খালেদা, তারেককে দায়ী করলেন শামসুদ্দিন চৌধুরীর মেয়ে

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের নির্দেশেই লন্ডনে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার মেয়ে নাদিয়া চৌধুরী।

সৈয়দ নাহাস পাশা লন্ডন প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Oct 2015, 06:40 AM
Updated : 27 Oct 2015, 06:40 AM

সোমবার পূর্ব লন্ডনের মন্টিফিউরি সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এই কাপুরুষের দল, খালেদা আর তারেক জিয়া, সন্দেহ হয়, তাদের নির্দেশেই আমার বাবার ওপর হামলা হয়েছে, যা নিয়ে আমি আলোচনা করতে এসেছি।”

সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ‘মরিয়া চেষ্টায়’ বিএনপি-জামায়াত জোট এখন ‘বিদেশি ও ব্লগারদের হত্যার মত’ কৌশল নিয়েছে মন্তব্য করে ব্যারিস্টার নাদিয়া বলেন, “বিশ্বকে তারা বিশ্বাস করাতে চাইছে যে বাংলাদেশে আইএস আছে, যদিও বাস্তব সত্য হল, এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটই দায়ী। লন্ডনের রাস্তায় হামলার জন্যও তারাই দায়ী।”  

গত ২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় লন্ডনের বেথনাল গ্রিন এলাকায় হামলার শিকার হন শামসুদ্দিন চৌধুরী। নাদিয়াও সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন।  

হামলার শিকার হওয়ার পর ফেইসবুকে এক স্ট্যাটাসেও নাদিয়া লিখেছিলেন, ‘বিএনপির লোকেরাই’ তার বাবার ওপর হামলা করেছে বলে তার ধারণা।

সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে আটজন আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনানোর পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন নাদিয়া। তবে শামসুদ্দিন চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন না।  

হামলার বিবরণ তুলে ধরে তরুণ এই আইনজীবী বলেন, ওইদিন লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে নেমে বাড়ি ফেরার আগে শামসুদ্দিন চৌধুরীর এক সাবেক ছাত্রের আমন্ত্রণে তারা বেথনাল গ্রিনের ইয়র্ক হলে দুর্গা পূজার একটি মণ্ডপে যান। সেখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে গাড়িতে ওঠার আগে রাস্তায় তাদের ওপর হামলা করা হয়।

এক হৃষ্টপুষ্ট লোক শামসুদ্দিন চৌধুরীর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি ঝামেলা আঁচ করতে পেরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এরপর আরও তিন-চারজন এসে বাংলাদেশের সাবেক এই বিচারককে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা শামসুদ্দিন চৌধুরীর মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় বলে জানান নাদিয়া।

তিনি বলেন, তারা দুজন সাহায্যের জন্য চিৎকার করলেও আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসেনি।

সেই সন্ধ্যায় বাবাকে বাঁচানোর জন্য নিজের চেষ্টার কথা তুলে ধরে নাদিয়া বলেন, “আমি জানি না, আমি সেদিন সঙ্গে না থাকলে বাবা আজ কোথায় থাকতেন।”

এর আগে ২০১২ সালের জুনে এই লন্ডনেই বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর ওপর হামলা এবং ২০১৩ সালে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর ওপর আক্রমণের ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে নাদিয়া বলেন, “যারা সত্য কথা বলেছেন এবং বিএনপির জন্য হুমকি হয়ে উঠছেন, তাদের ওপর কেবল হামলা করে এই মানুষ নামের পশুরা ক্ষান্ত হচ্ছে না, তারা মানসিকভাবে এতোটাই অসুস্থ যে শিশু রাজনের হত্যাকারীদের মত সেই হামলার ঘটনা তারা ক্যামেরায় ধারণ করছে।”

বিএনপি-জামায়াত জোটকে সন্দেহের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শামসুদ্দিন চৌধুরীর দীর্ঘ কর্মজীবনের বিভিন্ন দিকও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন তার মেয়ে।    

নাদিয়া বলেন, জিয়াউর রহমান যে একজন ‘ঠাণ্ডা মাথার খুনি ছিলেন’ তা তার বাবাই ২০১১ সালে কর্নেল তাহের হত্যার রায়ে বলেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শামসুদ্দিন চৌধুরীই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেছিলেন, স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে লিফলেট বিলি করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তিনিই দিন-রাত পরিশ্রম করেছিলেন।    

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে নাদিয়া বলেন, ‘যত হুমকি, হামলাই হোক’, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের পথ থেকে কিছুই তাদের সরাতে পারবে না।