নিজামীর আপিল: পরবর্তী শুনানি মঙ্গলবার

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজমীর বিরুদ্ধে তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ অভিযোগে সাক্ষীদের জবানবন্দি পেপারবুক থেকে সর্বোচ্চ আদালতকে পড়ে শুনিয়েছেন তার আইনজীবী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2015, 05:35 AM
Updated : 23 Nov 2015, 12:56 PM

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ সোমবার সকাল সোয়া ১০টা থেকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত এ মামলা শুনে মঙ্গলবার পর্যন্ত আদালত মুতলবি করে।

বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসা এটি ষষ্ঠ মামলা, যার ওপর শুনানি চলছে।

গত ১৯ নভেম্বর একই বেঞ্চে এ মামলার তৃতীয় দিনের শুনানি হয়। সোমবার সকালে শুরু হয় চতুর্থ দিনের শুনানি।

এদিন নিজামীর পক্ষে তার আইনজীবী এস এম শাজাহান পেপারবুক থেকে অভিযোগ ধরে সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছেন। তার সঙ্গে ছিলেন শিশির মনির।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল।

বুদ্ধিজীবী গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, সম্পত্তি ধ্বংস, দেশত্যাগে বাধ্য করা, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সংঘটনে সহযোগিতার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল-১।

রায়ে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, “আদালত সম্মত হয়েছে যে, তিনি যে মাত্রায় হত্যা, গণহত্যা ঘটিয়েছেন, তাতে সর্বোচ্চ সাজা না দিলে তা হবে ন্যায় বিচারের ব্যর্থতা।”

জামায়াতে ইসলামীর আমির নিজামী একাত্তরে ছিলেন দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নাজিমে আলা বা সভাপতি এবং সেই সূত্রে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত আল বদর বাহিনীর প্রধান।

স্বাধীনতাকামী বাঙলির ওপর দমন-পীড়ন চালাতে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটিতেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উঠে এসেছে।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৩ নভেম্বর সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন নিজামী। ছয় হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার নথিপত্রসহ নিজামীর করা আপিলে ১৬৮টি যুক্তি তুলে ধরে সাজার আদেশ বাতিল করে খালাস চাওয়া হয়।  সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ায় রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেনি রাষ্ট্রপক্ষ।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আশা প্রকাশ করেছেন, ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে সুপ্রিম কোর্টে অবকাশের আগেই এই শুনানি শেষ হবে।

আপিল আদালতে এ মামলায় নিজামীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, যিনি এর আগে অন্য জামায়াত নেতাদের পক্ষেও আপিল আদালতে যুদ্ধাপরাধের মামলা লড়েছেন।

ট্রাইব্যুনালের দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে করা সাতটি আপিলের নিষ্পত্তি হয়েছে এ পর্যন্ত।

এর মধ্যে ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ বহাল থাকলে ওই বছর ১২ ডিসেম্বর দণ্ড কার্যকর করা হয়।

ঠিক এক বছর পর আপিলের দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ। সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত না হওয়ায় রিভিউ নিষ্পত্তি হয়নি।

২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগের তৃতীয় রায়ে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকলে ২০১৪ সালের ১১ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

সর্বশেষ আপিল বিভাগে সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকায় রিভিউ নিষ্পত্তির পর বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয় রোববার প্রথম প্রহরে।

চলতি বছর ১৬ জুন মুজাহিদের ফাঁসির রায় বহাল রেখে আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। পরে ১৮ নভেম্বর তার সর্বোচ্চ সাজার রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করা হয়।

একই দিন খারিজ হয় সালাউদ্দিন কাদেরের রিভিউ আবেদনও। ২৯ জুলাই আপিল বিভাগ সাকার ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখে রায় দিয়েছিল।

এর আগে শুনানি পর্যায়ে এলেও জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও বিএনপি নেতা আব্দুল আলীম মারা যাওয়ায় তাদের আপিল ‘অকার্যকর’ হয়ে যায়।