের কণ্ঠ সম্পাদক কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, “হুমায়ূন আহমেদ এতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন, এক পর্যায়ে তো প্রকাশনা সংস্থাগুলো একজন লেখক কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছিল।”

হুমায়ূন আহমেদের ‘মধ্যাহ্ন’ উপন্যাসে পরাবাস্তবতার উদাহরণ টেনে ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’ চরিত্রগুলোর নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন মিলন।

এছাড়া লেখকের ‘মাতাল হাওয়া’, ‘১৯৭১’, ‘গৌরিপুর জংশন’, ‘বাদশাহ নামদার’ উপন্যাসগুলো নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।

হুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের নানা গল্প বলার পাশাপাশি কিভাবে তিনি চিত্রশিল্পী হয়ে উঠেছিলেন সেই গল্প শোনালেন তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন।

শাওন বলেন, “হুমায়ূন আহমেদ মানুষ হিসেবে অত্যন্ত সফল। হুমায়ূন আহমেদকে যারা চেনেন, ক্ষণিকের মুহূ্র্তের জন্য তার সঙ্গে মিশেছেন যারা, তারা আজীবন হুমায়ূনের গল্প করবেন তাদের ছেলেমেয়েদের কাছে। এভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বেঁচে থাকবেন হুমায়ূন।”

সভাপতির ভাষণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “হুমায়ূন আহমেদ নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার উপন্যাসের মাধ্যমে পাঠকপ্রিয় হয়ে উঠেন। পরে তিনি ‘মিসির আলী’, ‘হিমু’, ‘শুভ্র’ ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গ্রন্থের মাধ্যমে সব শ্রেণির পাঠকের মনযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছেছেন।

“তার অসাধারণ বর্ণনা, কাহিনীর বিস্তৃতি পাঠককে সহজে কাছে টানে। হুমায়ূন হয়ে ওঠেন সকলের প্রিয় মানুষ।”

হুমায়ূন আহমেদের লেখনী  ও গান বাংলাদেশের মানুষের মাঝে তাকে যুগের পর যুগ বাঁচিয়ে রাখবে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

স্মৃতিচারণ সভা শেষে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ২৩ নম্বর গ্যালারিতে হুমায়ূন আহমেদ রচিত বই, পেইন্টিং, আলোকচিত্র এবং স্মৃতিস্মারক নিয়ে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।

প্রদর্শনী দেখতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিজানুর রহমান বললেন, “হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আমার সংযোগ গল্প-উপন্যাস আর চলচ্চিত্রে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনও তার কাছে পৌঁছাতে পারিনি। প্রদর্শনীতে তার পাণ্ডুলিপি ঠাঁই পেয়েছে। হুমায়ূন আহমেদের লেখনী দেখেছি ছাপার অক্ষরে। কিন্তু তার হাতের লেখনী দেখার এমন সৌভাগ্য হয়তো আর হবে না।”

বইমেলাতে ভিড় ঠেলে কতবার হুমায়ূন আহমেদের অটোগ্রাফ নিয়েছেন- সেই গল্প শোনান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লোপা আফরোজ।

লোপা বললেন, “হুমায়ূন আহমেদকে সরাসরি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তার উপন্যাস-গল্পের প্রায় সবগুলো আমাদের সংগ্রহে আছে। এই প্রদর্শনীতে এসে জানলাম, ব্যক্তি হুমায়ূনের নানা দিক নিয়ে।”

লোপা মনে করছেন, এমন আয়োজন ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে তার ভক্তদের সংযোগ আরও বাড়বে।