২১ অগাস্ট মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা পান্নার সাক্ষ্য

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার সময় উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতা ইসহাক আলী খান পান্না আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2015, 01:30 PM
Updated : 13 Oct 2015, 01:30 PM

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সহ-সম্পাদক পান্না ওই হামলায় আহত হয়েছিলেন। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে মঙ্গললবার সাক্ষ্য দেন পান্না।

তিনি বলেন, তার শরীরে সেদিন গ্রেনেডের অনেকগুলো স্প্লিন্টার বিঁধেছিল। মারাত্মক আহত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসার পর তিনি ভারতের কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

হামলায় আহত আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকে পড়ে থাকতে দেখার কথা সাক্ষ্যে জানান পান্না। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইভি রহমানকেও দেখেছিলেন তিনি।

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে পান্না ১৯৩ তম সাক্ষী বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ট্রাইবুনালে বিশেষ কৌঁসুলি আবু আবদুল্লাহ ভূইয়া। মামলায় সাক্ষীর সংখ্যা ৪৯২ জন।

পান্নার সাক্ষ্য নেওয়ার পর আগামী ১৯ ও ২০ অক্টোবর শুনানির পরবর্তী দিন রেখেছেন বিচারক।

মঙ্গলবার সাক্ষ্যগ্রহণের সময় সাবেক মন্ত্রী জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ কারাবন্দি আসামিদের আদালতে আনা হয়।

জামিনে থাকা আসামি খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলার সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন, মুন্সি আতিকুর রহমান, আব্দুর রশীদ ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আদালতে হাজির হন।

খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান, সাবেক বিএনপি সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ অন্য আসামিরা পলাতক। 

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভায় গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ ২৪ জনের মৃত্যু হয়। গ্রেনেডের  আঘাতে কয়েকশ নেতাকর্মী আহত হন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান ।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে এই হামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলে। জজ মিয়া নামে এক ভবঘুরেকে আসামি সাজিয়ে নানা কথা বলানো হয়, যা পরবর্তীকালে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়।

বিএনপি-জামায়াত আমলের তদন্ত কর্মকর্তাদের চোখে মামলার আসামি জজ মিয়া এখন এই মামলার সাক্ষী। তিনি সাক্ষ্যও দিয়ে গেছেন আদালতে।

জরুরি অবস্থা জারির পর ক্ষমতা নেওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার নতুন করে গ্রেনেড হামলার ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দিলে

২০০৮ সালের ৯ জুন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির।

ওই বছরই মামলা দুটি বিচারের জন্য দ্রুত বিচার আদালতে পাঠানো হয়।

এরই মধ্যে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর ২৫ জুন অধিকতর তদন্তের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন জানালে ৩ আগস্ট আদালত তা মঞ্জুর করে। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডির বিশেষ সুপার আব্দুল কাহ্হার আকন্দকে।

এই কর্মকর্তা বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারপারসন তারেক রহমান, খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ আরও ৩০ জনকে আসামির তালিকায় যোগ করে ২০১১ সালের ২ জুলাই আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন।

অধিকতর তদন্তে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবনের সংশ্লিষ্টতাও খুঁজে পান কাহ্হার আকন্দ।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, হাওয়া ভবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীরা হুজিকে ব্যবহার করে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওই হামলা চালিয়েছিল এবং তাতে রাষ্ট্রীয় কয়েকটি সংস্থার কর্তাব্যক্তিদেরও যুক্ত করা হয়েছিল।