কোনো দেশের বিরূপ মন্তব্যই গ্রহণযোগ্য হবে না: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো দেশের বিরূপ মন্তব্য গ্রহণ করার মতো পর্যায়ে বাংলাদেশ এখন আর নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2015, 12:56 PM
Updated : 23 Nov 2015, 01:48 PM

সোমবার পাকিস্তানের হাই কমিশনারকে ডেকে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির বিষয়ে ‘কড়া প্রতিবাদ’ জানানোর পর প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্য এলো। 

তিনি বলেন, “শুধু পাকিস্তান কেন, পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রের কাছ থেকেই যুদ্ধাপরাধীদের, মানবতাবিরোধী বিচারের প্রশ্নে আমরা কোনো নেতিবাচক মন্তব্য গ্রহণ করব না।”

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর রোববার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর আমরা গভীর উদ্বেগ ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করলাম।”

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের এই বিচারকে ‘প্রহসন’ আখ্যায়িত করে এ নিয়ে ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়ার’ কথা বলা হয় ওই বিবৃতিতে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এ ধরনের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে এরপর ঢাকায় পাকিস্তানের হাই কমিশনারকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। হাই কমিশনার সুজা আলম সোমবার ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দেখা করলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়।

পরে মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, “প্রথম যখন ফাঁসি কার্যকর হয়, তখন যে ধরনের আন্তর্জাতিক মতামত ছিল – আপনারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন যে গত দুই বছরে এর অনেকখানি পরিবর্তন হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম যে এবার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং মুজাহিদের ফাঁসির আগে এবং পরে কোনো রাষ্ট্র আলাদাভাবে আমাদের কাছে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করবে না। কারণ এই প্রশ্নে কোনো রাষ্ট্রের নেতিবাচক মন্তব্য গ্রহণ করার অবস্থায় বাংলাদেশ এখন আর নেই।

“সেই জায়গা থেকে বলব যে আমরা অবশ্যই কিছুটা হতাশ, যে আমাদের প্রতিবেশী একটি দেশ- তারা এ ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন, যার কোনো প্রয়োজন ছিল না।”

পাকিস্তান ওই বিবৃতি দিয়ে ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ’ করেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ একটি বিষয়ে তারা মতামত দিয়েছেন। তো… আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়ার জন্য হাই কমিশনারকে আজকে আমরা আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। এ বিষয়ে তাদের সরকারের যে অবস্থান এতদিন ছিল, আশা করি এখন তার পরিবর্তন হবে।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৩ সালে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরও উদ্বেগ জানিয়েছিল পাকিস্তান।

‘পাকিস্তানের প্রতি অনুগত এবং ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সমর্থন করায়’ কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে দাবি করে সে সময় দেশটির পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাবও গৃহীত হয়।

তা নিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন মহলের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার মধ্যে পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে তলব করে ওই প্রস্তাব গ্রহণের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার।

সেই প্রসঙ্গে টেনে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার বলেন, “পাকিস্তানের পার্লামেন্ট সে সময় প্রস্তাব গ্রহণ করলেও তারা কিন্তু তখন বাংলাদেশ সরকারকে তা কনভে করেনি। আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম যে সেখানেই বোধ হয় এটা শেষ।… কিন্তু পররাষ্ট্র দপ্তর যখন একটি কথা বলে সেটা রাষ্ট্রের অবস্থানকেই তুলে ধরে।”

পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার যে দাবি গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সরকারের অবস্থান আমি এখনই বলতে পারব না। তবে দেশপ্রেমিক জনগণ, দেশের তরুণ সমাজ এ দাবি করতেই পারে। এ দাবি তারা কেন করছেন তা বোধগম্য।”

তারপরও একটি ঘটনা একটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন বা পুনঃস্থাপনের মাপকাঠি হতে পারে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমি আশা করি, কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার মতো কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না, তাদের(পাকিস্তান) শুভবুদ্ধির উদয় হবে।”