আঙ্গুলের ছাপে সিম পুনঃনিবন্ধন শুরু

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী বায়োমেট্রিক (আঙ্গুলের ছাপ) পদ্ধতিতে মোবাইল সিম পুনঃনিবন্ধন শুরু করেছে মোবাইল অপারেটরগুলো।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2015, 02:18 PM
Updated : 15 Nov 2015, 03:19 PM

সিমের পুনঃনিবন্ধনের জন্য সবাইকে এই পদ্ধতিতে যেতে হবে।

কোনো গ্রাহক তা না করলে তাকে সতর্ক করতে পহেলা বৈশাখের পর কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত তার সংযোগ বন্ধ রাখা হবে বলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানিয়েছেন।

রোববার পরীক্ষামূলকভাবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালুর পর ওই কার্যক্রম পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি।

গুলশানে উদয় টাওয়ারে অপারেটর রবির কাস্টমার কেয়ার সেন্টার পরিদর্শন শেষে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “১৫ নভেম্বর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন চালু করার কথা বলা হয়েছিল।

“সে অনুযায়ী শুরু হয়েছে। তাই এই পদক্ষেপগুলো সরেজমিনে দেখা হচ্ছে।”

গ্রাহকের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে মোবাইল অপারেটরগুলো এরইমধ্যে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে চুক্তি করেছে এবং তারা এনআইডির তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশ করতে পারছে বলে জানান তারানা হালিম।

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে, প্রথম দিন রোববার টেলিটকের গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে নিজের সিমের তথ্য হালনাগাদ করছেন একজন।

ঘোষণা অনুযায়ী ১৫ নভেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে বায়োমেট্টিক পদ্ধতি চালু নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সময়সীমা পালনে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। অপারেটররা পরীক্ষামূলকভাবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করেছে। ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি শুরু করা হবে।

“যাদের সিম নিবন্ধনে ত্রুটি রয়েছে বা সঠিকভাবে নিবন্ধিত হয়নি তাদের সেখানে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। নতুন যারা আসছেন তাদেরটাও এই পদ্ধতিতেই নিবন্ধন করা হবে।”

যারা সঠিকভাবে নিবন্ধন করেননি, তারা কতদিন সময় পাচ্ছেন-সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ যত দিন মনে করে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে আসবে, ততোদিন প্রক্রিয়াটা ওপেন রাখতে চাই।”

তবে প্রাথমিক পর্যায়ে আগামী পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত কোনো চাপ প্রয়োগ ছাড়াই গ্রাহকদের এই পদ্ধতিতে সিম পুনঃনিবন্ধনের সুযোগ রাখার ইঙ্গিত দেন প্রতিমন্ত্রী।

“একটা ডেটলাইন ফিক্সড করতে চাই। তা হলো এপ্রিল পর্যন্ত। পুরনো যাদের সমস্যা আছে, তারা যেন এপ্রিলের মধ্যে নতুন এই পদ্ধতির আওতায় আসেন বা রেজিস্ট্রেশন করে নেন-এটাতে আমরা জোর দিব। পহেলা বৈশাখের পূর্ব পর্যন্ত তারা করে নিবে বলে সময় বেঁধে দিতে চাই।”

সিম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালুর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম দেখতে বাংলালিংকের গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ছবি: নয়ন কুমার

তবে এই সময়ের মধ্যেও কেউ সিম পুনঃনিবন্ধন না করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, “তারপরও যদি নিবন্ধন না করে প্রথমে কয়েক ঘণ্টা সিমের কার্যকারিতা স্থগিত থাকবে।

“তারপর সেই ঘণ্টাকে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করা হবে। তারপর একদিন কার্যকারিতা বন্ধ থাকবে। সপ্তাহে একদিন, পরে দুইদিন বা তিনদিন এভাবে বন্ধ থাকবে।”

পুনরায় নিবন্ধনের জন্য গ্রাহককে এসএমএসের মাধ্যমে বারবার অবহিত করা বা সতর্ক সংকেত দেওয়া হবে।

“এভাবে সতর্ক সংকেত দেওয়ার পরও রেজিস্ট্রেশন না হলে বুঝতে হবে সেই সিম কারও হাতে আছে; তিনি রেজিস্ট্রেশনে আগ্রহী নন বা কোনো অন্যায় কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ওই সিম,” বলেন প্রতিমন্ত্রী।

সিম রেজিস্ট্রেশনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে গুলশান এলাকার গ্রামীণফোন, টেলিটক, বাংলালিংক, এয়ারটেল ও সিটিসেলের কাস্টমার কেয়ার সেন্টার ঘুরে দেখেন তিনি।

এ সময় টেলিযোগযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবিব খান, মহাপরিচালক (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

টেলিটকের গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে রোববার সিম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালুর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম ঘুরে দেখেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ছবি: নয়ন কুমার

ভুয়া পরিচয়ে অথবা নিবন্ধন ছাড়া সিম কিনে নানা অপরাধে ব্যবহারের অভিযোগ বাড়তে থাকায় সম্প্রতি গ্রাহকদের তথ্য যাচাই ও সিম পুনঃনিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

প্রথম ধাপে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে তথ্য চাওয়া হয়েছে গ্রাহকদের কাছে। ১৫ অক্টোবর থেকে একমাস এসএমএসে তথ্য নেওয়া হয়।

সিম নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ করতে এবার বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হলো। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে সারা দেশে এই পদ্ধতিতে সিম পুনঃনিবন্ধনের কাজ শুরুর ঘোষণা রয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটকসহ মোট ছয়টি অপারেটর রয়েছে। বিটিআরসির হিসাবে সেপ্টেম্বর শেষ নাগাদ দেশে মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা ১৩ কোটি ১৪ লাখ ছাড়িয়েছে।