তুষ্টিকে নির্যাতন: মামলা স্থগিত, কোর্ট মার্শালেও যাবে না

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নুসরাত জাহান তুষ্টিকে নির্যাতনের ঘটনায় তার স্বামী মেজর নাজির উদ্দিনের বিরুদ্ধে করা মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশ বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2015, 05:03 AM
Updated : 23 Nov 2015, 12:10 PM

একইসঙ্গে ওই মামলার নথি কোর্ট মার্শালে বিচারের জন্য পাঠাতে দেওয়া চিঠির কার্যকারিতা স্থগিতের আদেশও বহাল রয়েছে।

এর ফলে ওই মামলা কোর্ট মার্শালে নেওয়ার বিষয়টি আপাতত স্থগিতই থাকছে বলে জানিয়েছেন তুষ্টির বাবার একজন আইনজীবী।  

হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) খারিজ করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।

নারী নির্যাতন আইনে করা অভিযোগের বিচার কোর্ট মার্শালে চলতে পারে কি না, এ প্রশ্নে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১২ অগাস্ট হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ তুষ্টিকে নির্যাতনের ঘটনায় করা মামলা স্থগিত করে দেয়। সেই সঙ্গে ওই মামলার নথি কোর্ট মার্শালে বিচারের জন্য পাঠাতে সেনা সদর দপ্তর থেকে যে চিঠি টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছিল, তার কার্যকারিতাও স্থগিত করা হয়।

তুষ্টির বাবা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম ভূঁইয়ার করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে হাই কোর্ট ওই আদেশ দেয়। পাশাপাশি নথি হস্তান্তরের জন্য পাঠানো ওই চিঠি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

ওই আদেশ স্থগিতের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার আদালতে আবেদন নিয়ে গেলে বিচারক হাই কোর্টের আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করে বিষয়টি নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান।

নুসরাত জাহানের সহপাঠী অপূর্ব মজুমদারের তোলা ছবি

এরপর ২৪ অগাস্ট বিষয়টি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। ওই দিন আপিল বিভাগ হাই কোর্টের আদেশ স্থগিতের মেয়াদ আরও চার সপ্তাহ বাড়িয়ে এ সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলে।

এর ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করে, যার ওপর শুনানি শেষে সোমবার আদালত তা খারিজ করে দিল।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল একরামুল হক টুটুল। রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক।

ব্যারিস্টার অনীক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছে। আপিল বিভাগের দেওয়া স্থগিতাদেশও নেই। ফলে হাই কোর্ট মামলার কার‌্যক্রম ও নথি তলবের চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করে যে আদেশ দিয়েছিল তা বহাল রইল। হাই কোর্টে রিট আবেদনের নিষ্পত্তি পর মামলার পরবর্তী ভবিষ্যত জানা যাবে।”

টাঙ্গাইলের কালিহাতীর শ্বশুরবাড়িতে গত ৩০ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ’র শিক্ষার্থী তুষ্টি নির্যাতনের শিকার হন। তার পরিবারের অভিযোগ, যৌতুকের দাবিতে তুষ্টিকে বেঁধে নির্মমভাবে পেটান স্বামী মেজর নাজির। এ বিষয়ে ২ এপ্রিল টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা হয়।

তুষ্টিকে উদ্ধার করতে গিয়ে তার বাবা নূরুল ইসলাম, মা শাহনাজ আক্তার ও ভাই মুঈদ হাসানও মারধরের শিকার হন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।

ওই সময় নাজির উদ্দিন চট্টগ্রামের বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।

হাই কোর্টের আদেশের পর অনীক আর হক জানিয়েছিলেন, সেনা কর্মকর্তা হওয়ায় কোর্ট মার্শালে নাজির উদ্দিনের বিচার করার জন্য তুষ্টির পরিবারের করা মামলাটির নথিপত্র চায় সেনা সদরদপ্তর।

সেনা সদরদপ্তরের এরিয়া কমান্ডার (লজিস্টিকস) মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান খান গত ১১ মে এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি চিঠি দেন।

ওই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেই ৯ অগাস্ট হাই কোর্টে রিট করেন তুষ্টির বাবা। তার যুক্তি, বিশেষ আইনের আওতাভুক্ত কোনো অপরাধের বিচার কেবল ওই বিশেষ আইনেই বিচারযোগ্য; তা কোর্ট মার্শালে বিচারের এখতিয়ারভুক্ত নয়।