যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্তদের কল্যাণে ব্যয়ের দাবি

যুদ্ধাপরাধীদের সব স্থাবর-অবস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত শহীদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করার দাবি জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2015, 01:06 PM
Updated : 26 Nov 2015, 01:06 PM

বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “আইসিটিতে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) দণ্ডিত মাবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী, সব দল ও বাহিনীর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে ‘ভিকটিমস কম্পেনসেশন অ্যাক্ট প্রণয়ন করতে হবে।”

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, সরকার মানবতাবিরোধী দণ্ডিতদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। তাদের আদর্শগত ও অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিতে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

এই দাবির পক্ষে আইনি ভিত্তি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, সংবিধানের ৪৭ (৩) ও ১০২ অনুচ্ছেদ তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের শতভাগ অনকূলে রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল, রুয়ান্ডা, যুগোস্লাভিয়া, সাবেক ইয়োগোস্লাভ ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের আইনের উল্লেখ করে তিনি।

সাবেক এই বিচারপতি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত না করলে তা সন্ত্রাস ও লবিস্ট নিয়োগে ব্যবহার করবে।

“জিয়ার বদৌলতে জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীরা সম্পদের পাহাড় গড়েছে। সাকা-মুজাহিদ বলে গেছে, তাদের অর্থের সাম্রাজ্য থেকে গেছে। এ সাম্রাজ্য ব্যয় হবে সন্ত্রাসী কাজে।”

সরকার তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করলে সংবিধান অনুযায়ী তারা রিট করার সুযোগ পাবে না বলেও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, “মানবাধিকারের অনেক সংস্থা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের অধিকারের কথা বলছে, কিন্তু শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিতদের অধিকারের কথা কেউ বলেন না।

“এখন আমরা তাদের অধিকারের কথা বলছি- যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে শহীদ ও নির্যাতিত পরিবারের কল্যাণে ব্যয় করা হোক।”

যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন ও আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা ব্যক্তি ও দলকে এবং খুনীদের পুরস্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় আনতে আইন প্রণয়নের দাবি জানান তিনি।

শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, “যুদ্ধাপরাধীরা সম্পদের পাহাড় গড়েছে, শহীদ পরিবারের সদস্য ও নির্যাতিতরা রিকশা চালায়, মানুষের বাসায় কাজ করে, ভিক্ষা করে- এটা হতে পারে না। অবস্থা পাল্টেছে, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিগ্রস্তদের কল্যাণে ব্যবহার করা হোক।”

যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব জুরিস্ট কানাডা শাখার সাবেক সভাপতি অ্যাটর্নি উইলিয়াম স্লোন যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে আন্তর্জাতিক আইনের প্রসঙ্গ টেনে সমর্থন জানান।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে রায় কার‌্যকর করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।

পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য দ্রুত আইসিটি আইন সংশোধনের দাবি জানান তিনি।

সাবেক বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের দণ্ডের পাশাপাশি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে আইসিটি আইনে সংশোধনী আনতে হবে। আগামীতে যাদের বিচার হবে তাদেরকে এ বিধানে যুক্ত করা যাবে।

“আদালতই সরাসরি দণ্ডের পাশাপাশি সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের সুযোগটি ব্যবহার করতে পারবে।”

যুদ্ধাপরাধীদের জন্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমা নয়

সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি বলেন, দণ্ডিতদের রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়ে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ এখন উদ্বেগের কারণ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলবে। এখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার রয়েছে। কিন্তু ক্ষমতার পালাবদল হলে যুদ্ধাপরাধীরা সে ক্ষমার সুযোগ নেবে।

দণ্ডিত অপরাধীদের জন্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমার সাংবিধানিক সুযোগ যাতে কখনো কোনো যুদ্ধাপরাধী না নিতে পারে সেজন্য দ্রুত আইসিটি আইন সংশোধনের দাবি জানান তিনি।

এজন্য বিদ্যমান আইসিটি আইনের ২০ ধারায় নতুন দফা যুক্ত করা বিষয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে তার সাম্প্রতিক এক আলোচনার প্রসঙ্গ টানেন তিনি।

“এক সেমিনারের ফাঁকে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ হয়েছে। সরকার যদি পরিবর্তন হয় রাষ্ট্রপতি ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করতে পারেন। এটা সংশোধন হওয়া দরকার বলে জানিয়েছি। মন্ত্রী বললেন, আপনারা একটা খসড়া জমা দেন।”

আইসিটির প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

“যুদ্ধাপরাধীরা রাষ্ট্রপতির ক্ষমার যোগ্য গণ্য হবে না বলে- আইসিটি আইনের ২০ ধারায় নতুন একটি দফা যুক্ত করে দিলে তারা ক্ষমা চাইতে পারবে না। মন্ত্রীর আশা, মার্চের মধ্যে এ সংশোধনী আসতে পারে।”