শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান রাষ্ট্রপতির

দেশে শিক্ষার গুণগত মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এ খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2015, 11:10 AM
Updated : 25 Nov 2015, 11:27 AM

তিনি বলেছেন, “দেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেলেও এ কথা ঠিক যে, শিক্ষার গুণগতমান এখনও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছেনি। এ জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।”

বুধবার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তনে এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, “আমি শান্তিতে নোবেলজয়ী ভারতের সুপণ্ডিত কৈলাশ সতীর্থর একটি উক্তি উল্লেখ করতে চাই। তিনি বলেছেন, ‘শিক্ষায় বিনিয়োগের রিটার্ন নয়গুণ’। গুণগত শিক্ষার পাশাপাশি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ রির্টান অর্জন সম্ভব।”

শিক্ষকরা আদর্শ থেকে দূরে চলে গেলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে- একথা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য আবদুল হামিদ বলেন, “শিক্ষক যখন তার মহান আদর্শ থেকে দূরে চলে যান, তখন শিক্ষার্থীদের মধ্যে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে জ্ঞান অর্জন ও বিতরণে শিক্ষকমণ্ডলী নিবেদিত থাকবেন- জাতি তা প্রত্যাশা করে।

“তাই শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের মধ্যে শিক্ষকদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ না রেখে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানাই।”

গবেষণালব্ধ ফল সাধারণ মানুষের কল্যাণে ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটি সফল গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত জ্ঞান মানবজাতির অশেষ কল্যাণ বয়ে আনতে পারে।

“তবে গবেষণা যাতে আন্তর্জাতিক মানের হয় এবং জীবনমুখী ও মানবকল্যাণে নিবেদিত হয় সেদিকে সবিশেষ নজর দিতে হবে। গবেষণার ফল যাতে লাইব্রেরিতে বন্দি না থেকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজে লাগে তা নিশ্চিত করতে হবে।”

গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “গবেষণা নিরন্তন সাধনার বিষয় এবং তাতে প্রচুর অর্থেরও প্রয়োজন। আমি সরকার এবং বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা ও পরামর্শ প্রদানের আহ্বান জানাই।”

এসময় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা জোরদার করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

“খুলনা অঞ্চলে রয়েছে জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ ঐতিহ্যবাহী সুন্দরবন ও সামুদ্রিক সম্পদ সমৃদ্ধ বিশাল উপকূল। আমি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এ জীববৈচিত্র্য ও উপকূলীয় মূল্যবান সম্পদ বিষয়ে গবেষণা জোরদারের আহ্বান জানাই।”

সমাবর্তনে সনদপ্রাপ্তদের দেশের প্রতি দায়িত্ব পালনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “তোমাদের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক। সে প্রত্যাশা পূরণে তোমাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা ও সৃজনশীলতাকে জাতির বৃহত্তর কল্যাণে নিয়োজিত করতে হবে।

“মনে রাখতে হবে, ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের গর্বিত উত্তরসূরী তোমরা। মনে রাখবে, এ দেশ ও সমাজ আজ তোমাদের এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তাদের কাছে তোমরা ঋণী। তোমরা তোমাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা ও মনন দিয়ে দেশ মাতৃকার কল্যাণ করতে পারলে সে ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে।”

সমাবর্তনে চার হাজার ৫২৯ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সনদ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১৪ জনকে দেওয়া হয় স্বর্ণপদক।

সমাবর্তন বক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছাড়া অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান প্রমুখ।

এর আগে রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল’ উদ্বোধন করেন।