জাপানি নারী ‘হত্যা’ মামলায় পাঁচজন রিমান্ডে

ঢাকায় এক জাপানি নারীর ‘রহস্যজনক’ মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিন করে পুলিশ রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2015, 11:30 AM
Updated : 7 Dec 2015, 10:43 AM

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পূর্ব থানার ওসি আবু বকর মিয়া মঙ্গলবার দুপুরে ওই পাঁচজনকে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন।

শুনানি শেষে মহানগর হাকিম স্নিগ্ধা রানী চক্রবর্তী আসামিদের চার দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

এই পাঁচ আসামি হলেন- মারুফ, রাশেদ, ফখরুল, জাহাঙ্গীর হোসেন ও ডা. বিমল চন্দ্র শীল। তাদের আইনজীবী রিমান্ডের বিরোধিতা তরে জামিনের আবেদন হলেও তা নাকচ হয়ে যায়।

রিমান্ড আবেদনের বরাত দিয়ে আদালত পুলিশের এস আই উজির আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত ২৯ অক্টোবর জাপানি নারী হিরোয়ি মিয়েতাকে হত্যা করা হয়। আসামিদের কাছ থেকে ওই জাপানি নারীর ভ্যানিটি ব্যাগ ও পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য দশদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।”

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী কে এম ফুরকান আলি বলেন, যেসব সামগ্রী আসামিদের কাছে পাওয়ার কথা পুলিশ বলছে, সেই জব্দ তালিকা আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি।

ষাটোর্ধ্ব হিরোয়ি মিয়েতা প্রায় দশ বছর ধরে ‘অবৈধভাবে’ বাংলাদেশে বসবাস করছিলেন এবং এ দেশে বায়িং হাউজের ব্যবসায় জড়িত ছিলেন বলে পুলিশের তথ্য। 

গত ১৯ নভেম্বর জাপান দূতাবাসের এক কর্মকর্তা উত্তরা পূর্ব থানায় একটি জিডি করেন, যাতে বলা হয়, তাদের এই নাগরিক তিন সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ। এরপর পুলিশ জানতে পারে, ২৯ অক্টোবর মিয়েতার মৃত্যুর পর তাকে গোপনে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে সিটি করপোরেশনের কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে।

তার মৃত্যু ও গোপনে সমাহিত করায় বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ দেখা দেওয়ায় তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এরপর উত্তরা পূর্ব থানায় ছয়জনকে আসামি করে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয় বলে ওসি আবু বকর জানান।

পরে ঢাকা, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান তিনি।

তবে ওই পাঁচজনের সঙ্গে সেই জাপানি নারীর যোগাযোগ কি ছিল- সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি ওসি।

গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের ১৩/বি নম্বর সড়কের ৮ নম্বর হোল্ডিংয়ে ‘সিটি হোমস’ নামের একটি হোটেলে একাই থাকতেন হিরোয়ি মিয়েতা। জাপানে তিনি মায়ের সঙ্গে মাঝে মাঝে টেলিফোনে কথাও বলতেন। গত ২৬ অক্টোবর মায়ের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

পুলিশের বরাত দিয়ে একটি সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়, ২০০৬ সালে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে সিটি হোমসেই থাকছিলেন ওই জাপানি নারী। অনেক টাকার বিল বকেয়া পড়ায় আড়াই মাস আগে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় তার থাকার ব্যবস্থা করে দেন বন্ধুরা।

সেখানেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২৯ অক্টোবর হিরোয়ি মিয়েতার মৃত্যু হয় বলে গ্রেপ্তাররা পুলিশের কাছে দাবি করেছে।

ওই নারীর বাংলাদেশি বন্ধুরা পুলিশকে বলেছেন, অবৈধভাবে বাংলাদেশে থাকছিলেন বলে তাকে কোনো হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। তবে মৃত্যুর বিষয়টি জাপানে তার মাকে জানানো হয়।

এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে সোমবার পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হলেও পরে ‘অনিবার্য কারণে’ তা বাতিল করার কথা জানানো হয়।