যশোরের ঠেঙ্গামারী বিলে এসব মাছ ধরে নিজেদের দাহিদা মিটিয়ে বড় একটি অংশ বিক্রি করতে পারছে তারা। এতে ফসল হারানোর কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হচ্ছে তাদের।
শুক্রবার সরজমিনে ঘুরে ও সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা উজানের পানির ঢলে ঠেঙ্গামারী বিলসহ ওই এলাকার অন্তত পাঁচ হাজার বিঘা ফসলি জমি ডুবে রয়েছে। এসব জমির সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
জলাবদ্ধতার কারণে উপজেলার হাজার হাজার চাষি আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলেন। তাদের জন্য সাগরের মাছ আশীর্বাদ হয়ে এসেছে বলে তারা মনে করেন।
শার্শা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, সাগরের এসব মাছ ইছামতী নদী হয়ে দাঁদখালি খালের মাধ্যমে বর্ষার সময় বিলে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
“এসব জমির মালিকেরা চরম হতাশার মধ্যে ছিলেন। লোনাপানির মাছ এসেছে তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে।”
ঠেঙ্গামারী বিলে মাছ ধরতে আসা প্রান্তিক চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, “এলাকার সব ক্ষেত ডুবে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সরকারি কোনো সাহায্য নেই। ছেলেপিলে নিয়ে মরা ছাড়া কোনো রাস্তা ছেলো না। তবে দখিনের এই মাছ আমাগের ভাগ্য খুলে দেছে।”
রুদ্রপুর গ্রামের আজিজুল ইসলাম বলেন, “স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে এই বিলে এখন ফসলের আশা ছেড়ে দিয়েছে কৃষকেরা। তারা বিলের পানিতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
“বিল লোনাপানির মাছে ভরে গেছে। এখানকার পানি মিঠা। এই পানিতে আগে কখনও লোনাপানির মাছ দেখা যায়নি। এটা একরকম আল্লার দান।”
ওই গ্রামের কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেন, “বিলে আমরা প্রতিদিন মিঠাপানির মাছ রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, পাঙ্গাশ, তেলাপিয়ার পাশাপাশি লোনাপানির ভেটকি, বাগদা ও গলদা চিংড়ি পাচ্ছি প্রচুর পরিমাণে। লোনাপানির মাছের দামও অনেক বেশি।
“কারেন্ট জাল আর খ্যাপলা জাল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১৫ কেজি মাছ পাচ্ছি। কেউ কেউ এক মণও পাচ্ছে। মাছ বিক্রির টাকা দিয়ে ভালোই চলছে আমাদের সংসার।”
দাঁদখালি গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, “ভেটকি মাছ আমরা ২০০ টাকা কেজি দরে কিনে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বাইরের মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছি। চিংড়ি ৪০০ টাকায় কিনে বিক্রি করছি ৫০০ টাকায়।”
মাছ ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ বলেন, “গ্রামের সাধারণ মানুষও প্রচুর পরিমাণে লোনাপানির মাছ পাচ্ছে। এসব মাছ এলাকার চাহিদা পূরণের পর অন্তত ৭৫ শতাংশ বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে আমাদের ব্যবসাও ভালো হচ্ছে।”