গাজীপুরে ১২ হাজার একর বনভূমি বেদখলে

গাজীপুরে বনবিভাগের ৬৬ হাজার ৮০০ একর বনভূমির মধ্যে ১২ হাজার একর ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দখলে রয়েছে। দখলদারদের মধ্যে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানেরও নাম এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2015, 02:54 PM
Updated : 29 Oct 2015, 03:45 PM

বৃহস্পতিবার বিকেলে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

বেদখল বনভূমির পুরোটার দখলদারদের নাম জানাতে পারেনি মন্ত্রণালয়। তবে  গাজীপুরের আটটি মৌজায় কারা জমি দখল করেছেন তার একটি তালিকা বৈঠকে তুলে ধরা হয়।

ওই তালিকার অনুলিপি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে এসেছে।

মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই আটটি মৌজায় ৫৯টি প্রতিষ্ঠান বনভূমি দখল করে রেখেছে, যাদের মধ্যে বহুজাতিক একটি প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি সংস্থাও (এনজিও) রয়েছে।

পরবর্তী বৈঠকে পুরো জমির দখলদারদের তালিকা চেয়েছে কমিটি। 

আটটি মৌজায় জমি দখলকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান নেসলের স্থানীয় শাখা নেসলে বাংলাদেশ, প্যানাস অটোক্রিয়েশন লিমিটেড, ম্যাগডোনাল বাংলাদেশ, হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল, এন এ জেড বাংলাদেশ, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েস, বিসিডিএস (ব্রাক), বেন্টলী স্যুয়েটার, গিভেন্সী এক্সোসরিজ গার্মেন্টস, পারটেক্স ডেনিম, ওয়ান ডেনিম ওয়ান স্পিনিং মিল, এডি আই একোয়া, এম আই ইয়ার্ন ডাইং, নিটল টাটা গ্রুপ (গাড়ি পার্কিং), করীফবাড়ী খামার ও রেস্ট হাউজ, আমবার কটন মিলস, পারটেক্স হোল্ডিং, ইপিলিয়ন স্টাইল।

এটলাস ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, বেন ফিক্রস্টীল বিল্ডিং ডেভেলপমেন্ট, এবি সিদ্দিক পলিমার, এসএম নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ, বিজি কালেকশন, নূর পোল্ট্রি কমপ্লেক্স, বাংলাদেশ মেইজপ্রডাক্ট, ইভন্স টেক্স, তিতাস স্কিনিং, বেঙ্গল গার্মেন্টস, মালা পোল্ট্রি ফার্ম, মাজকাত পোল্ট্রি, টিএস ট্রান্সফরমার, ন্যাশনাল ফিড, মডার্ন কিড, লিথি গ্রুপ, প্যারাগন পোল্ট্রি, স্ক্রিন গ্রাফ, গর্ডন স্টিল মিলস, মোশারফ কম্পোজিট, প্যাকলাইন লিমিটেড, নিসর্গ পিকনিক স্পট, আর্টিসান সিরামিক, সজনী ফিল্ম সিটি, বিটি লিমিডেট, মিলেনিয়াম স্টিল মিলস।

কুইন্স পোল্ট্রি ফার্ম, অমনী এগ্রো, ঢাকা ফিসারিজ, রেডিয়াম এক্সেসরিজ, নির্জনা এ্যাপারেলস, গোলাম কিবরিয়া মৎস্য খামার, ইনডেক্স কনস্ট্রাকশন, এনএজেড বাংলাদেশ।

সাহাবা ইয়ার্ন, এটিআই সিরামিক, গিভেন্সী ডেনিমস, খোরশেদ আলম এগ্রো, বেঙ্গল হারিকেন ডাইং, গ্রীনটেক রিসোর্স, আদি এগ্রো ফার্ম।

এসবের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে মামলা চলছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয়কে এসব বেদখল ভূমি উদ্ধারের তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলে সংসদীয় কমিটির সভাপতি হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন।

বৈঠক শেষে সংসদের মিডিয়া সেন্টারে তিনি বলেন, “কোনো কোনো শিল্প কারখানা পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষিদ্ধ এলাকাতেই গড়ে উঠেছে। অনেকের ব্যক্তি মালিকানা জায়গাও আছে। তবে যারা সরকারি জায়গা দখল করেছে তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা আগামী বৈঠকে দিতে বলা হয়েছে। এই সব দখলকারীদের নাম প্রকাশ করা দরকার।”

পূর্ণাঙ্গ তালিকা হাতে পাওয়ার পর কমিটি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সুপারিশ করবে বলে জানান সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

এদিকে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বন বিভাগে তিন বছরের বেশি সময় ধরে যে সব কর্মকর্তা বিভিন্ন স্থানে কর্মরত আছেন তাদের দ্রুত বদলির সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

এছাড়া বন বিভাগের যে সব রেস্টহাউস ব্যবহারযোগ্য সেগুলোর তালিকা ও ভাড়া নির্ধারণ করে ওয়েবসাইটে তুলে ধরার সুপারিশ করা হয়েছে।

হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, নবী নেওয়াজ, মো. ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী, টিপু সুলতান, মজিবুর রহমান চৌধুরী ও মেরিনা রহমান অংশ নেন।