‘ফিউশনে ক্ষতবিক্ষত লোকসংগীত’

হালের সংগীত পরিচালকদের অনেকে লোকসংগীত নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে এর ক্ষতি করছেন বলে মন্তব্য করছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2015, 07:45 PM
Updated : 26 Nov 2015, 07:45 PM

বাংলা লোকসংগীতের পুরোধা কবি রাধারমণ দত্তের শততম তিরোধান দিবস উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী ‘রাধারমণ সঙ্গীত উৎসব’- এ তিনি একথা বলেন।

গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “ফিউশনের নামে নতুন কিছু করা হোক, তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু যে কালজয়ী গানগুলো বাংলা গানের শ্রোতাদের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে, আলাদা ধারা তৈরি করেছে, সেগুলো নিয়ে ফিউশন না করাই ভালো। ফিউশনের নামে লোকসংগীতকে তারা ক্ষতবিক্ষত করছেন।”

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি বলেন, “বাংলাদেশের লোকসংগীত নিয়ে খোদ শিল্পীদের মধ্যেই নানা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে।

“অনেকেই লোকগান গাইলেও জানেন না গানের প্রকৃত গীতিকার বা সুরকার কে। বহু পুরনো গানকে একেকজন একেকভাবে পরিবেশন করছেন। কথা ও সুর প্রসঙ্গে বলছেন তা সংগৃহীত। প্রকৃত গীতিকার ও সুরকারদের ব্যাপারে যদি না জানা যায়, সেই ভুলের খেসারত দেবে পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীরা।”

সম্প্রতি ফোক গান নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্টিভালের সমালোচনা করেছেন কুদ্দুছ। তার মতে, এ ধরনের উৎসব একান্তই ‘ব্যক্তি ও বাণিজ্যিক প্রচারের স্বার্থে’ করা হয়।

“এ ধরনের উৎসবে ফোক গান আসলে কতটা লাভবান হয়, তা নিয়ে আমি সন্দিহান। এ উৎসবে বাংলাদেশের প্রকৃত ফোক শিল্পীরা সুযোগ পেয়েছেন কি? বাংলাদেশের ফোক ধারা, ফোক বাদ্যযন্ত্রগুলো কি সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে? আমার মনে হয় না।”

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, “রাধারমণ ছিলেন বাংলার শিল্প সংস্কৃতির অন্যতম ধারক। তাকে ধারণ করার মধ্য দিয়ে আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলব।”

বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলকে ‘বিদেশি শাসন’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “বিদেশি শাসনামলে দেশীয় সংস্কৃতি নির্বাসনে গিয়েছিল। শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশ নিজের পরিচয়ে উদ্ভাসিত হচ্ছে।”

রাধারমণ গবেষক অধ্যাপক নন্দলাল বসুর গবেষণায় উঠে আসে রাধারমণ দত্তের কর্মময় জীবনের কথা। তার সাধন জীবন, বৈষ্ণব মতে দীক্ষাগ্রহণ, গান রচনা ও সুর দেওয়ার ইতিহাস, অন্তর্ধান রহস্য আর গানের নানা ধাঁচের কথা উঠে আসে তার বক্তব্যে।

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের এই অধ্যাপকের জানিয়েছেন রাধারমণের গান সংগ্রহের কথাও।

উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘রাধারমণ দত্তের অপ্রকাশিত গান’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

রাধারমণের গান পরিবেশন করেন শাহনাজ বেলী, অনিমা মুক্তি গোমেজ, বিশ্বজিৎ রায়, সন্দীপন, দিদারুল আলম, নারায়ণ চন্দ্র শীল, বদরুন্নেসা ডালিয়া, সরদার রহমতুল্লাহ, সৃজ্যোতি রায়, খায়রুল, সুপ্রিয়া, গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।

‘শ্যামকালিয়া সোনা বন্ধুরে’, ‘বিনোদিনী গো’, ‘আমার গলার হার’, ‘আমার বন্ধু দয়াময়, ‘নিশিতে জাগিয়া আকুল করিলাম’, ‘ওরে ও রসিক নাইয়া’, ‘আমি কি হেরিলাম কদমতলায় গো’,  ‘তোরে বানাইয়া রাই বিনোদিনী আমি হবো কালাচান’- রাধারমণের এসব গানে বৃহস্পতিবারের সন্ধ্যাটি মেতেছিল সুরের মূর্চ্ছনায়।

অনুষ্ঠানে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাঁশরিয়া, লোকাঙ্গণ, মন্দিরা শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীরা। রাধারমণের জনপ্রিয় গান ‘জলে গিয়াছিলাম সই’ গানটির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন স্পন্দনের শিল্পীরা।