রোববার মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে পরবর্তীতে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চসহ বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে সংগঠন দুটি।
৩০ নভেম্বর জলবায়ু সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে।
সিপিবি-বাসদের ১৩ থেকে ১৭ অক্টোবর ঢাকা থেকে বাগেরহাট পর্যন্ত ‘সুন্দরবন রক্ষা অভিযাত্রা’র বিষয় জানাতে ওই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, অভিযাত্রার ৫০০ কিলোমিটার পথে শত শত মানুষের অংশগ্রহণ যেমন ছিল তেমনি সরকার ও শাসকদলের সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতাও ছিল।
অভিযাত্রা চলাকালে বিভিন্ন স্থানে সমাবেশে করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সিপিবি-বাসদের অভিযাত্রায় বাধার দেওয়ার পাশাপাশি একই দাবিতে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার রোডমার্চে হামলারও নিন্দা জানান এই বাম নেতা।
“এতে সরকারের অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী মানসিকতারই বহিপ্রকাশ ঘটেছে। রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের ফলে যদি দেশের অর্থনৈতিক, প্রকৃতি ও পরিবেশগত লাভই হবে তাহলে এত রাখঢাক কেন? বিতর্ক ও আলোচনায় ভয় কেন?”
সংবাদ সম্মেলনে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “আমরা প্রামাণ্য দলিল হিসাবে উপস্থাপন করেছি, যদি সুন্দরবনের ওই এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়, তাহলে সুন্দরবনের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।
“এখন আমাদের ভেবে দেখতে হবে তথাকথিত উন্নয়নের নামে আমরা প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করে এবং সারাবিশ্বের ঐতিহ্য সুন্দরবন ধ্বংস করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করব, নাকি বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যান্য বিকল্প খুঁজে সেটা দিয়ে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাব।”
সুন্দরবন এলাকা পর্যবেক্ষণ না করেই বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী আন্দোলন চলছে- বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর এমন অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে সিপিবির সভাপতিমণ্ডলী সদস্য সাইফ উদ্দিন চৌধুরী চন্দন বলেন, “আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় বেশ কয়েকবার গিয়ে তথ্য অনুসন্ধান করেছি, তার ওপর ভিত্তি করেই আমাদের বক্তব্য। আর এখন তো প্রকল্প এলাকায় প্রবেশাধিকার একেবারেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”
এই প্রসঙ্গে সিপিবি সভাপতি সেলিম বলেন, “আপনারা তো সেখানেই সমাবেশই নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন, আর এখন বলছেন আমরা যাইনি। এটা কেন? সবকিছু ঠিকঠাক করেই, প্রকল্প এলাকা বন্ধ করে এখন প্রতিমন্ত্রী সাহেব সেখানে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করলে তারা বাধা দিয়েছেন।”
“ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞদের মতের ভিত্তিতে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে যদি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ করা হয়। তাহলে বাংলাদেশ অংশে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হবে কোন যুক্তিতে?” প্রশ্ন রাখেন তিনি।
বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, “চ্যাম্পিয়ন অব দি আর্থ পুরস্কার পেয়ে এখন যাতে প্রধানমন্ত্রী পাইওনিয়ার অব দি ডিসট্রাকশন না হন সেটা খেয়াল রাখার আহ্বান জানাই। এটা হলে সরকারের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।”
সংবাদ সম্মেলন থেকে সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে আগামী ২৬ নভেম্বর ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
একই সঙ্গে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আহুত আগামী ২৯ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ এবং ১৪ নভেম্বর সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কনভেনশনের প্রতি পূর্ণ সমর্থনের কথাও জানায় বাম সংগঠন দুটি।