মিরপুরে পরিবহন শ্রমিকদের অবরোধ, ভোগান্তি

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে মিরপুরে কয়েকটি বাসের চালককে জরিমানা ও সাজা দেওয়ার পর ওই রুটে চলাচলরত সব গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিকরা।  

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2015, 10:31 AM
Updated : 18 Oct 2015, 12:28 PM

রোববার বেলা ১১টার দিকে শুরু হওয়া এই অবরোধে ভোগান্তিতে পড়েছেন মিরপুর-আজিমপুর-গুলিস্তান-মতিঝিল, গাবতলী-উত্তরা-আজিমপুর, গাবতলী-গুলশান-বাড্ডা রুটসহ মিরপুর ১১ নম্বর হয়ে চলাচলরত বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা।

বিকেল ৪টার দিকেও এসব রুটের বাস চলাচল বন্ধ ছিল। তবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ‘যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে’।

বেলা আড়াইটার দিকে মিরপুর ১১ নম্বরে পূরবী সিনেমা হলের সামনে অবস্থান নেওয়া শতাধিক শ্রমিককে বিভিন্ন ধরনের স্লোগানও দিতে দেখা গেছে।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে তাদের কয়েকজন চালককে জরিমানা ও সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ট্রাফিক পুলিশ ‘নানা অজুহাতে’ নিয়মিতই তাদের হয়রানি করেন বলে অভিযোগ করেন আশফাকুল নামে এক শ্রমিক।

তিনি বলেন, “আমরা পেটের দায়ে কাজ করি। প্রতিদিনই নির্দিষ্ট হারে টাকা মালিকের হাতে দিতে হয়, দিতে না পারলে উল্টো আমাদের মজুরি কেটে রাখা হয়। এ অবস্থায় রাস্তায় গাড়ি নামালেই যদি জরিমানা গুণতে হয় তাহলে তো এই কাজ করে ভাত জোটানো সম্ভব না।”

এর আগে বেলা ২টার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা একটি বিআরটিসি বাসসহ কয়েকটি গণপরিবহনের কাচ ভেঙে দেয়।

পূরবী সিনেমা হলের সামনে গাড়ির জন্য অপেক্ষারত কয়েকজন যাত্রী জানান, উত্তরা থেকে এসে অনেকেই সেখানে আটকে গেছেন। শ্রমিকরা যাত্রীদের নামিয়ে বাস ঘুরিয়ে দিচ্ছে।

প্রায় একই ভাষ্য মিলল গাবতলী থেকে রবরব নামে একটি বাসে করে আসা যাত্রীদের কাছেও।

রাজিউন ইসলাম নামে একজন ব্যবসায়ী জানান, তিনি তার দোকানের মালপত্র নিয়ে গুলশান যাচ্ছিলেন। পূরবী আসার পর শ্রমিকরা তাদের জোর করে নামিয়ে দিয়েছে।

বাস বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়া অনেক যাত্রীকেই পায়ে হেঁটে যেতে দেখা গেছে।

বিকেল ৫টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব জানান, মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকায় স্বল্প পরিসরে দুয়েকটি বাস ও লেগুনা চলাচল করতে দেখা গেছে। বাসের অভাবে সেখানে ফুট ওভারব্রিজের উপর এবং আশেপাশে অন্তত কয়েক হাজার মানুষকে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।
 

অবরোধের কারণে স্টেডিয়াম ও এশিয়া সিনেমা হলের সামনে রাস্তার পাশে আলিফ পরিবহন, আকিক পরিবহন ও রবরব পরিবহনের শতাধিক বাস থামিয়ে রাখা হয়েছে।

একই চিত্র দেখা গেছে গুলিস্তান, শাহবাগ, বাংলামটর, ফার্মগেইট এলাকায়ও। বাসের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে অফিস শেষে বাড়ি ফেরার পথের যাত্রীদের।

গুলিস্তানে বাসের জন্য অপেক্ষারত নারায়ণগঞ্জের খলিকুর রহমান জানান, তিনি দুই ঘণ্টা ধরে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। তবে কোনো বাস না থাকায় কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

মুন্সিগঞ্জে যাওয়ার বাস না পেয়ে দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন সখিনা বেগম।

তিনি বলেন, “বেশ কয়েক ঘণ্টা বসে আছি, গাড়ি পাচ্ছি না। আদৌ পাব কীনা বুঝতে পারছি না।”

গুলিস্তানে বাস বন্ধ থাকার কারণ জানতে চাওয়া হলে সিটি বন্ধন পরিবহনের টিকেট বিক্রেতা হেমায়েতুল্লাহ বলেন, “মালিকের নির্দেশে বাস বন্ধ আছে। ছাড়তে না বলা পর্যন্ত বাস চলবে না।”

সকাল ১১টার পর থেকে গুলিস্তান থেকে ঢাকার ভেতরে এবং আশপাশের জেলাগুলোতে কোনো বাস চলেনি বলেও জানান তিনি।

গুলিস্তানে রাস্তার দুই পাশে কয়েক হাজার যাত্রীকে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক শহীদুল ইসলাম।

তবে এর আগে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষে যোগাযোগ করা হলে বেলা আড়াইটায় অপারেটর বজলুর রহমান বলেছিলেন, “মিরপুরে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ মোবাইল কোর্ট বসিয়েছিল। বিভিন্ন গাড়ির কাগজপত্র দেখতে গেলে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করে।”

বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ চলে যাওয়ার পর গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়ে গেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, সকাল সাড়ে ১০টায় তালতলার কাছে বিআরটিএ এর একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত এক গাড়ি চালককে এক মাসের সাজা দেন। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন রুটের চালকরা বাস ডিপোতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, “প্রতিবার বাস ভাড়া বাড়ানোর পর কিছুটা নিয়ম-অনিয়ম হয়। এবার বাস ভাড়া বৃদ্ধির পর থেকে ম্যাজিস্ট্রেট চলন্ত বাস থেকে চালক ও শ্রমিকদের নামিয়ে কারাদণ্ড দিয়ে দেন।

“শ্রমিকরা আগে থেকেই আন্দোলনের হুমকি দিয়ে আসছিল। আজও এরকম একটি ঘটনার পর চালক ও শ্রমিকরা বাস চালানো বন্ধ করে দেয়।”

শ্রমিকদের সঙ্গে বসে অবরোধ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হবে বলেও জানান তিনি।