জলবায়ু: প্রতিশ্রুত অর্থ পেতে সম্মেলন বর্জনের চিন্তা

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলো ছয় বছর আগে যে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পেতে এবার উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নিয়ে জলবায়ু সম্মেলন বর্জনের পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2015, 01:29 PM
Updated : 25 Nov 2015, 05:12 PM

ঋণ নয়, অনুদান হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু তহবিলের অর্থ চাইবে বলেও পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জানিয়েছেন।

জলবায়ু ও পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন কপ-২১ সামনে রেখে বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী একথা জানান। আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলন হবে।

সংবাদ সম্মেলনে মঞ্জু বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়গুলো সম্মেলনে তুলে ধরা হবে।

“আমাদের যে অর্থ দেওয়া হবে তা অনুদান হতে হবে, কর্জ করতে হলে আমরা অন্য জায়গা থেকেও করতে পারি। আমরা চাইব যে অর্থ পাব সেটা গ্রান্ট হিসেবে আসতে হবে।

“এছাড়া ২০৫০ সাল নাগাদ উষ্ণায়নের মাত্রা এক দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলিসিয়াসের মধ্যে রাখতে হবে। এসব দাবি আদায়ে প্রয়োজনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নিয়ে ওয়াকআউট করতে হবে।”

২০০৯ সালে কোপেনহেগেন সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় জরুরি হিসেবে ২০১০-১২ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তিন হাজার কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় উন্নত দেশগুলো।

পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে ২০২০ সালের মধ্যে একটি তহবিল গঠনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন উৎস থেকে প্রতি বছর ১০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

তবে বাংলাদেশ এখনও ক্ষতিপূরণের কোনো অর্থ পায়নি জানিয়ে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, অনুদান হিসেবে নয়, সহজ শর্তে ঋণ হিসেবে ওই অর্থ পেলেও চলবে।

অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, “উনি যেটা বলেছেন সেটাই আমাদের আল্টিমেটলি গ্রহণ করতে হবে। আমরা এখানে আমাদের পলিসি স্ট্যান্ড করছি, এটা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক স্বাক্ষরিত।”

সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক একটি চুক্তির প্রস্তাব করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

পরিবেশমন্ত্রী বলেন, এসব বিষয়ে ইতোমধ্যেই ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে।

“উন্নয়নশীল বিশ্বের সবাই মিলেই বক্তব্য রাখার চেষ্টা করব। তবে এদের মধ্যে বিভাজনের ফলে আমরা অতি দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে পড়ে গিয়েছি।”

কার্বন নিঃসরণের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে পরিবেশগত বিপর্যয়ের শঙ্কা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “তাপমাত্রাজনিত কারণে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়বে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে শুধু বাংলাদেশেই নয়, ওয়াশিংটন ডিসি, ক্যালিফোর্নিয়াও আক্রান্ত হবে।”

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এই সম্মেলনে অংশ না নেওয়ায় ‍কিছুটা ব্যত্যয় ঘটবে স্বীকার করে মঞ্জু বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সব সময়ই যোগাযোগ রাখব। উনি গেলে সুবিধা হত।”

পরিবেশ ও বন সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি বিরাজমান।

“৩০ বছরের ট্রেন্ড পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে উষ্ণতা দশমিক ৬ সেন্টিমিটার থেকে ২ মিলিমিটার পর্যন্ত বেড়েছে।”

বাংলাদেশের উপকূলে চার কোটি মানুষ বাস করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “উপকূলের জনগণের উদ্বাস্তু হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সুন্দরবন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। উপকূলের জনগণের জীবন বিপন্ন হয়ে যেতে পারে।

“বৈষ্ণিক উষ্ণতা কমানো নিয়ে কথা না বললে আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হব। কারণ এর কোনো সীমাপরিসীমা নেই।”