বাঙালিদের দাবিয়ে রাখা যায়নি, যাবে না: জয়

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, বাঙালি এক হয়ে এগোলে তাদের দাবিয়ে রাখার চেষ্টা অতীতেও সফল হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2015, 02:24 PM
Updated : 20 Oct 2015, 06:33 PM

ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে কীভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে হয়, তাও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার জানে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে তরুণদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আসেন প্রধানমন্ত্রীপুত্র জয়।

‘লেটস টক’ শিরোনামের এই অনুষ্ঠানে তরুণরা নানা বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন; জয়ের সামনে রাখেন নানা প্রশ্ন।

কোনো প্রশ্ন এড়িয়ে না গিয়ে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে জবাবও দেন তিনি, মেটানোর চেষ্টা করেন তরুণদের প্রশ্নক্ষুধা।

সরকারের অর্জনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে এক তরুণের প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, “হ্যাঁ, ষড়যন্ত্র আছে, ষড়যন্ত্র চলছে।

“একাত্তরের আগে থেকে ষড়যন্ত্র ছিল। ২০০৮ এর পর থেকেও ষড়যন্ত্র চলছে। একের পর এক চেষ্টা চলছে।

“অনেকেই আছে শুধু দেশেই না, বিদেশেও। তারা চায় না যে বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিজের মতো চলুক। অনেক দেশ আছে তারা চায় যে বাংলাদেশ তাদের হুকুমমতো চলুক। অনেক দেশ চায়, আমরা যেমন অসাম্প্রদায়িক দেশ; সেরকম যেন না থাকি।”

বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক খিলাফত হয়ে যাক এমন চাওয়া কোনো কোনো দেশ ও মানুষের রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এরকম ‘ষড়যন্ত্রকারী’ বাংলাদেশেই আছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রীপুত্র বলেন, “অনেকেই আছে তারা শুধু ক্ষমতায় যেতে চায়। মানুষের কাছে ভোট পেয়ে তারা কোনো আসনে জিততে পারবে না; তাই তারা সারাক্ষণ ষড়যন্ত্রে লেগে থাকে, ক্ষমতার লোভে।”

তবে ষড়যন্ত্র মোকাবেলার সক্ষমতা রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে জানি। বাঙালি জাতি যখন একসাথে আগায় কেউ আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারেনি। একাত্তরে চেষ্টা করেছিল। একাত্তরে অনেক শক্তিশালী দেশ চেষ্টা করেছিল আমাদের স্বাধীনতা ঠেকাতে, পারেনি।”

ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে তরুণদের সচেতন হওয়ারও আহ্বান জানান জয়।

পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন না হওয়ার পেছনে বাংলাদেশের একজন ‘মহান’ ব্যক্তির ষড়যন্ত্র ছিল বলে দাবি করেন তিনি, তবে তার পরিচয় প্রকাশ করেননি।  

“পদ্মা সেতু নিয়েও একটা ষড়যন্ত্র চলেছিল। সরাসরি আমি জানতে পেরেছি, ষড়যন্ত্রটা কোথায়। এটি সম্পূর্ণ একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিল। খুব দুঃখ করে বলতে হয়, আমাদের এই দেশেরই একজন মহান ব্যক্তি এই ষড়যন্ত্রের পেছনে জড়িত ছিলেন।”

অনুষ্ঠানে প্রশ্ন করা হচ্ছে সজীব ওয়াজেদ জয়কে

প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন সজীব ওয়াজেদ জয়

সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই আয়োজিত প্রায় দুই ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ (এমডিজি), জাতিসংঘের নেওয়া নতুন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি পূরণের প্রস্তুতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি নিয়েও কথা বলেন জয়।

এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সময় শেষ হওয়ার পর গত সেপ্টেম্বরে আগামী ১৫ বছরের জন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) নির্ধারণ করেন রাষ্ট্রনেতারা।

বাংলাদেশ এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রশংসা অর্জন করলেও এসডিজি পূরণে কতটা প্রস্তুত- এ প্রশ্নের উত্তরে জয় বলেন, “আমাদের প্রস্তুতি প্রচণ্ড।

“বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যারা এমডিজির সবগুলো লক্ষ্যমাত্রা সময়মতো পূরণ করেছে।”

এমডিজি পূরণে এগিয়ে থাকায় এসডিজি লক্ষ্য অর্জনও সহজ  হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা।

“বাংলাদেশে খাদ্যের অভাব নেই। গত ছয় বছরে একটি মানুষও না খেয়ে মারা যায়নি।”

এসডিজিতে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতের শর্তের উল্লেখ থাকার কথা তুলে ধরে জয় বলেন, এসডিজির আগেই আওয়ামী লীগ সরকার মানসম্পন্ন শিক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। কারিকুলামে বিভিন্ন পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

“মুখস্থ পড়ার চেয়ে প্রবলেম-সলভ বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছি আমরা, যেটাকে বলা হয় ক্রিটিক্যাল লার্নিং। উন্নত বিশ্বে এ ধরনের কারিকুলাম প্রচলিত।”

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ঋণ সহায়তার কথা বলেন জয়; তুলে ধরেন কৃষি ভর্তুকির বিষয়টিও।

গবেষণার গুরুত্ব নিয়ে একজন প্রশ্ন করলে সজীব ওয়াজেদ বলেন, দেশে গবেষণা অভাব থাকলেও সরকার তা পূরণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বাল্যবিয়ে রোধ করা নিয়ে একজন তার মন্তব্য তুলে ধরলে জয় বাল্যবিয়ের জন্য অশিক্ষাকে দায়ী করেন। তা রোধে নারী শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সরকারি প্রণোদনা দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহকারীরা

কথা বলছেন সজীব ওয়াজেদ জয়

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশের কোনো ক্ষতি করবে কি না- একজন প্রশ্ন করলে জয় বলেন, সরকার সবদিক যাচাই-বাছাই করেই এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

“আমার বিশ্বাস, রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না।”

পরিবেশের সুরক্ষায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে জয় বলেন, বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যারা অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

“আমি একজন বিদেশির কাছে শুনেছি, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার পরিকল্পনা এবং জরুরি সাড়া (ইমার্জেন্সি রেসপন্স) বিশ্বের মধ্যে সেরা।”

শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর দাবির বিষয়ে একজন চাইতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীপুত্র বলেন, চাকরির বয়স-সীমাসহ সবদিক হিসেব করে ভারসাম্য (ব্যাল্যান্স) রক্ষা করেই বেতন কাঠামো করা হয়েছে।

অপরাধ দমনের বিষয়ে এক প্রশ্নে  তিনি বলেন, “১৬ কোটি মানুষের দেশে অপরাধ একেবারে দমন করা সম্ভব নয়। তবে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি উন্নত করার চেষ্টা করছে এবং তা হয়েছে।”

“ক্রাইম রেটে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সমান বা কম। এটা অনেকেই জানে না,” বলেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জয়।

তরুণদের দেশপ্রেম এবং উদ্যমী কার্যক্রমের উপর ভর করে আওয়ামী লীগ সরকার ভবিষ্যতের পথ দেখছে, বলেন জয়।

২০২১ সালে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নিত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের। তার ছয় বছর আগে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ।

“আমরা কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট নয়। আমরা আরও বেশি স্বপ্ন দেখি। আমরা ২০৪১ সালে একটি উন্নত দেশ হব,” বলেন তিনি।