পাকিস্তান প্রমাণ করল, সাকা-মুজাহিদ ছিলেন চর: আসমা জাহাঙ্গীর

বাংলাদেশে দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর নিয়ে পাকিস্তান সরকারের ‘উতলা’ আচরণকে ‘দ্বৈতনীতি’ আখ্যায়িত করে এর কঠোর সমালোচনা করেছেন দেশটির মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী আসমা জাহাঙ্গীর।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2015, 07:20 AM
Updated : 24 Nov 2015, 11:48 AM

তাকে উদ্ধৃত করে দেশটির ইংরেজি দৈনিক ডন লিখেছে, “সরকার এই আচরণের মাধ্যমে শুধু এটাই প্রমাণ করল যে, বাংলাদেশে যাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে তারা আসলে ছিল রাজনৈতিক চর, তারা কাজ করছিল পাকিস্তানের স্বার্থের জন্য।” 

সোমবার ইসলামাবাদ হাই কোর্টে সাংবাদিকদের সামনে নিজের এই মতামত তুলে ধরেন আসমা জাহাঙ্গীর।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে ঢাকায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনায় ‘উদ্বেগ ও বেদনা’ প্রকাশ করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতির প্রেক্ষিতে আসমার এই প্রতিক্রিয়া। 

গত রোববার ওই বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর আমরা গভীর উদ্বেগ ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করলাম।”

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ আখ্যায়িত করে এ নিয়ে ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়ার’ কথাও বলা হয় ওই বিবৃতিতে।

এরপর ঢাকায় পাকিস্তানের হাই কমিশনারকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।

প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার সঙ্গে নিজেদের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা ও সহযোগিতার বিষয়টি আবারও স্বীকার করল পাকিস্তান।

আসমা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে শেখ হাসিনা, বাবা মালিক গোলাম জিলানীর সম্মাননা নিতে ঢাকায় আসেন তিনি।

আর পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রথম নারী সভাপতি আসমা জাহাঙ্গীর নিজের দেশের সরকারের সমালোচনায় বলেন, ইসলামাবাদের আচরণে এমন ধারণা হওয়া স্বাভাবিক যে নিজেদের নাগরিকের চেয়ে বাংলাদেশের বিরোধী দলের সদস্যদের জন্য তাদের ‘ভালোবাসা অনেক বেশি’।  

তিনি বলেন, পাকিস্তানের সামরিক আদালতে বা সৌদি আরবে অন্যায্যভাবে কাউকে ফাঁসিতে ঝোলানো হলে সরকারকে ‘এতোটা উতলা হতে’ দেখা যায় না, যতোটা বাংলাদেশের বিরোধী দলের দুই রাজনীতিবিদের ক্ষেত্রে দেখা গেল।

“আমরা আশা করি, সরকারের মধ্যে ওইসব ক্ষেত্রেও সমান আকুতি আমরা দেখতে পাব।”

আসমা  জাহাঙ্গীরের বাবা মালিক গোলাম জিলানী ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। একাত্তরের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর তার মুক্তির দাবিতে জেনারেল ইয়াহিয়াকে খোলা চিঠি লেখায় তাকে কারাগারে যেতে হয়েছিল।

নিজেদের জীবনকে  হুমকির মধ্যে ঠেলে দিয়ে যে সব পাকিস্তানি সে সময় নির্যাতিত বাঙালির পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, তেমন ১৩ জনকে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সম্মাননা দেওয়া হয়।  ওই বছর ২৪ মার্চ ঢাকা এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে বাবার পক্ষে সম্মাননা নেন আসমা আহাঙ্গীর।

ডন লিখেছে, সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের বিচারের ক্ষেত্রে ‘সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি’ বলে আসমা নিজেও বিশ্বাস করেন। তিনি মনে করেন, এই ফাঁসি বাংলাদেশে ‘রাজনৈতিক বিভাজন আরও বাড়িয়ে দেবে’।    

“তবে, আসমা জাহাঙ্গীর এও বলেছেন, পাকিস্তান সরকারকে আগে নিজের দেশে এবং সৌদি আরবে অন্যায্য বিচারে ফাঁসি দেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে হবে। তারপর তারা বাংলাদেশের রাজনীতিকদের নিয়ে কথা বলুক।”  

পাকিস্তানের জীবিত নাগরিকদের তুলনায় ওই দুই বাংলাদেশি রাজনীতিক সরকারের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কি না- সে প্রশ্নেরও ব্যাখ্যা চেয়েছেন এই মানবাধিকারকর্মী। 

তিনি বলেন, “আমরা শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড আর যে কোনো ধরনের অন্যায্য বিচারের বিরুদ্ধে- সেটা পাকিস্তানেই হোক, আর বাংলাদেশ বা অন্য কোথাও।”