জামিন নাকচ, এমপি লিটন কারাগারে

শিশু সৌরভকে গুলি ও ভাংচুরের দুই মামলায় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2015, 06:43 AM
Updated : 15 Oct 2015, 07:50 PM

গাইবান্ধার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মায়নুল হাসান ইউসুফ রোববার দুপুরে শুনানি করে এই আদেশ দেন।

লিটনের অন্যতম আইনজীবী ফারুক আহমেদ প্রিন্স শুনানি শেষে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা জামিন চেয়েছিলাম। আদালত তা নামঞ্জুর করেছে। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।”

বুধবার রাতে ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেপ্তারের পর লিটনকে ভোরের দিকে গাইবান্ধা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। এরপর বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তাকে অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।

এ সময় পুরো এলাকায় নেওয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা। জেলা প্রশাসক ও জেলা জজ আদালতে সাধারণ মানুষের প্রবেশও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

লিটন পৌঁছানোর আগে তার হাজারখানেক সমর্থক মিছিল নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। প্রায় ১৫ মিনিট ধাওয়া চলার পর পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

গত ২ অক্টোবর গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য লিটনের ছোড়া গুলিতে শাহাদাত হোসেন সৌরভ নামে নয় বছর বয়সী ওই শিশু আহত হয়। দুই পায়ে তিনটি গুলির ক্ষত নিয়ে সে এখন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তার বাবা সাজু মিয়া ঘটনার পরদিন সাংসদ লিটনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া গুলির ঘটনার পর সর্বানন্দ ইউনিয়নের উত্তর শাহাবাজ গ্রামে লিটনের লোকজনের হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন হাফিজার মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি।  এ মামলায় আসামি করা হয় দশজনকে।

ওই দুই মামলায় আগাম জামিন চেয়ে লিটন হাই কোর্টে আবেদন করলে সোমবার তা খারিজ হয়ে যায়। এরপর বুধবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ।

গাইবান্ধার আদালত পুলিশের পরিদর্শক এ কে এম এনামুল করিম জানান, সাংসদ লিটনের পক্ষে আদালতে দুটি মামলায় জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপক্ষ দুই আবেদনেরই বিরোধিতা করে।

“সাংসদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ডের কোনো আবেদন করেনি। তাই আদালত শুনানি শেষে জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।”

জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ শামছুল আলম হিরু ও গাইবান্ধা বারের সভাপতি ফারুক আহমেদ প্রিন্সসহ ৭৪ জন আইনজীবী লিটনের পক্ষে মামলা লড়তে আদালতে হাজির ছিলেন।

লিটনের অন্যতম আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, “ঘটনার দিন ওই এলাকায় এমপি লিটনের উপর জামায়াত-শিবির হামলা করেছিল। তিনি নিজের জীবন রক্ষার জন্য ফাঁকা গুলি করেছিলেন। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত তা শিশু সৌরভের পায়ে লাগে।”

মামলা দু’টির এজাহারেও ‘যথেষ্ট অসামঞ্জস্য’ রয়েছে বলে যুক্তি দেখান তিনি।

জামিন আবেদন নাকচ হলে এমপি লিটনের জন্য কারাগারে ‘ডিভিশনের’ আবেদন করা হলেও বিচারক সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেননি বলে জানান গাইবান্ধা বারের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল করিম লাচু।

অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, “এ দুই মামলায় সাংসদ লিটনের জামিন পাওয়া ন্যায়সঙ্গত ছিল। আদালত তার জামিন নাকচ করেছেন। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।”

সংঘর্ষে লিটনসমর্থকরা

সাংসদ লিটনকে আদালতে নিয়ে আসার খবর পেয়ে তার সমর্থকরা সকাল ১০টার দিকেই সুন্দরগঞ্জ উপজেলা থেকে গাইবান্ধা বাস টার্মিনালে এসে জড়ো হতে থাকে। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তারা আদালত প্রাঙ্গণে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়।

বাধা পেয়ে লিটনের অনুসারীরা আদালত, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কে মিছিল শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় তারা।

পরে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়ে এবং লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় বলে গাইবান্ধা সদর থানার ওসি একেএম মেহেদী হাসান জানান।  

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহমেদের দাবি, পুলিশের পিটুনিতে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।

সংঘর্ষের কারণে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কে কিছু সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।

মিষ্টি বিতরণ

আদালতে এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের জামিন নাকচ হওয়ার খবর সুন্দরগঞ্জে পৌঁছালে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে গত কয়েকদিন আন্দোলন চালিয়ে আসা মানুষের মধ্যে স্বস্তি নেমে আসে, বিতরণ করা হয় মিষ্টি।  

পৌর মেয়র ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম, উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি বীরেন সরকার মিন্টু, পৌর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাসুদ-উল-ইসলাম চঞ্চলসহ অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

লিটনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে তারও বিচার দাবি করেন তারা।