জাতির শাপমুক্তি হচ্ছে: হাসিনা 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অভিশাপ থেকে মুক্তি পাচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2015, 04:37 PM
Updated : 24 Nov 2015, 06:34 AM

দুই যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মো. মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের একদিন বাদে সোমবার সংসদে একথা বলেন তিনি।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের চলমান বিচারে ২০১৩ সালে আব্দুল কাদের মোল্লা, ২০১৪ সালে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের পর সাবেক দুই মন্ত্রী সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, যা জিয়াউর রহমান বন্ধ করে দিয়েছিল, সে বিচার এবং রায় কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছি। রায় কার্যকর করছি।”

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধীদের ‘অপরাধের সীমা নাই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “নারী শিশু থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবীকের কীভাবে হত্যা করেছে? 

“আমি মনে করি, এই বিচারের মধ্য দিয়ে এবং রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে যারা ৭১ সালে স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে বেঁচে আছেন, অন্তত তাদের মনটা শান্তি পাবে।”

“যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যদি আমরা সম্পন্ন করতে না পারি, এ দেশ অভিশাপমুক্ত হবে না। কাজেই এ বিচার ও রায় কার্যকরা করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যে দীর্ঘদিন অভিশপ্ত হয়ে ছিল। সেই অভিশাপ থেকে আস্তে আস্তে মুক্তি পাচ্ছে,” বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

দশম সংসদের অষ্টম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরঙ্গনাদের কথা স্মরণ করেন। তিনি বুদ্ধিজীবী হত্যার কথাও বলেন, যার নকশাকার ছিলেন মুজাহিদ।

স্বাধীনতার পর দালাল আইনে বিচার শুরু হলেও তা বন্ধ হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে।

শেখ হাসিনা বলেন, “জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে।”

যুদ্ধাপরাধের বিচারে আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত আব্দুল আলিমের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

আলিমকে জিয়া মন্ত্রী করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে বিদেশেও তৎপরতা চালানো শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন জিয়া।

“এসব যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় বসানো হয়। শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়,” বলেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে। ট্রাইব্যুনাল থেকে এ পর্যন্ত ২১টি রায় এসেছে, যার মধ্যে চলতি বছর এসেছে ছয়টি।

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকরী আন্তর্জাতিক চক্রের ষড়যন্ত্রেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল।

“যারা স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি, আমাদের স্বাধীনতার সময় যারা বিরোধিতা করেছিল, যারা হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করেছিল, তারা ও তাদের দেশি-বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্রে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়।”

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক বাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদেরও সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিচারের নামে প্রহসন করা হয়। দিনের পর দিন এভাব মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করা হয়।”

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পুনর্বাসনের জন্য জিয়ার পাশাপাশি নিজের বিশেষ ‍দূতের মর্যাদায় থাকা সাবেক সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদকেও দায়ী করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

“জিয়াউর রহমান তাদের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত বানায়। জেনারেল এরশাদের সময় তাদের দল করতে দেওয়া হয়, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে দেওয়া হয়। ফারুককে সংসদ সদস্য বানানোর প্রচেষ্টা চালানো হয়। খালেদা জিয়ার ভোটারবিহীন নির্বাচনে বিরোধীদলীয় নেতা বানানো হয়।”