স্থানীয় নির্বাচনে মারামারি এবার হবেই না: মন্ত্রী

দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন সংঘাত-সহিংসতার পথ বন্ধ করবে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2015, 11:17 AM
Updated : 13 Oct 2015, 07:38 PM

স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর এর বিরোধিতার প্রতিক্রিয়া সাংবাদিকরা জানতে চাইলে সরকারের সিদ্ধান্তের পক্ষে এই যুক্তি তুলে ধরেন তিনি।

স্থানীয় সরকারের নির্বাচন এতদিন ধরে নির্দলীয়ভাবে হলেও আইন সংশোধনের পর এটাও সংসদ নির্বাচনের মতো দলীয়ভাবে হবে। 

বিভিন্ন সংগঠন এর বিরোধিতা করে বলছে, এতে নির্দলীয় যোগ্য ব্যক্তিরা সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ কিংবা ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত হবে।

পাশাপাশি রাজনৈতিক বিরোধের কারণে স্থানীয় নির্বাচনেও মারামারি-কাটাকাটি বাড়বে বলে কারও কারও আশঙ্কা।

এই আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হলে খন্দকার মোমাররফ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “…ধরেই নিলেন যে মারামারি কাটাকাটি হবে, এতটা এক্সটিমে যাবেন কেন? মারামারি-কাটাকাটি হবেই না।

“জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে দুই এমপি কোথায় মারামারি করেছে, তা আমার জানা নেই। মারামারি হলে ওই গ্রামেই হয়, এক দলের লোক মিটিং করে গেলে একটা আজেবাজে কথা বলে বসে হয়ত আরেক দলের লোক, তা নিয়ে…।

দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে তৃণমূল পর্যায়ে ভোটের উৎসব হবে বলেও মনে করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।

“মারামারি-কাটাকাটি শেষ হয়ে যাবে। মারামারির তো কোনো স্কোপই নাই, বরং গাছে একটা ফুলও থাকবে না, সব ফুলের মালা মানুষে দেবে।”

এতদিন আইনগতভাবে নির্দলীয় হলেও স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় আবহের মধ্যেই হত, সে কথা তুলে ধরেন সংসদ সদস্য খন্দকার মোশারফও।

“আমরা এখন এটারে ওপেন করে দিলাম। দলীয় পর্যায়ে নির্বাচন করুক, গণতন্ত্রকে একেবারে তৃণমূলে প্র্যাকটিসে নিয়ে গেছি।”

নির্দলীয় প্রার্থীদের ভোটে আসতে নিরুৎসাহিত করা হল কি না- এ প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “নির্দলীয়দের ইনকারেজ করছি। তারা নির্বাচন করতে চাইলে কোথাও কোনো বাধা নেই।

“আমার ব্যক্তিগত ধারণা, দলীয় পরিচয়ে নির্বাচনের কথা বললেও দেখবেন গ্রাসরুট লেভেলে নিরপেক্ষ প্রার্থীর সংখ্যাই বেশি হবে।”

বিএনপি এই আইন সংশোধনের বিরোধিতা করে বলেছে, জাতীয় নির্বাচনের মতো তাদের স্থানীয় নির্বাচন থেকেও দূরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।   

খন্দকার মোশাররফ হোসেন (ফাইল ছবি)

সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপিকে কৌশলে স্থানীয় নির্বাচনে আনা হচ্ছে কি না- এক সাংবাদিকের এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে যান খন্দকার মোশাররফ।

“আমরা কোনো শীষকে নির্বাচনে আনছি না, দল নির্বাচন করবে,” বলেন তিনি।

বিএনপির বিরোধিতার প্রতিক্রিয়ায় মন্ত্রী বলেন, “কেউ যদি ভালো কাজে অসৎ উদ্দেশ্য দেখে তবে তা তার দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। এটা তো আমরা কিছু করতে পারব না।

“উনারা (বিএনপি) যদি শুধু খারাপ জিনিসই দেখেন, উনাদের চোখের অপারেশন আমরা কেমনে করাব? আপনারা (সাংবাদিক) (বিএনপি নেতাদের) মন এবং চোখ পরিষ্কার করাই দেন।”

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত ২৮টি প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষরের পর স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মন্ত্রী।

কাজকে সুনির্দিষ্ট ছকে আনতে ‘পারফরমেন্স বন্ড’ করা হল জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন প্রত্যেকটা স্টেপই সুনির্দিষ্টভাবে মনিটর করা হবে।

“আমরা যদি যার যার দায়িত্ব সুনির্দিষ্টভাবে পালন করি তাহলে এই বন্ড সই করার ফলে নয় মাস বসে থেকে প্রজেক্ট অ্যাপ্রুভালের সুযোগ আর থাকবে না। সচিবদেরও প্রধানমন্ত্রীর সামনে মূল্যায়ন হবে। পরিপূর্ণ জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার মধ্যে আমরা আসছি।”

চুক্তি স্বাক্ষরের সময় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব এম এ কাদের সরকার ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।