রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের আধিপত্যে দুঃখ রাষ্ট্রপতির

তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে এখন রাষ্ট্রের শীর্ষ পদে আসীন মো. আবদুল হামিদ রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের আধিপত্যের অবসান প্রত্যাশা করেছেন।

সাজিদুল হক অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2015, 02:31 PM
Updated : 12 Oct 2015, 02:31 PM

“দুঃখের বিষয়, আজকে রাজনীতি চলে গেছে ব্যবসায়ীদের পকেটে। এটি হচ্ছে আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে বড় কলঙ্কজনক অধ্যায়। এর হাত থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে।” 

নিজের এলাকা কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে সোমবার নিজের নামে একটি সেতু উদ্বোধনের পর এক নাগরিক সমাবেশে একথা বলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব ক্রমাগতভাবে বেড়ে ৫৭ শতাংশে দাঁড়ানোর তথ্যটি কয়েক বছর আগে টিআইবির এক গবেষণায় উঠে আসে।

প্রথম সংসদে এই হার ছিল ১৭ দশমিক ৫ ভাগ। আইনজীবী আবদুল হামিদ ওই সংসদে ছিলেন। ওই সংসদে আইনজীবীদের শতকরা হার বেশি থাকলেও তা কমে নবম সংসদে ১৪ শতাংশে পৌঁছায়।

স্বাধীনতার পর অংশ নেওয়া প্রতিটি সংসদে কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম থেকে প্রতিনিধিত্বকারী আবদুল হামিদ স্পিকারের দায়িত্ব সামলে বঙ্গভবনের বাসিন্দা হয়েছেন। 

সততার সঙ্গে জনকল্যাণে রাজনীতিকদের কাজ করার উপর জোর দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, যদি করা হয় তাহলে সারা বাংলাদেশ আরও বেশি এগিয়ে যাবে।

“সততা ছাড়া একজন রাজনীতিবিদ কোনোদিনই সে যা করতে চায়, তার বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। টাকা পয়সার মালিক যদি কেউ হইতে চায়, আরও অনেক রাস্তা আছে। রাজনীতির পথ বেছে না নেওয়াই উত্তম।”

এই হাওর এলাকা থেকে নিজের উঠে আসার ইতিহাস তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, “বার বার এই এলাকা থেকে নির্বাচন করেছি,এমপি হয়েছি। সততার সঙ্গে রাজনীতি করেছি। যার জন্য সরকারি দল বলেন আর  বিরোধী দল বলেন, কেউ আমার বিরুদ্ধে বড় কথা বলতে পারে না। কারণ আমি অসৎ লোক না।

“এলাকার উন্নতি করতে গেলে কেউ যদি নিজের পকেটে ঢুকাতে চায়, এমপি হয়ে যদি গম চাল খাইতে চায়, টাকা মারতে চায়। বিভিন্ন বরাদ্দ থেকে নিজেরা খাইতে চায় তাহলে এলাকার উন্নতি হবে না। ”

 

রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব আবদুল হামিদ নেওয়ার পর এখন তার ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক নৌকা প্রতীক নিয়ে এই আসন থেকে  সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। 

আবদুল হামিদ বলেন,“আমার ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক,সে যদি সততার সঙ্গে, ঈমানের সঙ্গে কাজ করে। নিজের আখের গোছানোর চেষ্টা না করে, তাহলে আপনাদের সহযোগিতা সমর্থন পাইতে পারে। না হলে আমিও তাকে সাপোর্ট করব না।”

অষ্টগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই নাগরিক সমাবেশে আবদুল হামিদ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এলাকার উন্নয়নে কাজ করারও আহ্বান জানান।

‘অবরোধ ডিঙিয়ে বাইরে যাওয়া কষ্টকর’

রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর সাধারণত লিখিত বক্তব্য দিলেও নাগরিক সমাবেশে প্রায় এক ঘণ্টা সামনে কোনো কাগজ ছাড়াই বক্তৃতা করেন আবদুল হামিদ।

শৈশব-কৈশোরে হাওর এলাকায় নিজের বেড়ে ওঠা নিয়েও স্মৃতিচারণ করেন তিনি। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর সাধারণ মানুষের সঙ্গে আগের মতো মিশতে না পারার ব্যথাও ফুটে ওঠে তার কথায়।

“আপনাদের বেড়া দিয়ে আটকাইয়া রাখছে।  আর আমারে বন্দি কইরা রাখছে। কাছে ঘেঁষবার কোনো জো নাই।রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে যখন আসতাম এ ধরনের সভা হলে বাঁশের বেড়া ছিল না।  বাঁশের বেড়া দেওয়ার অর্থই আপনারা যাতে কাছে আসতে না পারেন। আমিতো মোটামুটি বন্দি। আমার তো আপনাদের কাছে যাওয়ার সুযোগ নাই।”

“আগে যেভাবে আসতাম সেভাবে আসার সৌভাগ্য হয়ে ওঠে না, সম্ভব না। দেশে কেন, বিদেশেও যদি যাই আমার এসএসএফ এর ভাইরা আছেন, পিজিআর আছেন, বঙ্গভবনের ঊর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা আছেন। তারা সবসময় আমাকে ঘেরাওয়ের মধ্যে রাখেন। তাদের অবরোধ ডিঙিয়ে বাইরে যাওয়া কষ্টকর।” 

সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকার উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপও উঠে আসে আবদুল হামিদের বক্তব্যে।

তিনি আরও বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কিশোরগঞ্জে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রস্তাব আমি দিয়েছি। তিনি একমত হয়েছেন। আশা করি, আগামী বছরই এর কাজ শুরু হবে।”

অষ্টগ্রাম নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ফজলুল হক হায়দারী বাচ্চুর সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন, অষ্টগ্রামের উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম জেমসও বক্তব্য রাখেন।

এর আগে রাষ্ট্রপতি ‘রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সেতু’ উদ্বোধন করেন। পরে তিনি সেতুর বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। রাষ্ট্রপতি ‘ইজিবাইকে’ চড়ে বিভিন্ন স্থানে যান। 

৪১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৩৪১ মিটার এই সেতুটির মাধ্যমে অষ্টগ্রাম সদর, পূর্ব অষ্টগ্রাম, দেওঘর ও কাস্তল ইউনিয়নের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হল।

দুপুরে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে অষ্টগ্রামে পৌঁছান রাষ্ট্রপতি। একদিন থেকে ঢাকা ফিরবেন তিনি।