২৩৬ পৌরসভায় ভোট ৩০ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার তফসিল

বাংলাদেশের ২৩৬ পৌরসভায় আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন রেখে তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2015, 02:11 PM
Updated : 23 Nov 2015, 02:11 PM

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে সোমবার রাতে ইসির এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।  

বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন ঠিক হয়েছে। কাল সিইসি তফসিল ঘোষণা করবেন।”

ইসি কর্মকর্তারা জানান, মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় রাখা হতে পারে। ৫ ও ৬ ডিসেম্বর বাছাইয়ের পর প্রত্যাহারের শেষ সময় রাখা হচ্ছে ১৩ ডিসেম্বর। ফলে প্রচারের জন্য দুই সপ্তাহ সময় পাবেন প্রার্থীরা।

তফসিল ঘোষণাকে সামনে রেখে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদেরকে প্রতিনিধি পাঠিয়ে মঙ্গলবার বিজি প্রেস থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতেও নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর এবারই প্রথম পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে রাজনৈতিক দলের নেতারা সংসদ নির্বাচনের মতো দলীয় প্রতীক নিয়ে ভোট চাইবেন।

শুরুতে সব পদে নির্বাচন দলীয়ভাবে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আইন সংশোধন হলেও পরে কাউন্সিলরদের বাদ রেখে পুনর্বার সংস্কার আনা হয় আইনে। ফলে কাউন্সিলর পদে ভোট হবে আগের মতোই নির্দলীয়ভাবে।

প্রথমবারের মতো দলীয়ভিত্তিতে ভোট আয়োজনের আগে নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা জারিতে বিলম্বের কারণে একেবারে শেষ সময়ে ইসিকে বেশ বিপাকে পড়তে হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে বিধিমালায় এসআরও নম্বর নিয়ে ইসি যুগ্মসচিব মো. শাহজাহান কমিশনে ফেরেন সন্ধ্যা সোয়া ৬টায়।

এরপর গেজেটের আনুষ্ঠানিকতা সেরে সিইসি, জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক ও নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বৈঠকে বসেন।

আবদুল মোবারক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটের তারিখ নির্ধারণে তিনজন কমিশনার একমত হয়ে স্বাক্ষর করেছি।”

মঙ্গলবার ৫ সদস্যের ইসির মধ্যে অন্তত তিনজন অনুপস্থিত থাকতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে কোরাম সঙ্কটের আশঙ্কায় একদিন আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা হয় বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।

নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক গোপালগঞ্জ এবং জাবেদ আলী কক্সবাজার সফরে থাকবেন নির্বাচনী কাজে। অন্য কমিশনার আবু হাফিজ অসুস্থতা বোধ করছিলেন বিকাল থেকেই।

বৈঠকের আগে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “কাল তফসিল ঘোষণা করতে না পারলে ডিসেম্বরে ভোট করা যাবে না। সেক্ষেত্রে রাতে কমিশনের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে তা চূড়ান্ত হবে।”

বর্তমানে বাংলাদেশে তিন শতাধিক পৌরসভা রয়েছে। এর মধ্যে ডিসেম্বরে ২৪০টির বর্তমান মেয়র-কাউন্সিলরদের মেয়াদ ডিসেম্বরে ফুরোচ্ছে।

এর মধ্যে ২৩৬টিতে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব পৌরসভায় মোট ভোটার ৭০ লাখের মতো বলে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

গড়ে প্রতি পৌরসভায় সাধারণ ওয়ার্ড ১১টি, সে হিসেবে নির্বাচন উপযোগী পৌরসভায় ওয়ার্ড থাকবে আড়াই হাজারের মতো।

২৩৬ জন মেয়রের পাশাপাশি আড়াই হাজার সাধারণ কাউন্সিলর এবং আট শতাধিক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নির্বাচন করবেন ৭০ লাখ ভোটার।

(ফাইল ছবি)

শুধু মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রেখে সংশোধিত আইনের গেজেট শনিবার জারি হওয়ার পর পৌর নির্বাচনের বিধিমালা চূড়ান্ত করতে বসে ইসি। আগে একবার তা তৈরি করলেও তাতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।  

প্রস্তাবিত বিধিমালা অনুযায়ী, মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার জন্যে দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সম পর্যায়ের পদাধিকারী বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রত্যায়নের বিধান থাকবে।

দলকে এক্ষেত্রে তফসিল ঘোষণার ৫ দিনের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এবং ইসি সচিবালয়ে দলের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম, পদবি ও নমুনা স্বাক্ষরসহ একটি চিঠি দিতে হবে।

মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকছে সংসদ নির্বাচনের মতোই। তবে ১০০ ভোটারের সমর্থনযুক্ত তালিকা দেওয়ার বিধান রাখা হচ্ছে বিধিমালায়, যা সংসদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সমর্থন যাচাই করার জন্যে তালিকা থেকে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ৫ জনকে বাছাই করা হবে।

পৌরসভা প্রতি ১ লাখ টাকা দলীয় ব্যয় রাখাসহ আইনের আলোকে মনোনয়নপত্র, প্রতীক ব্যবহারে প্রয়োজনীয় সব কিছু থাকছে বিধিমালায়।

মন্ত্রী-এমপিসহ সরকারি-সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের কোনো প্রার্থীর পক্ষে পৌর নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে না।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, পৌর নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাদের সঙ্গে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের রাখা হচ্ছে।