ডা. মুশতাককে ওএসডির আদেশ বাতিল

মেডিকেল ভর্তিচ্ছুদের আন্দোলনে সংহতি জানানো চিকিৎসক-গবেষক মুহাম্মদ মুশতাক হোসেনকে ওএসডি করার পরদিনই সরকার ওই আদেশ বাতিল করেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2015, 11:13 AM
Updated : 13 Oct 2015, 03:47 PM

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার ডা. মুশতাকের ওএসডির আদেশ বাতিল করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

এরশাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মুশতাক রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) মেডিকেল সোসিওলজি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন।

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ তুলে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন চলছে, গত শুক্রবার তাতে সংহতি জানিয়েছিলেন দেশে চিকিৎসকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির এই সদস্য।

এর তিন দিনের মাথায় সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক আদেশে ডা. মুশতাককে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠায়।

ওই আদেশে বলা হয়, “জনস্বার্থে এই আদেশ জারি করা হল এবং অবিলম্বে কার্যকর হবে।”

মেডিকেলে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলে আসছেন, আন্দোলনকারীরা সরকারকে বেদায়দায় ফেলতে চাইছে।

কিন্তু দেশে চিকিৎসা গবেষণায় ডা. মুশতাকের ভূমিকা সম্পর্কে যারা জানেন, তাদের অনেকেই সরকারের সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মুকুল নামের একজন মন্তব্যে লেখেন, ‘অ-স্বাস্থ্যকর মন্ত্রণালয়ের এই ন্যক্কারজনক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাই।”

ফেইসবুকেও অনেকেই ডা. মুশতাকের প্রতি সমর্থন জানান এবং তাকে ওএসডি করার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। 

কামাল হোসেন নামের একজন ফেইসবুকে লিখেছেন, “মেধাশূন্য করার যে প্রক্রিয়া চলছে তাতে জাতি হতাশ, শুধু আশাবাদী হলেন আমাদের প্যারাসিটামল মন্ত্রী!”

এরপর মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রজ্ঞাপন আসে, যাতে ওএসডি করার সেই আদেশ বাতিলের কথা জানানো হয়।

১৯৮১ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর মুশতাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন।

১৯৮৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ থেকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তখনকার জাসদ ছাত্রলীগের এই নেতা। ওই ডাকসুতে ভিপি ছিলেন ছাত্রলীগের সুলতান মো. মনসুর আহমেদ, এজিএস ছিলেন ছাত্র ইউনিয়েনের নাসিরউদ্দোজা।

ডা. মুশতাক পরে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার জন্য চাকরির আবেদন করেও দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তিনি বার বার প্রত্যাখ্যাত হন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সেই মুশতাকই জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ও রোগের প্রাদুর্ভাব পর্যবেক্ষণে গঠিত জাতীয় ‘র‌্যাপিড রেসপন্স টিম’ এর ‘কোর গ্রুপ’ এর একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে কাজ করে আসছেন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি কাজ করছেন দেশের পোলিও পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গঠিত জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য হিসেবে।

পোলিও ছাড়াও বাংলাদেশে নিপা, যক্ষ্মা, হেপাটাইটিস ই, ব্রঙ্কিওলাইটিস ও ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব এবং রক্তশূন্যতা, শিশুদের অপুষ্টি এবং মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা নিয়ে তার কয়েক ডজন নিবন্ধ ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন জার্নালে। দেশের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন জরিপেও ডা. মুশতাক নেতৃত্ব দিয়েছেন।  

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল ইনফেকশন প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল নেটওয়ার্কের (জিআইপিসিএন) এই সদস্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ন্যাশনাল পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউটেরও (আইএএনপিএইচআই) একজন ফেলো। কেমব্রিজ ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির এই সাবেক সদস্য সরকারের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির পাশাপাশি অধ্যাপনাও করেছেন।